মাহবুবুল ইসলাম : যেসব মাদ্রাসার শিক্ষকরা ছাত্রদের এত বেশি মারধর করেন, তাদেরও যুক্তি আছে। তাদের কথায়, না পিটাইলে নাকি মানুষ হয় না! অবশ্যই শাসন করা দরকার। তাই বলে এতটা! ঠিক আছে, একজন মাদ্রাসার ছাত্র যখন ভালো আলেম ও ভালো মানুষ হয়, তখন তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত নবীর সুন্নত থাকে। আচরণ থাকে সুন্দর। (অবশ্য হেলিকপ্টার হজুরের মতো ওরে বাটপারও হয়, যারা অন্যের বউ বিয়া কইরালায়!) তাকে হয়তো অনেক মারধরের মধ্য দিয়ে বড় হতে হয়েছে। কিন্তু তাই বলে, একটা শিশুকে বেধড়ক মারধর করা নবীর কোন হাদিসে আছে? আমি তো জানি নবী শিশুদের খুব বেশি আদর করতেন।
মাদ্রাসায় ছাত্ররা বলৎকার হয়। সব মাদ্রাসার ছাত্ররা হয় না। আবার হয় না একথা অস্বিকার করার কোনো কারণ নেই! মাদ্রাসায় ভর্তি হলে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন হয়। তাই বলে শারীরিক চাহিদাশক্তি তো নিস্তেজ যায় না! যেসব শিক্ষক ছোট ছোট ছাত্রদের বলৎকার করেন, তারা হাতের কাছে রমণী পেলে কী করতেন তার প্রমাণ হচ্ছে- তার মতোনই কোনো না কোনো পরিমল নামের শিক্ষক মাদ্রসায় না পড়ে স্কুলে শিক্ষকতা করেছে। তাদের চরিত্র এক। শুধু প্রতিষ্ঠান ভিন্ন। ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা আর আদর্শবান হওয়া এক জিনিস নয়! অনাবাসিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছোট ছোট বাচ্চারা ক্লাস শেষে ঘরে ফেরে। কিন্তু আবাসিকে সারা বছর থাকতে হয়। পারিবারিক শিক্ষাটা তাই প্রতিষ্ঠান থেকেই নিতে হয়। এজন্য ব্যর্থ হলে তার সম্পূর্ণ দায় মাদ্রাসার শিক্ষকের ওপরেই বর্তায়!
রাষ্ট্র হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রতিটি উপাদানের অভিভাবক। একটি দেশে সকল মাদ্রাসা হোক কিংবা স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি যেটাই হোক, সবার অভিভাবক হলো রাষ্ট্র। যেসব শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কিংবা যেসব শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় পড়ে, তাদের বড় একটি অংশ রাষ্ট্র থেকে নিজেদের আলাদা কিছু ভাবে! নিজের মধ্যে ভিন্ন কিছু আবিষ্কার করেন। নামিদামি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাজ ও রাষ্ট্রের চাইতে নিজেদের বেশি অগ্রসর ভাবার কারণে সামষ্টিক বিশৃঙ্খলতায় লিপ্ত হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশৃঙ্খল হয় না তেমন না, তবে সামষ্টিক নয়! তেমনই অতিরিক্ত সুফি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মনে করে, রাষ্ট্র বুঝি তাদের ছেড়ে জাহান্নামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে! তারা মনে করে দুচালা টিনের চালের নিচে তারা আলাদা রাষ্ট্র! এজন্য এমন অদ্ভুত সব কর্মকাণ্ড রচিত করে। নিজেদের রাষ্ট্রে তারা তাদের মতো করে সঠিক।
একটি রাষ্ট্রের যেমন নীতি নৈতিকতা থাকবে। তেমনই রাষ্ট্রে যেসব প্রতিষ্ঠান নৈতিকতা শিক্ষা দেয়, তাদেরও রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য থাকবে। দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হোক মাদ্রাসা কিংবা স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি। প্রত্যেকের জন্য নিজস্ব আলাদা কারিকুলাম থকবে ঠিকই। তবে সেটা নির্ধারণ করে দেবে রাষ্ট্র। এই তদারকিটা খুবই দরকার। বাংলাদেশের সংবিধান, কার জন্য কোথায় কী অধিকার ও বিভিন্ন ধারা নিয়ে মাদ্রাসা তো দূরে থাক প্রাইভেট বড় বড় কয়টা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরাও ওয়াকিফহাল তা সন্দেহ! হোক মাদ্রাসা কিংবা প্রাইভেট যেকোনো প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই রাষ্ট্রীয় তদারকি জরুরি। তবে সেটি রাজনীতির উর্ধ্বে থেকে শুধুই শিক্ষর স্বার্থে।
লেখক : সাংবাদিক, ভোরের কাগজ