ডা. ফাতিমা খান :
আমার বড় ছেলে জাওয়াদের এ মাসে পনের বছর পূর্ণ হবে, সাথে আমার মাতৃত্বের বয়সও একই কোঠায় গিয়ে দাঁড়াবে।
দুবছর হতে চলল ছেলেদেরকে একটু সময় দিতে পারছি, অধুনা শুদ্ধ ভাষায় যাকে বলে "কোয়ালিটি টাইম"। বড় ছেলেকে সবচেয়ে বেশি সময় ও সংগ দেওয়ার চেষ্টা করি। পৃথিবীর চোখে নিতান্ত ঠান্ডা, চুপচাপ আমার ছেলেটা আসলে প্রচুর মজা করে গল্প করতে পারে, দার্শনিকদের মত জ্ঞান দিতে পারে৷ ইদানিং আমাকে পাশে দাঁড় করিয়ে নিজের উচ্চতা মাপে, আর কতটুকু বড় হলে কত ইঞ্চি লম্বা হলে বুড়ো বয়সে আমাকে কোলে উঠাতে পারবে এসব নিয়েও গবেষণা করে। যদিও ছোট ভাইকে জ্বালায় অনেক বেশি, সারাদিন দুজনের ঠুকোঠুকি লেগেই থাকে।
আমার জীবনে যে ক্ষুদ্র সফলতাটুকু আছে, তার জন্য মা বাবার পর ছোট্ট জাওয়াদই সবেচেয়ে বেশি স্যক্রিফাইস করেছে, ছাড় দিয়েছে তার প্রাপ্য আদর, সময়, যত্ন সব কিছুতে। কম্প্রোমাইজ করেছে আমার অপারগতার সাথে। দেশে থাকাকালীন ওর জীবনের প্রথম তিনটি বছর খুব কঠিন ছিল। আমি একজন নিরুপায় মা হিসেবে শুধু আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারিনি।
ছেলেটা দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেল। ইদানীং সে আমাকে বিভিন্ন উপদেশ বাণী দেয়। তার সবচেয়ে বেশী বাণী প্রসূত হত যখন আমরা পার্কে হাটতে যেতাম, তখন সে সবচেয়ে রিল্যাক্স মুডে থাকত । আমি ওর অজান্তে কিছু কিছু কথা ডায়েরিতে লিখে রেখে ছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল ওর মনকে বুঝতে পারা, অনুভূতি গুলো অনুধাবন করা।
আমার পনের বছরের জাওয়াদের বাংলা+ইংরেজি মেলানো বাণীগুলোর কয়েকটি বাংলায় গুছিয়ে শেয়ার করলাম।
নিজের চেষ্টায় সাফল্য অর্জন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আনন্দ, হোক তা অতি ক্ষুদ্র। এ অর্জনের প্রতি মানুষ সবচেয়ে বেশি যত্নবান হয়।
একজন মানুষের অনুপস্থিতি যদি তার পরিজনদের ব্যথিত না করে তবে তার চলে যাওয়ার পর এক পৃথিবী মানুষ কাঁদলেও তিনি একজন অসফল মানুষ।
বিশ্বাস ও মানবিকতা ধার্মিকতার প্রথম শর্ত। অভ্যাস আর ধার্মিকতা এক নয়।
পড়া ও জ্ঞানার্জন সম্পূর্ণ ভিন্ন, যেমন- চোখের ব্যায়াম ও আত্নার ব্যায়াম কি কখনো এক হতে পারে?
একজন নকল দরবেশ হওয়ার চাইতে আমি একজন "আসল" মানুষ হওয়া পছন্দ করি, যার কাছে একটা কাঠবিড়ালিও নিরাপদ থাকবে।
শাস্তি ঘোষণার পূর্বে সংশ্লিষ্ট ঘটনা থেকে পাওয়া শিক্ষা/উপদেশ ঘোষণা করা উচিত যেন শাস্তির নিঠুরতা দেখার আগে এর শিক্ষাটা জানতে পারি৷ এমনও হতে পারে আসামী নিজেও জানত না তার ভুলটা শুদ্ধির একটা উপায় ছিল বা কাজটা এভাবে না করে উত্তম উপায়ে করা যেত।
সব অপরাধ যদি ক্ষমার্হ হয়, তবে দুনিয়াতে আদালত আর বিচারক এর কি কাজ?
জীবনের লক্ষ্য শুধু বেঁচে থাকা নয় বরং এমন কিছু সৃষ্টি করে যাওয়া যা আজীবন বেঁচে থাকবে। ( এর জন্য নাকি বড় বড় ডিগ্রি আবশ্যক না)
খারাপ মানুষদের থেকেও জীবনে অনেক কিছু শেখার আছে, ওদের আচরণ গুলোই শিখিয়ে দেয় ভাল মানুষ হওয়া আসলে কত সহজ ছিল।
যে আপনজন সে কখনো আপনার জীবনকে দূর্বিসহ করে দিবে না- এবার বেরিয়ে পড়েন, পুরো পৃথিবী থেকে আপনজন দের বেছে নিন।
নিজের দায়িত্বের সীমারেখা জেনে রাখা জরুরি। আত্নসমালোচনায় সুবিধা হয়।
দূর্বল আত্নবিশ্বাসের মানুষগুলো আজীবন অন্যকে দোষ দেয়।
অধিকার আদায় করে নেওয়া একটি বিরল যোগ্যতা, দূর্ভাগ্যবশত সভ্য-সৌম্য মানুষগুলো বরাবরই এ ব্যাপারে অযোগ্য হয়।
কপট মানুষগুলো সমাজে বেশি সমাদৃত হয়, তবে যতক্ষণ না তার মুখোশ উন্মোচিত হয়।
সময় জার্নাল/ইএইচ