ডা. রাসেল চৌধুরী :
হঠাৎ করে এই প্রজ্ঞাপন দেখে আমার মনে হলো, দেশে কি করোনা যুদ্ধটা সবার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে বুক চিতিয়ে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা করছেন, নাকি রাস্তায় গাড়ি নিয়ে টহল দেয়া কয়েক হাজার সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য ও তাঁদের পরিবারবর্গ করছেন?
অথচ এই সশস্রবাহিনীর সদস্য ও পরিবারের সদস্যদের করোনা চিকিৎসার জন্য আছে দেশের সবচেয়ে সেরা সুবিধার শতভাগ বিনামূল্যের মিলিটারি হাসপাতালগুলো।
একজন সরকারি চিকিৎসকও এদেশে শতভাগ বিনামূল্যে চিকিৎসা এই ভূখন্ডে কখোনো পায়নি অথচ আর্মির একজন সৈন্যও যুগ যুগ ধরে এই সুবিধা পাচ্ছে। শুধু দেশেই না, সিএমএইচ থেকে অফিশিয়ালি বিদেশের হাসপাতালে রেফার করা হলে বিদেশেও একই সুবিধা পান তাঁরা।
তারপরও তাঁদের পরিবার করোনা ভ্যাক্সিন পাবার বেলায় সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাবেন? আবার তাঁদের পরিবারের বড় অংশ থাকেন দেশের সবচেয়ে সুরক্ষিত সুসজ্জিত সেনানিবাসগুলোতে।
যে হাসপাতালগুলো থেকে সশস্র বাহিনীর পরিবারের সদস্যরা ভ্যাক্সিন পাবে সেসব হাসপাতালের বয়োজ্যেষ্ঠ চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা ঝুঁকিতে থাকা সন্তানরা একই ক্রাইটেরিয়ায় টিকা পাবে না, ভাইবোন পাবে না, একই ঘরে থাকা পরিবারের সদস্যরা পাবে না? নিজ পরিবারের সদস্যদের অরক্ষিত রেখে তাঁরা করোনা মোকাবেলায় সাহস যদি দেখানো বন্ধ করে দেন, তবে কি খুব অন্যায় হবে?
ইনফ্যাক্ট কয়েকটা গাড়ি নিয়ে সারা দেশে টহল দেয়া আর্মির চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে দেশের পুলিশবাহিনীর সদস্যরা। অথচ তাঁদের পরিবারের জন্যও ভ্যাক্সিন অগ্রাধিকার নেই, আছে রাস্তায় না থাকা নৌবাহিনী আর বিমানবাহিনীর সদস্যদের??
আর এই প্রজ্ঞাপন জারির আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরাও একবার ভাবলেন না, কাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা তাঁরা? অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী বাদ দেন, সারা দেশের ১ লাখ চিকিৎসকের পরিবারের বড়জোর ১৮-২৫ বছর বয়সী ৫ লাখ সদস্য আছেন। সশস্রবাহীনীর ৮ লাখ এরকম সদস্যের বিপরীতে আমাদের ৫ লাখ অনেক বেশি লাগছে? আচ্ছা বাদ দেন, শুধু সরকারি চিকিৎসক হিসাব করলেও পরিবারের ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী সদস্যসংখ্যাটা ১ লাখও হবে না? এটাও বেশি লাগছে?
আর অনলাইন অফলাইনের হম্বিতম্বি করা হাগার হাগার (জ্বি হাজার হাজার নয়) চিকিৎসক সংগঠনের নেতাদের কি এই প্রজ্ঞাপন দেখে একটুও লজ্জা লাগছে না? তের হাত মাটির তলে ঢুকে যেতে ইচ্ছা করছে না?
বিঃদ্রঃ সশস্ত্র বাহিনীর ১৮ বছর বয়সোর্ধ্ব সন্তানরা এই টিকা পান তাতে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু কেনো চিকিৎসকের সন্তান বা পুলিশের সন্তান সেটা পাবেন না, কেনো সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা এদেশের বস্তিবাসী পাবে না, কেনো করোনায় সবচেয়ে ক্ষতির শিকার পরিবহন কর্মী বা বিপনি-বিতানের কর্মীদের সন্তানরা পাবেন না, সেটা একজন নগণ্য স্বাস্থ্যকর্মী আমাকে যুক্তি দিয়ে বোঝান।