রাগিব হাসান :
জীবনে শেষ বলে কি কিছু আছে? আপনার পিঠ আজ দেয়ালে গেছে ঠেকে, তার মানে কি আগামীকালেও সেটা হবে?
চীনের সেই গণিতের ছাত্রটির জীবন সরলরেখায় চলেনি।
চীনের ভয়াবহ সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পাল্লায় পড়ে তার কৈশোর আর তারুণ্যের শুরুটা কেটেছিলো পড়াশোনার বাইরে।
অনেক পরে পড়াশোনায় ফেরত এসে মেধাবী ছাত্রটি প্রথমে আন্ডারগ্রাজুয়েট ডিগ্রি পেলেন গণিতে, অনেক আশা নিয়ে পড়তে গেলেন আমেরিকায়।
৯১ সালে আমেরিকার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলার একটা -- পার্ডু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে পিএইচডি ডিগ্রিও পেলেন।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর পরের কাহিনিটা হয় অনেক কিছু পাবার, বড় চাকুরি গাড়ি বাড়ির। কিন্তু এই ছাত্রটির জীবনে তা হয়নি, দুর্ভাগ্য ছাড়েনি তার পিছু।
গণিত অন্তপ্রাণ এই দুর্ভাগা ছাত্রটি কিছুতেই চাকুরি খুঁজে পাননি। এক পর্যায়ে লাজ লজ্জ্বার মাথা খেয়ে তিনি নামলেন খাবার পৌছে দেয়ার কাছে, চীনা রেস্টুরেন্টের ডেলিভারি ম্যান হিসাবে কাজ করলেন অল্প বেতনে।
তার পরে সাবওয়ে ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টের একেবারে নিম্নবেতনের চাকুরিও করতে হলো, যেটা একজন ডক্টরেট ডিগ্রিধারীর জন্য অভাবনীয়।
কিন্তু কী করবে, দুর্ভাগ্য তো তাঁর পিছু ছাড়ে না।
অনেক কষ্টে ৪৪ বছর বয়সে ১৯৯৯ সালে এক অখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের লেকচারার পদে চাকুরি পেলেন। নাহ, অধ্যাপক হিসাবে না, তাকে নেয়া হলো আরেকটি নিচের পদে, আর সেখানেই প্রমোশন ছাড়া ১৪টি বছর কাটিয়ে দিলেন এই গণিতজ্ঞ।
২০০১ সালের পর ১২ বছর ধরে কোনো গবেষণাপত্রও প্রকাশ করতে পারলেন না।
তার পর?
এলো ২০১৩ সাল। বয়স তখন তার ৫৮।
একাকী নিভৃতে কাজ করা এই গণিতজ্ঞ হঠাৎ করে গণিতের দুনিয়াকে অবাক করে দিলেন একটি গবেষণা পত্র লিখে।
কয়েকশ বছর ধরে মৌলিক সংখ্যার একটা সমস্যা - টুইন প্রাইম কনজেকচার -- কেউ সমাধান করতে পারেননি, এই নিভৃতচারী গণিতজ্ঞ একটা পেপার লিখে সেই সমস্যার সমাধানের একটা বিশাল ধাপ এগিয়ে গেলেন।
খুব দ্রুত সেই পেপারটা বিজ্ঞ গণিতজ্ঞদের হাতে যাচাই হয়ে প্রকাশিত হলো।
ভাগ্যের সোনার হরিণ অবশেষে ধরাদিলো সেই দুর্ভাগা গণিতজ্ঞ - ইতাং ঝাং (Yitang Zhang) এর কপালে।
২০১৩ সালেই পেলেন গণিতের খুবই বাঘা বাঘা সব পুরস্কার - অস্ট্রোওস্কি প্রাইজ,
২০১৪তেও লাগাতার আসতে লাগলো এমন সব পুরস্কার।
লেকচারার পদ থেকে এক লাভে ২টি ধাপ পেরিয়ে তাকে করা হলো প্রফেসর।
আর কী বাকি? ইতাং ঝাং এর পরে পেলেন বিশ্ববিখ্যাত ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশনের ফেলোশিপ, যাকে বলা হয় জিনিয়াসদের জন্য বিশাল একটা পুরস্কার, যার মূল্যমান ৬২৫,০০০ ডলার!
কেবল প্রচন্ড প্রতিভাবানদের কাজের স্বীকৃতি হিসাবেই এটা দেয়া হয়।
তো ইতাং ঝাং এর ভাগ্যটা গেছে খুলে, কিন্তু তার গল্প থেকে আপনার কী শেখার আছে?
এটাই, যে জীবনের, ভাগ্যের বিশাল পরিবর্তনের সময়টা কখনো হয়না শেষ।
আপনার পিঠ ঠেকতে পারে দেয়ালে, কিন্তু পরিবর্তন আসে, আসবেই।
চেষ্টা করুন, ৮ বছর ধরে অড জব করে কাটানো ইতাং ঝাং যদি নিজের চেষ্টায় পারেন ভাগ্যকে ফেরাতে, তাহলে আপনি কেনো পারবেন না?
কারণ ভাগ্যটা আপনি নিজেই গড়বেন।
বয়স কোনো ব্যাপার না, আপনার ভাগ্যটা পাল্টাবার সময় কখনোই যায় না চলে।
ভাগ্যটা গড়বেন আপনিই, আর কবে গড়বেন, সেটাও নির্ধারণ করবেন,
রাগিব হাসান এখন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা অ্যাট বার্মিংহামের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাঁর নিজের অনলাইন উদ্যোগের কারণে গুগলের 'রাইজ' পুরস্কার পেয়েছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য গুগল এ পুরস্কার দিয়ে থাকে।