রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ঢাবির ‘কালো দিবস’ আজ

রোববার, আগস্ট ২২, ২০২১
ঢাবির ‘কালো দিবস’ আজ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কালো দিবস আজ (২৩ আগস্ট)। ২০০৭ সালের ২০-২৩ আগস্ট তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মদদে ঢাবির ছাত্র-শিক্ষকদের গ্রেফতার ও নির্যাতন চলে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর সংঘটিত অমানবিক ও নির্মম ঘটনার স্মরণে দিনটিকে (২৩ আগস্ট) কালো দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

যা ঘটেছিল সেদিন

২০০৭ সালের ২০ আগস্ট বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্রদের মধ্যে ফুটবল খেলা চলছিল। ওই খেলাকে কেন্দ্র করে উপস্থিত ছাত্র ও সেনা সদস্যদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। 

সেনা সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালালে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম সেনাসদস্যদের দ্বারা লাঞ্ছনার শিকার হন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সেনা সদস্যদের ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানায়। কিন্তু সেনারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। 

এরপর দিন (২১ আগস্ট) নির্যাতনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা। স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারা বিক্ষোভ করতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। তখন তাদের ওপর আক্রমণ চালায় পুলিশ। নীলক্ষেত, টিএসসি, কার্জন হল এলাকাসহ গোটা ক্যাম্পাস পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটে আহত হন শত শত ছাত্র। আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র থেকে ক্যাম্প সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় সেনাবাহিনী।

তারপর দিন (২২ আগস্ট) এই আন্দোলন দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন রিকশাচালক আনোয়ার। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তৎকালীন সেনা-তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২২ আগস্ট বিভাগীয় শহরগুলোতে কারফিউ জারি করে। ওই দিন সন্ধ্যার মধ্যেই ঢাবির আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এরপর ২৩ আগস্ট রাতে আটক করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ও অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদকে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশের অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইদুর রহমান খান, আবদুস সোবহান, মলয় কুমার ভৌমিক, দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, আবদুল্লাহ আল মামুন ও সেলিম রেজা নিউটনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে ঢাবির আরও দুই শিক্ষকসহ পাঁচ ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করে সেনা সমর্থিত সরকার। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

ঘটনার পর দীর্ঘ ৬৬ দিন পর খুলে দেয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো নির্যাতনবিরোধী ব্যানারে মাঠে নামে। ধীরে ধীরে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির আন্দোলনও বেগবান হতে থাকে। ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলনের কাছে হার মানে সেনাসমর্থিত সরকার। বাধ্য হয়ে গ্রেফতারকৃত ছাত্র-শিক্ষকদের মুক্তি দেওয়া হয়। পরের বছর (২০০৮ সাল) থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ২৩ আগস্টকে কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য

দিবসটি সম্পর্কে ওই সময় গ্রেফতার হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেন, ২৩ আগস্টের ঘটনা ছিল সেনাশাসন দীর্ঘস্থায়ী করার একটি পাঁয়তারা। ওই দিন যদি ছাত্র-শিক্ষকেরা রুখে না দাঁড়াতেন তাহলে আজও এ দেশ সেনাশাসনের অধীনে থাকত।

তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিল। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ সেই অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ওই সময় তথাকথিত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের সীমা অতিক্রম করে নির্যাতন চালায়। রাজনীতিবিদদের গ্রেফতার করা হয়। ঢাবির চার শিক্ষকের বিচার ও দণ্ড হয়। তারা ক্ষমা চাননি। ঢাবি কোনো কাপুরুষ তৈরি করেনি। এটি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত ইতিহাস ঐতিহ্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচি

‘কালো দিবস’ পালনের জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন।

এছাড়াও বেলা ১১টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রশাসনিক ভবনের অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সময় জার্নাল/আরইউ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল