অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন :
ডাক্তারদের বিরূদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? করোনার সময়ে আপনি ভারত, সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য কতবার গেছেন? আপনার বিপদে, দেশের মানুষের প্রয়োজনে এই ডাক্তাররাই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই আপনাদের পাশে বারবার দাঁড়িয়েছেন।
ডাক্তারদের বিরূদ্ধে মিথ্যে সংবাদ ভাইরাল হতে সময় লাগে না, অথচ সারাদেশব্যাপী ডাক্তাররা যে অহরহ নির্যাতিত হচ্ছে, সে খবর আপনাদের চোখে পড়ে না।
সম্প্রতি বগুড়া মেডিক্যাল কলেজের ঘটনায় বিভিন্ন পত্রিকায় ‘রোগী ও স্বজনদের পেটালেন চিকিৎসক, থামাতে গিয়ে তোপের মুখে পুলিশও’ শিরোনামে একটি সংবাদ আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কোন কোন পত্রিকায় লিখেছে যে, ডাক্তার অন্ত:সত্ত্বা রোগীর পেটে লাথি মেরেছে।
ব্যক্তিগত আগ্রহে আমি খবরের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে দেখলাম, পত্রিকাগুলো অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করেছে।
নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানতে পেরেছি, রোগীর সমস্যা হলে ডিউটি ডাক্তার কে ডেকেছে। যেহেতু তারা তখন অন্য রোগী দেখছিল, তাই তারা বলেছে এই রোগীটা দেখেই আসছে।কিন্তু রোগীর স্বজনেরা উত্তেজিত আচরণ করে ও তাৎক্ষণিকভাবে ফেসবুক লাইভে এসে ভিডিও করা শুরু করে দেয়। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিডিও করতে নিষেধ করায় রোগীপক্ষ আরো উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং ডাক্তারদের মারতে যায়। ইন্টার্ণরা তখন রোগীর স্বামীকে আটকে রাখে।সেই সময় তার এক পুলিশ আত্মীয়ের পরিচয় দিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তারদের দেখে নেবার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে এবং পুলিশ সাথে থাকায় আরও ক্ষমতা দেখানোর ঔদ্ধত্য দেখায়। পরিণতিতে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
পুরো ঘটনার কোথাও রোগী শারীরিকভাবে উপস্থিত ছিলেন না। রোগীর পেটে লাথি মারার তো প্রশ্নই ওঠে না। অথচ ঘটনার সত্যতা যাচাই না করেই কিছু পত্রিকা বিকৃত সংবাদ পরিবেশন করেছে, যা অত্যন্ত দু:খজনক। এইসব অসত্য সংবাদ পরিবেশন করে তো চিকিৎসা সেবার ক্ষতি বৈ কোন উন্নতি করা যাবে না।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এফডিএসআর বিভিন্ন মিডিয়াকে সাথে নিয়েই জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা, ডাক্তারদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে এরকম অসত্য সংবাদ পরিবেশনের ফলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় এবং নিবেদিত ডাক্তারদের প্রতি একধরণের অন্যায় করা হয়। ভবিষ্যতে আমরা এইসব মিডিয়ার কাছে আরো দায়িত্বশীলতা আশা করি।
লেখক : চেয়ারম্যান, এফডিএসআর।