অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বীরু :
এ রোগটি টেনিস বল খেলার সঙ্গে নামকরণ ও সম্পর্কযুক্ত হলেও আমাদের দেশে কর্মজীবী নারী ও গৃহবধূরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এ রোগে কনুইয়ে মাঝারি থেকে প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে। কনুই সামান্য ফুলেও যেতে পারে।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো হাত দিয়ে ভারী কিছু উঁচু করতে না পারা এবং প্রচন্ড ব্যথা। জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালতে বা কাপড় চিপতে কষ্ট হওয়া।
কনুই ব্যথার কারণ অনেক। ব্যথার অবস্থানের মাধ্যমে এর কারণ ও রোগ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। বাহুর হাড়ের নিচের প্রান্তের বাইরের অংশকে ল্যাটারাল ইপিকোনডাইল বলে। নিবাহুর পেছনের পেশিগুলো এ স্থান থেকে উৎপত্তি হয় এবং এর প্রদাহকে ল্যাটারাল ইপিকোনডাইলাইটিস বা টেনিস এলবো বলে। কনুই ও হাতের কবজি বারবার পেছনে বাঁকা করলে টেনিস এলবো হয়। ধারণা করা হতো, টেনিস খেলোয়াড়দের এটি বেশি হয় বলে একে টেনিস এলবো বলে। শুধু যে টেনিস প্লেয়ার যে হয় তাও কিন্তু নয়, বর্তমানে ক্রিকেটারদের ও হয়। উদাহরণসরূপ ভারতের বিখ্যাত ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুকারের এই ব্যাথার কারনে অবশেষে ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে হয়েছে।
উপসর্গ :
হাতের কনুইয়ে ব্যথা অনুভব হয় বলে হাত দিয়ে কোনো কিছু তুলতে সমস্যা হয়। হাতের নড়াচড়া বা কাজকর্মে ব্যথা বেড়ে যায়।
এই ব্যথা কনুই থেকে শুরু হয়ে হাতের আঙুল পর্যন্ত যেতে পারে।
ভেজা কাপড় নিংড়ানো, চামচ দিয়ে কিছু নাড়ানো, দরজা খোলা ও লাগানো কষ্টকর হয়; এমনকি অপরজনের সঙ্গে করমর্দন করতেও অসুবিধা হয়।
যাদের বেশি হয় : নারী প্রভৃতি মানুষের।
রোগ নির্ণয় :
টেনিস এলবো কেন হয়—এর কারণ নির্ণয় করতে হলে প্রথমেই রোগীর অসুবিধার কথাগুলো জানতে হবে। রোগীকে ভালোভাবে পরীক্ষা করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এক্স-রে ও রক্তের পরীক্ষা যেমন—শর্করা, সিরাম ইউরিক এসিড, আরএ ফ্যাক্টর ইত্যাদি করাতে হবে। অনেক সময় এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষায়ও রোগ শনাক্ত করা যায় না। কনুইয়ের বিশেষ ধরনের আল্ট্রাসাউন্ড এবং এমআরআই করেও অনেক সময় এই রোগ শনাক্ত করা যায়।
চিকিৎসা :
হাত দিয়ে কোনো কাজ বা কোনো কিছু বহন করতে না পারলে, রাতের বেলায় বা বিশ্রাম অবস্থায় ব্যথা হলে, একটানা কিছুদিন কনুইয়ে ব্যথা থাকলে, সোজা বা ভাঁজ করতে অসুবিধা হলে, কনুই ফুলে গেলে বা চামড়ার রং পরির্বতন হলে, অন্য কোনো অস্বাভাবিক অসুবিধা বা চিনচিনে ব্যথা অনুভূত হলে চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে হবে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কনজারভেটিভ চিকিৎসায় কনুই এলবো সেরে যায়। তবে দুঃখের বিষয়, এই রোগ সেরে যাওয়ার কিছুদিন পর আবার দেখা দিতে পারে। অনেক সময় কনুইয়ের বাইরের দিকে ব্যথা না হয়ে যখন কনুইয়ের ভেতরের পাশে ব্যথা হয়, তাকে গলফার্স এলবো বলে, যার চিকিৎসাও টেনিস এলবোর মতোই।
কনুই এলবোর চিকিৎসায় নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ সেবন করা যেতে পারে। করটিসন ইনজেকশন পুশ করলে রোগের উপসর্গ দ্রুত কমে।
বারবার কনুই এলবোতে আক্রান্ত হলে ছোট ছিদ্র দিয়ে আর্থোস্কোপ কনুইয়ে প্রবেশ করিয়ে বিসংকোচন ও ডেব্রাইডমেন্ট করালে ব্যথা কমে যায়। কখনো কখনো টেনডনের উৎপত্তি নতুন জায়গায় সরানো হয় এবং এনকোর সুচার দিয়ে লাগানো হয়। এই উভয় পদ্ধতিতে রোগীর সমস্যা দ্রুত নিরাময় হয়।
রোগের জটিল পর্যায়, বিশেষ করে পেশাজীবী খেলোয়াড়দের এই রোগ হলে অনেক সময় অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। অভিজ্ঞ অর্থোপেডিকস সার্জনরা এই অপারেশন পরিচালনা করে থাকেন, যাতে প্রায় ৯০ শতাংশ সফলতা মেলে।
করণীয় :
চিকিৎসার পাশাপাশি কনুইকে যথাসম্ভব বিশ্রামে রাখতে হবে, যাতে প্রদাহ বা ব্যথা কম হয়। তবে অতিরিক্ত বিশ্রামে আবার কনুই স্টিফ হয় বা জমে যেতে পারে।
কনুইয়ে এক ধরনের রিচ বেন্ড পাওয়া এটা ব্যবহার করলে ব্যাথা ভাল হতে পারে।
নিয়মিত বরফ বা গরম সেঁক দিলে প্রদাহ, ফোলা ও ব্যথা কমে যায়।
ফোলা ও ব্যথা কমে এলে কনুইয়ের স্বাভাবিক নড়াচড়া ও পেশি শক্তিশালী হওয়ার জন্য ব্যায়াম করতে হবে।
প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপি দিতে হবে।
সুস্থ থাকবেন।