শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

বাগেরহাটে ভরা মৌসুমেও জেলেদের জালে ইলিশের আকাল, হতাশায় জেলেরা

বৃহস্পতিবার, আগস্ট ২৬, ২০২১
বাগেরহাটে ভরা মৌসুমেও জেলেদের জালে ইলিশের আকাল, হতাশায় জেলেরা

এম.পলাশ শরীফ, বাগেরহাট: সমুদ্রে ইলিশসহ সব ধরনের মাছের প্রজনন বৃদ্ধি করতে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়। এর আগে ইলিশ বড় করতে ১ নভেম্বর ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত আট মাস জাটকা নিধন বন্ধ করতে নিষেধাজ্ঞা দেয় মৎস্য অধিদপ্তর।

তারও আগে ইলিশ প্রজনন বা মা ইলিশ সংরক্ষণ করতে গত বছরের ১৩ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর ২২ দিন  জেলেদের নদীতে নামতে নিষেধাজ্ঞা ছিল।

তবে সবধরনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে এখন চলছে ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু এই মৌসুমেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছেনা মোংলার পশুর নদীতে। এমনকি ইলিশের খনি সুন্দরবনের নদ-নদীতেও মিলছে না ইলিশ। আর যা মিলছে তাতে উঠছেনা ট্রলারের খরচ।  ফলে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন জেলেরা।

মোংলা উপজেলার চিলা ও জয়মনির ইলিশ ঘাটে বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই)  সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চলতি মৌসুমে ইলিশ শিকারের আশায় জাল, নৌকা ও ট্রলার নিয়ে দল বেঁধে নদীতে ছুঁটছেন জেলেরা। ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত নদী চষে বেড়ালেও তাদের জালে মিলছেনা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ।

এই এলাকার জেলে রশিদ হাওলাদার, জাহিদ ব্যাপারী ও জাফর হাওলাদার বলেন," ইলিশের ভরা মৌসুমে প্রতিদিন আমরা ৪-৫ জন নদীতে যাই। গড়ে তিন চারটা ইলিশ পাই। যার মূল্য এক হাজার টাকার বেশি না কিন্তু ট্রলার ও তেলের খরচের পর তিন- চারশ টাকা। যা দিয়ে পরিবারের বাজারই হয়না। আমাদের একমাত্র পেশা ইলিশ ধরে বিক্রি করা"।

এই ভরা মৌসুমে মাছ ধরেই আমরা সারাবছর আয় রোজগার করি। তাই এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নৌকা ও জাল কিনে নদীতে নেমেছি। কিন্তু সারাদিন জাল ফেলেও মাছ না পাওয়ায় হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।

মোংলা উপজেলা জাতীয় মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি বিদুৎ মন্ডল বলেন, লকডাউনের মধ্যে আমরা অন্য কোন কাজও করতে পারি নাই। সরকারিভাবে যে সাহায্য পেয়েছি তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এখন আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, নদীতে স্রোত কমে যাওয়ার কারণে পলি পড়ে গভীরতা কমে যাচ্ছে। এ কারণে ইলিশ অন্য দিকে চলে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ইলিশ না পাওয়ার আরও একটি বড় কারণ হচ্ছে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ নদীতে অসাধু জেলেরা বিষ দিয়ে মাছ ধরছে। এই বিষমিশ্রিত পানি খেয়ে ইলিশসহ অন্য প্রজাতির মাছ মারা যাচ্ছে। তাই নদীতে ইলিশ বড় হলেও তারা ওই পানির ভয়ে অন্য রুটে চলে যাওয়ায় পশুর ও সুন্দরবনের নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডঃ মোঃ আব্দুর রউফ বলেন," সুন্দরবনসহ পশুর নদীতে ইলিশ না পাওয়ার কারণ হচ্ছে নদীর স্রোত কমে প্রচুর পরিমান পলি পড়ে পানি ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে ইলিশের শ্বাস প্রশ্বাসে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তাই সে এ রুট পরিবর্তন করে অন্যদিকে চলে যায়"।

এক প্রশ্নের উত্তরে এর থেকে পরিত্রাণ পেতে ডঃ আব্দুর রউফ বলেন, এসব নদীর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেশী দেশগুলো যৌথভাবে নদী ব্যবস্থাপনায় সঠিকভাবে কাজ করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।

প্রতিবছরের জৈষ্ঠ্য ও আষাঢ় মাসের পুরো সময়টাই ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু সেই সময় পেরিয়েছে। তারপরও নদীতে ইলিশের দেখা নাই। এ অবস্থায় মোংলা বাজারে ইলিশ আসছে চট্টগ্রাম ও বরিশাল থেকে। খরচ বেশি হওয়ায় বাজারে ইলিশ বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে দাম বেশি হওয়ায় ইচ্ছে থাকা সত্বেও ইলিশ না কিনেই বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা।

ক্রেতা মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, "ছেলে মেয়ের আবদার পূরণে বাজারে ইলিশ কিনতে যাই, অতিরিক্ত দাম হওয়ায় সেটি কিনতে পারলাম না"! 

সময় জার্নাল/এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল