ইলিয়াস হোসেন : নিজে কিছু করবার প্রচন্ড ঝোঁক। অথচ, পুঁজি নেই। তাই স্বপ্ন পূরণে বান্ধবীর কাছ থেকে টাকা ধার নেন। সেই টাকা দিয়ে পছন্দের কাপড় কেনেন। সেই থেকে ব্যবসা শুরু আজকের সফল উদ্যোক্তা টাঙ্গাইলের সানজিদা লোপার।
সময়ের ব্যবধানে বেড়েছে তাঁর ব্যবসার পরিধিও। গড়ে তুলেছেন ‘তৈমুর বুটিকস অ্যান্ড টেইলার্স’। কাজ করছেন ,ব্লক, বাটিক, জামদানি থ্রিপিস, টাঙাইলের শাড়ী, কুশন কাবার, বেডশিটসহ ৬ ধরনের সূতি পণ্য নিয়ে। এসব কাজে তাঁকে সহযোগিতা করছেন প্রায় ২৫ জন কর্মী। এভাবেই নিজের উদ্যোগের কথা সময় জার্নালকে জানালেন, টাঙ্গাইলের ঐতিহ্য নিয়ে এগিয়ে চলা সাহসী লোপা ।
ব্যবসার শুরুর দিকের গল্প বলতে গিয়ে উদ্যোক্তা লোপা বলেন, ২০০৮ এ ব্যবসার শুরুটা অবশ্যই সহজ ছিল না। ঘরোয়াভাবে কাজ শিখতে শিখতে শুরু করেছিলেন নিজের ব্যবসা। বান্ধবীর কাছ থেকে ৫০০০ টাকা ধার করে ব্যবসা আরম্ভ করেন। ১৬০০০ টাকার পণ্য বিক্রিতেও সাহায্য করেন সেই বান্ধবী। এর কিছুদিন পর পাশের বাড়ির এক আপু এসএমই ফাউন্ডেশনে স্টল নিয়েছিলেন। যেহেতু তিনি বেশ অনেকগুলোই স্টল নিয়েছিলেন তাই তার পণ্যের স্বল্পতা ছিল।
লোপার ভাষায়, 'সে আপু হঠাৎ করে আমার কাছে এসে প্রশ্ন করলেন-তুমি কি আমাকে পণ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারো?'
উত্তরে উদ্যোক্তা লোপা জানান, কেন নয় !
তখন বেশ কিছু পণ্য তাকে বিক্রি করতে মেলাতে পণ্য ডেলিভারি করেন।
মেলা শেষে নতুন ভাবনা হাজির হয় লোপার মনে। পণ্য তো তাঁর নিজের নামে প্রচার হচ্ছে না? সবাই তো পণ্যের জন্য ওই পাশের বাড়ির আপুকে খুঁজছে! তাকে তো কেউ খুঁজছেন না! কিছুদিন মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন উদ্যোক্তা লোপা।
এরপর তৈমুর বুটিক্সের স্বত্বাধিকার বলেন, ঠিক সেখান থেকেই নিজের একটি আইডেন্টিটি ও পরিচিতি পাওয়ার লক্ষ্যে ব্যবসাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন লোপা। যাত্রা শুরু হয় ‘তৈমুর বুটিকস অ্যান্ড টেইলার্স’ এর।
উদ্যোক্তা লোপা জানান, খুব বেশি চিন্তাভাবনা করে এটি করেননি। বলেন, খুব বেশি টাকা পুঁজি ছিল না। তারপরও নিজের যোগ্যতায় প্রতিষ্ঠান শুরু করতে আনন্দ ছিল মনে। এজন্য নিজেকে ভাগ্যবতী বলে মনে করেন তিনি।
পণ্য সম্পর্কে লোপা বলেন, মূলত টাঙ্গাইল জেলার ঐতিহ্যবাহী পণ্য সূতি কাপড় নিয়ে কাজ করছেন। জামদানি শাড়ি, ব্লক প্রিন্ট শাড়ি, ব্লক প্রিন্টের থ্রি পিস, জামদানি থ্রিপিস, টাঙাইলের শাড়ী, কুশন কাভার, বেডশিট, বিভিন্ন ধরনের তাঁতের টাঙ্গাইলের নারী জাতীয় বস্ত্র নিয়ে। সেসব নিয়ে ইনোভেশন করার চেষ্টা করছেন। হাজির হচ্ছেন- বিভিন্ন মেলায় এবং ভিন্ন ভিন্ন স্থানে। এখন তিনি প্রায় ২৫ জন কর্মী নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
উদ্যোক্তা সানজিদা লোপা আরও জানান, 'আমি সবসময় চেয়েছি এমন কিছু পণ্য নিয়ে কাজ করতে, খুব বেশি লোক বা সবাই যে পথে হাঁটেন। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে- ছোটবেলা থেকেই আমি দেশীয় পণ্যের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম, আমার মা-বাবার সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় যেতাম। মায়ের শাড়ির প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা ছিল। তার জন্য অনেক শাড়ি চিনেছি। টাঙ্গাইলের তাঁতের অথবা জামদানির সঙ্গে আমার অন্যরকম একটি মায়ার অনুভূতি কাজ করতো' বলেন উদ্যোক্তা সানজিদা লোপা।
উদ্যোক্তা লোপার একান্ত স্বপ্ন : নিজেকে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে দেখতে পারা ও গরীব লোকের পাশে দাড়ানো মুখে খাবার তুলে দেয়া।
যে নীতি মেনে চলেন : ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই সততা থাকতে হবে। পরিশ্রম করলে সফলতা আসবে জীবনে।
সময় জার্নাল/ইএইচ