দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : আগে জহন শরীলে জোর ছেলো তহন কারো ধারে হাত পাতি নাই। মাইনষের জমিতে কাজ কইরে আর ভ্যান চালায়ে টাহা ইনকাম করতাম। যে টাহা পাতাম সেই টাহা দিয়ে আমাগে দুইজনের চইলে যাতো। বউডা গত ১৩ বছর রোগ নিয়ে ঘরে পইরে থায়ে। আর শরীলেও এহন আর সেই রহম জোর নাই। আমারেও রোগে ধরছে। তাই মাইনষের ধারে হাত পাতা ছাড়া কোন উপায় নাই। দুইজনে দুইডে ভাতা পাই আর মানুষে যা দেয় তাই দিয়ে সব কিছু চলে। তাই আমরা বুড়ো বুড়ি শ্যাষ বয়সে একটু থাহার জাগা চাই। অশ্রুশিক্ত নয়নে কথাগুলো বলছিলেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গওহরডাঙ্গা গ্রামের ৭০ বছর বয়সী আ. আওয়াল খাঁ।
স্থানীয় দুলু শেখ, মিঠু মোল্লাসহ আরো অনেকে জানান, আমরা কয়েক বছর থেকে দেখে আসতেছি আউয়াল খাঁ তার স্ত্রী রহিমা কে ভ্যানে করে ভিক্ষা করে। ভিক্ষা করে যা পায় তাই দিয়েই খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করে। তার কোন জায়গা জমি ও ঘর-বাড়ি নাই। তার থাকার জায়গা না থাকায় গ্রামের বিভিন্ন মানুষ কিছুদিনের জন্য থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। অসহায়ত্বের কথা জেনে স্থানীয় মেম্বার তাদের স্বামী-স্ত্রীকে দুটি ভাতা করে দেয়। সেই ভাতার টাকা ও মানুষের কাছে হাত পেতে তাদের চলতে হয়। প্যারালাইজড স্ত্রীকে চিকিৎসা করানোর অর্থও নেই তার। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাদের একটি ঘর ও তার স্ত্রীর চিকিৎসার ব্যবস্থার করার দাবি জানাই।
বৃদ্ধ আওয়াল খাঁ এ প্রতিবেদককে বলেন, সারা জীবন মানুষের বাড়িতে বাড়িতে থেকে গেছি। আল্লাহ কোন দিন একখান ঘর করার সামর্থ্য দেয় নাই। এখন শরীরে নানা রোগ বাসা বেধেছে। শেষ বয়সে চলাফেরার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি অনেকটা। তারপরও পাপী পেটের জন্য স্ত্রীকে ভ্যানে করে নিয়ে ভিক্ষা করতে হয়। অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা করানোর টাকা নেই আমার। আর ভিটে বাড়িও নেই। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটা ঘরের দাবি জানাই। তাহলে শেষ বয়সে একটু শান্তিতে মরতে পারবো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গহরডাঙ্গা গ্রামের হাসেম শিকদারের একটি টিনের ঘরে বসবাস করেন তারা। ঘরে রয়েছে দুইটি ছোট বাংলা খাট। রান্না করার জন্য সামান্য কিছু হাড়ি পাতিল। প্যারালাইজড স্ত্রী রহিমা আক্তার কোনার একটি খাটে শুয়ে আছে। প্রতিদিন সকালে আওয়াল খাঁ তার স্ত্রীকে কোলে নিয়ে ভ্যানে উঠায়। তারপর ভ্যান ঠেলে ঠেলে বাজারের বিভিন্ন দোকানে গিয়ে ভিক্ষা করে। ভিক্ষা করে যা পায় তাতে খাওয়ার টাকা হয় কিন্তু ঔষধের টাকা হয় না।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, গওহরডাঙ্গা ৫ নং ওয়ার্ডের আওয়াল খাঁ একটি ঘরের জন্য আবেদন করেছেন। যাতে সে ঘর পায় তার জন্য সুপারিশ করেছেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও পাটগাতী ইউপি চেয়ারম্যান। ঘর নির্মাণ কাজ শেষ হলেই সবার আগে তাকে ঘর দেওয়া হবে। এছাড়া তাঁর অসহায়ত্বের কথা জেনে উপজেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন সময় তাকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের খাদ্য সামগ্রীও দেওয়া হয়েছে।
সময় জার্নাল/আরইউ