শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়ন সীমান্তে রোববার (২৯ আগস্ট) ভোরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহতদের লাশের দাবিতে মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) দুপুর পৌনে দুইটা (০২ : ৪৫ মিনিট) থেকে প্রায় ৩০ মিনিট বুড়িমারী স্থলবন্দর বিজিবি চেকপোস্ট অবরোধ করা হয়। নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজন, পিতা, স্ত্রী ও স্থানীয়রা চেকপোস্টে অবস্থান নিয়ে লাশ ফেরত চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। এ সময় জিরো পয়েন্ট সড়কে পণ্যবাহী ভারত-বাংলাদেশের প্রায় ৩৫- ৪০ টি ট্রাক আটকে থাকে। বুড়িমারী স্থলবন্দর সড়কের দুই পাশে প্রায় দুই শতাধিক পণ্যবাহী ও খালি ট্রাক আটকে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে দুই দফায় পুলিশ গিয়ে অবরোধকারীদেরকে হটিয়ে দেন।
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, ‘নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজনরা বুড়িমারী স্থলবন্দর বিজিবি চেকপোস্ট অবরোধ করে অবস্থান নিয়েছিল। খবর পেয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর ফাঁড়ি পুলিশ গিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তাঁরা না গেলে/ সরলে আমিসহ অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে সরিয়ে/ হটিয়ে দেই।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২৯ আগস্ট ভোরে বুড়িমারী ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের বুলবুল হোসেনের ছেলে ইউনুছ আলী (২৭) ও নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার ধনবর রায়ের ছেলে জগন্নাথ রায় সাগর (৩৮) গুলিতে নিহত হয়। নিহত ব্যক্তিদের নিকটতম আত্মীয়রা, স্ত্রী, পিতাসহ স্থানীয়রা লাশের জন্য বুড়িমারী স্থলবন্দরে গত দুই দিন ধরে পড়ে আছে। বিজিবি ক্যাম্পে গেলে তাঁরা সঠিক কোনো কথা না বলায় বুড়িমারী স্থলবন্দর বিজিবি চেকপোস্ট অবরোধ করে প্রতিবাদ জানায় নিহত ব্যক্তিদের লোকজন।
নিহত ইউনুস আলীর পিতা বুলবুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাতসহ বুড়িমারী বিজিবি কোম্পানি কমান্ডারকে সীমান্তে আমার ছেলে হত্যা ও লাশ নেওয়ার জন্য ২৯ আগস্ট রোববার আবেদন দিতে যাই। তিনি নেননি। পরদিন সোমবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে আবেদন নেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আছি লাশ পাব কি না এ ব্যাপারে কথা বললে তাঁরা (বিজিবি) বলেন, উপর থেকে আদেশ না হলে কিছু বলতে পারবে না। লাশের জন্য আমাদের লোকজন, আত্মীয়স্বজন বুড়িমারী স্থলবন্দর বিজিবি চেকপোস্টে অবস্থান নিই। দাাঁড়িয়ে থাকি। পরে পুলিশ আমাদেরকে তাঁড়িয়ে দেয়।’
নিহত জগন্নাথ রায় সাগরের স্ত্রী শামলী রানী বলেন, ‘আমার স্বামীর লাশ ফেরত চাই। না হলে এখানে জীবন দিব।’
জগন্নাথ রায়ের পিতা ধনবর রায় বলেন, ‘ছেলের মুখ দেখার জন্য পরে আছি। কেউ আমাদের কথা শোনে না। দুই দিন গত হল লাশ পাব কি না জানি না।’
বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত বলেন, ‘আমরা বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে কথা বলেছি। বিজিবি বলে আমাদের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো আদেশ দেয়নি। শুধু ঘুরতেছি। আবেদন দিতেও ঘুরেছি। শুনেছি বিএসএফ লাশ ময়না তদন্ত করেছে। লাশ ফেরত দিতে চায় কিন্তু আমাদের এদিক থেকে তাঁরা (বিএসএফ) কোনো সাড়া পাচ্ছে না। লাশ পাওয়া যাবে কীনা বলতে পারছি না। লাশের জন্য নিহত ব্যক্তিদের পিতা, স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজন বিজিবি চেকপোস্টে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ তাড়িয়ে দেয়।’
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ৬১ (বিজিবি) বুড়িমারী কোম্পানি কমান্ডার বেলাল হোসেন বলেন, ‘লাশ ফেরতের জন্য নিহত ব্যক্তিদের স্বজনরা বুড়িমারী স্থলবন্দর বিজিবি চেকপোস্ট কিছু সময় অবরোধ করেছিল। গুলিতে দুইজন বাংলাদেশি নিহতের ব্যাপারে বিএসএফ জানিয়েছে। পরিবার থেকে অভিযোগও পাওয়া গেছে। অভিযোগ গুলো উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা আসলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ৬১ (বিজিবি) রংপুর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মীর হাসান শাহরিয়ার মাহমুদের সাথে মোবাইল ফোনো যোগাযোগের চেষ্টা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।’
সময় জার্নাল/এমআই