নুসরাত জাহান মিম: বাংলাদেশে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ক্লাস রুমে বসে ক্লাস করা হয়তো অনেকে ভুলতে বসেছে। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চললেও সেটা ক্লাস রুমের বিকল্প নয়। আর এই দীর্ঘদিন ক্লাস রুমে ক্লাস করা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না আসার ফলে শিক্ষার্থীদের অবস্থা টালমাটাল, শিশু শিক্ষার্থী থেকে বড়রা সকলেই নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের মেধার সঠিক বিকাশ হচ্ছে না, হারাচ্ছে সৃজনশীলতা। অনেকে আবার শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তায়!
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুর মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন আসতে পারে, শিশুদের মোবাইল ও ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি বাড়তে পারে। আচরণগত সমস্যা গুলো হচ্ছে, অনেকে প্রচন্ড জেদ করছে, ইমোশনাল রিঅ্যাকশন হচ্ছে, কান্নাকাটি করছে কেউ কেউ, কেউ জেদ করে কোন কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে, ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যবহার বাড়ছে। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে হচ্ছে মাইগ্রেনের ব্যথা, মাথাব্যথা, ঘুম কমে যাচ্ছে, অনেকের চোখে সমস্যা হচ্ছে।
একটু বড়রা পরিবারের অন্যদের সাথে দূরত্ব তৈরি করছে, আইসোলেটেড হয়ে আছে, তারা তাদের রুমে বেশি সময় কাটাচ্ছে। অনেকেই গেমসে আসক্ত হয়ে তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করছে। ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছে প্রতিটি শিক্ষার্থী। যারা টিউশন করে তাদের হাত খরচ চালাতো, তাদের অনেকেরই আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে, এতে অনেকে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।
শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির চতুর্থ বর্ষের একজন শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান লাবনী বলেছেন, "দীর্ঘ সময় ধরে অনলাইনে ক্লাস করার ফলে কানে ও মাথায় ব্যাথা সহ নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। "
মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মা বলেছেন "অনলাইন পরীক্ষার জন্য বাচ্চারা বাসায় ঠিকমতো পড়া-শোনা করছে না এবং না চাওয়া সত্ত্বেও পিতা-মাতার সাহায্য এবং গুগলের সাহায্য নিয়ে পরীক্ষার উত্তরপত্র জমা দিচ্ছে। " এতে শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ হচ্ছে না, হারাচ্ছে সৃজনশীলতা।
বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘন্টার পর ঘন্টা এভাবে বাসায় থাকলে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যায়াম না করলে, শিক্ষার্থীদের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে এবং অনেক শিক্ষার্থীদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, পড়ালেখার প্রতি তারা তাদের আগ্রহ হারাচ্ছে এতে করে বাংলাদেশের শিক্ষার হার কমে যাচ্ছে।
অনেক তরুণ তরুণীরা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন, অনেকে আত্মহত্যা করছে, অনেকেই নিজেকে সমাজ থেকে আলাদা করে নিয়েছে এবং অনেক ছেলেমেয়েরাই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগের দক্ষতা কমে যাচ্ছে। বাচ্চারা খেলাধুলা না করার ফলে তাদের শারীরিক বিকাশ হচ্ছে না। দারিদ্রতার ফলে অনেক শিক্ষার্থী লেখাপড়া বাদ দিয়ে কাজে নেমে পড়েছেন।
তবে এত সমস্যার মধ্যে থাকার পরও শিক্ষার্থীরা বলছেন তারা ধৈর্য নিয়ে বসে আছে, পৃথিবীর সুস্থ হওয়ার আশায়।
সময় জার্নাল/এমআই