দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ :
দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ঝোপঝাড়ে আঁকড়ে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউট অব লিবারেশন ওয়ার অ্যান্ড বাংলাদেশ স্টাডিস। এই ইনস্টিটিউটটি নিয়ে বশেমুরবিপ্রবি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মৌখিক রদবদল হলেও দালিলিকভাবে কোন কিছু হয়নি। এই কারনে সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে না বশেমুরবিপ্রবি। এদিকে, দীর্ঘদিন পরিত্যাক্ত অবস্থায় থাকায় বেহাল দশা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামে গড়ে তোলা গবেষনাগারের।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কুশলী ইউনিয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামে গড়ে ওঠা এই ইনস্টিটিউটটি বর্তমানে সাপ-বিচ্ছুদের আশ্রয়স্থল ও গবাদিপশুর বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে । গবেষণাগারটির বিভিন্ন রুমে লতাপাতা বেড়ে চলেছে । তাছাড়া প্রধান ফটকের গেটসহ ভেঙে আছে বেশ কয়েকটি কাঁচের জানালা। এছাড়া ভবনের চারপাশের দেয়ালে মরিচা পরে রং চটে গেছে অনেক আগেই। ভেতরের পুরনো আসবাবপত্র দিয়েই চলছে কার্যক্রম। দেয়াল থেকে খসে পড়ছে প্যালেস্তারা।
বশেমুরবিপ্রবির রেজিস্টার দপ্তর সূত্রে জানা যায় যে, ২০১৩-১৪ সালে বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউট অব লিবারেশন ওয়ার অ্যান্ড বাংলাদেশ স্টাডিসে বশেমুরবিপ্রবির আওতায় কার্যক্রম করা হয়। পূর্বে এই গবেষণাগারটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। তবে তা দীর্ঘদিন পরিত্যাক্ত থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিক্রমে বশেমুরবিপ্রবিকে প্রদান করা হয় । এরপর থেকে গবেষনা কেন্দ্রটির দ্বায়িত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বশেমুরবিপ্রবির ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ জানান, ইউজিসি কর্তৃক তাদের বিভাগের অনুমোদন না হওয়ায় বিভিন্ন সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এরমধ্যে বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউট অব লিবারেশন ওয়ার অ্যান্ড বাংলাদেশ স্টাডিসের ভবনটিতেও শিক্ষা সহায়ক পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা না থাকাটাও অন্যতম। আশাকরি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমাদের নিজস্ব পরিচয় প্রদান করবে। এছাড়া ভবনটির সংস্কার ও সঠিক পরিচর্যা করবে।
গোপালগঞ্জের শেখ হাসিনা কৃষি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আঃ রকিব বলেন, এই ইনস্টিটিউটটির অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য যাতায়াত করা কষ্টকর। তাছাড়া এখানে শিক্ষার্থী অনুযায়ী জায়গারও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নাই তাই আমরা মূল ক্যাম্পাসে নিজেদের জন্য ক্লাস রুম নিয়েছি। তবে আমাদের দাবি ইনস্টিটিউটটি পরিস্কার পরিছন্ন করে শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করা হোক।
কুশলী গ্রামের নাসির শেখ বলেন, দীর্ঘদিন পরিত্যাক্ত অবস্থায় ছিলো বঙ্গবন্ধুর নামে গড়ে তোলা এই গবেষনাগারটি। এখন দেখি মাঝে মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা গাড়িতে করে আসে ও ঘন্টাখানেক থেকে আবার চলে যায়। কিন্তু ভবনটির বেহালদশা। জাতির পিতার নামের গবেষনা কেন্দ্রটি সঠিক পরিচর্যা না থাকায় ঝোপঝাঁড়ে আঁকড়ে আছে। আমরা এলাকাবাসী কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত ভবনটির সংস্কার ও পরিষ্কার পরিছন্ন রাখার দাবি জানাই।
বশেমুরবিপ্রবির আওতাধীন ঐ ইনস্টিটিউটটের শিক্ষক ড. আবু সালেহ বলেন, বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউটটি শেখ হাসিনা কৃষি ইনস্টিটিউটটের ক্লাস ও গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হতো। পরে বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউট অব লিবারেশন ওয়ার অ্যান্ড বাংলাদেশ স্টাডিসের জন্য মাত্র একটি রুম বরাদ্দ ছিল। পরে ২০১৯ সালে দুর্নীতির কারণে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের বিদায়ের পর ঐ ইনস্টিটিউটটের শিক্ষার্থীরা গোপালগঞ্জের মূল ক্যাম্পাসের হল রুমে নিজেদের ক্লাসের জায়গা করে নেয় । তাই সেটা এই অবস্থায় পরে আছে।
তিনি আরো বলেন, বশেমুরবিপ্রবির সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব আসার পরে ইনস্টিটিউটটি নতুন করে কার্যক্রম শুরু করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন । তবে করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি ।
এবিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব বলেন, এই ইনস্টিটিউটটি নিয়ে আমাদের ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মৌখিক রদবদল হলেও দালিলিক ভাবে কোন কিছু হয়নি। দালিলিক ভাবে আমাদের আয়ত্ত্বে আসলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিব।
সময় জার্নাল/ইএইচ