আন্তর্জাতিক ডেস্ক। আফগানিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার বিশ দিনের মাথায় আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর তালেবানের নতুন সরকার গঠনের ঘোষণা দেওয়ার কথা থাকলেও কাবুলের বর্তমান শাসকদের মুখপাত্র জানিয়েছেন, সরকারের ঘোষণা আসবে শনিবার।
তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, নতুন সরকার গঠনের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে শনিবার। সূত্রের বরাতে জানা যাচ্ছে, তালেবানের রাজনৈতিক শাখার প্রধান মোল্লা আবদুল গনি বারাদার সম্ভবত নতুন আফগান সরকারের প্রধান হবেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, আফগানিস্তানে যে নতুন সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে তার প্রধান হতে যাচ্ছেন মোল্লা আবদুল গনি বারাদার। অন্যদিকে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হতে যাচ্ছেন তালেবানের প্রধান হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা।
নতুন সরকারে আখুনজাদা ও বারাদার ছাড়াও শীর্ষে পদে থাকবেন তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের ছেলে মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব, শীর্ষ তালেবান নেতা শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজুদ্দিন হাক্কানি।
রয়টার্স জানিয়েছে, তালেবান প্রধান হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা ধর্মীয় বিষয় ও ইসলামি বিধিবিধান অনুযায়ী প্রশাসন পরিচালনার বিষয়ে নতুন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বা নীতি নির্ধারক হিসেবে থাকবেন বলে তালেবান সূত্র তাদের নিশ্চিত করেছে।
নতুন সরকারের ঘোষণা দিতে তালেবানের শীর্ষ নেতারা রাজধানী কাবুলে পৌঁছেছেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন তালেবানের এক জ্যেষ্ঠ নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেছেন, সরকার গঠনের জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
সরকার গঠনের আগেই অবশ্য চার মন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেছে তালেবান। তারা হলেন, অর্থমন্ত্রী গুল আগা, ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সদর ইব্রাহিম, ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা আবদুল কাইয়ুম জাকির ও ভারপ্রাপ্ত উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী আবদুল বাকি হাক্কানি।
অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির ছবিসহ এক টুইট বার্তায় বৃহস্পতিবার তালেবান নেতা আহমাদুল্লাহ মুত্তাকি জানিয়েছিলেন, ‘তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রেসিডেন্ট প্যালেসে সব বন্দোবস্ত করছে। ওই অনুষ্ঠানে নতুন সরকারের ঘোষণা দেওয়া হবে।’
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসা তালেবান মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর হাতে ২০০১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত অনির্বাচিত পরিষদের মাধ্যমে কঠোর শরিয়া আইনে আফগানিস্তান শাসন করলেও এবার নমনীয় হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো তালেবানের এমন আশ্বাসে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছে, নতুন সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও যে কোনো অর্থনৈতিক সহায়তা নির্ভর করবে ক্ষমতায় আসার পর তালেবান কি করে তা দেখার ওপর।
সরকারবিহীন আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক বিপর্যয়
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর ব্যাংকের অচলাবস্থা, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ’র মতো বিদেশি সংস্থাগুলো তহবিল, সহায়তা ও ঋণদান বন্ধ করে দেওয়ায় নগদ অর্থের সংকটে আগে থেকেই ভঙ্গুর আফগানিস্তানের অর্থনীতি এখন ভেঙে পড়ার পথে।
শুধু সরকার গঠন করাই নয়, অর্থনীতির বিপর্যয় ঠেকাতে তালেবান সরকারকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও আদায় করতে হবে। কারণ আন্তর্জাতিক দাতা ও বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণে নতুন সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নগদ অর্থের জন্য রাজধানী কাবুলের প্রতিটি ব্যাংক ও এটিএম বুথে লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে। দিন যত গড়াচ্ছে ততই সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। আফগানদের অনেকের হাতেই নগদ অর্থ নেই, আর চাইলেও তারা অর্থ তুলতে পারছেন না।
অর্থের অভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রমে এমন বিঘ্নের মধ্যে আফগানিস্তানে চলমান প্রকল্পগুলোতে সর্বশেষ তহবিল স্থগিত করেছে বিশ্ব ব্যাংক। এর আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আফগানিস্তানে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিল।
জার্মানি, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনসহ কয়েকটি দেশ আফগানিস্তানে ত্রাণ সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) উন্নয়ন সহায়তা তহবিল (ওডিএ) বন্ধ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভও জব্দ হয়েছে।
আফগানিস্তান এমনিতে যুদ্ধবিধ্বস্ত। তালেবানের ক্ষমতা দখলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যেই তীব্র খরার মুখে পড়েছে ৭০ লাখ কৃষক। তাদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা।
পাঞ্জশিরে চলছে তুমুল লড়াই
বিবিসি জানিয়েছে, আফগানিস্তানের পাঞ্জশির উপত্যকায় তালেবানের সঙ্গে আহমেদ মাসুদ নেতৃত্বাধীন প্রতিরোধ যোদ্ধাদের তুমুল লড়াই চলছে। উভয়পক্ষের দাবি, গত কয়েক দিনের ওই লড়াইয়ে একে অপরের বহু যোদ্ধাকে হতাহত করেছে তারা।
কয়েকটি এলাকা দখলের দাবি করে তালেবান বলেছে, ন্যাশনাল রেজিট্যান্স ফ্রন্টের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু ফ্রন্টের দাবি, পাঞ্জশির তাদের দখলে আছে। সব প্রবেশদ্বার তারা রক্ষা করতে পেরেছে। তালেবান কয়েকশ যোদ্ধাকে হারিয়েছে।
তালেবানের মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, তাদের যোদ্ধারা পাঞ্জশিরে প্রবেশ করে কিছু ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ‘স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর আমরা অভিযান শুরু করেছি। তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
কিন্তু ন্যাশনাল রেজিট্যান্স ফ্রন্টের (এনআরএফ) এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, পাঞ্জশিরের সব গিরিপথ ও প্রবেশপথ তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে এবং উপত্যকার প্রবেশমুখের জেলা শোতুল দখলের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে তালেবানকে হটিয়ে দিয়েছে তারা।
পুরো আফগানিস্তানে শুধু পাঞ্জশির দখল করতে পারেনি তালেবান। সাবেক আফগান সেনা ও স্থানীয় কয়েক হাজার মিলিশিয়া তালেবানের সঙ্গে লড়াই করছে। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লা সালেহ’র অনুগত বাহিনীও এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে।
সময় জার্নাল/আরইউ