খোন্দকার মেহেদী হাসান :
মুরগী কিনতে গিয়ে মুরগীর ব্যাপারী আক্কাসের সাথে আমার মোবাইল বদল হয়ে গেলো। সকালে টাউন হল বাজারে গিয়েছি মুরগী কিনতে। বউ ফোনে তার চাহিদা বলছে, গলা ছোলা মুরগী কিনবা, সাতশ থেকে আটশ গ্রামের মধ্যে, মুরগী যেন বাড়িতে পালা হয়, মুরগির পায়ের মধ্যে ময়লা লেগে না থাকে, খবরদার মুরগীর কালার যেনো হলুদ না হয়।
আমার মাথা ঘুরে গেলো, আমি সোজা মুরগির ব্যাপারি আক্কাসকে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে বউকে বললাম, তুমি আক্কাসকে বুঝিয়ে অর্ডার দাও।
আক্কাস ফোন ধরে কথা বলতে লাগলো , ম্যাডাম আপনি টেনশন নিয়েন না, আপনার পছন্দ বলেন মুরগী আমি পাঠাইতেছি।
আমি একটু ঘুরে এসে আক্কাসকে বললাম, তুমি ম্যাডামের পছন্দ মতো ছয়টা মুরগী বাসায় পাঠায় দিও। আমি জরুরী কাজে নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছি।
আক্কাস তার পকেট থেকে আমার আই ফোন টেন বের করে দিয়ে বললো, স্যার টেনশন না নিয়ে আফনে কাজে যান, বাসায় মুরগী পৌঁছে যাবে।
তখনও কি জানতাম টেনশন কেবল শুরু।
নারায়ণগঞ্জের বাস যখন ফ্লাইওভার এর উপর তখন হটাৎ বাসের মধ্যে একটা মুরগী ডেকে উঠলো। ককক....ক্ব.....ক্ক্ব....
আমি এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলাম, কোন ব্যাটা এসি বাসে মুরগী নিয়ে উঠলো?
একটু খেয়াল করে দেখি আমার পকেট থেকেই শব্দ আসছে। আশেপাশের লোকজন আমার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকাচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি পকেট থেকে ফোন বের করে ধরলাম, হ্যালো?
--হ্যালো, মুরগী আক্কাস? আমি রিপন, ইকবাল রোড থেকে, চিনতে পারছো? আমার দশটা মুরগী লাগবে।
--না ভাই আমি রিপন নামে কাউকে চিনি না আর আমি মুরগী আক্কাসও না, আমার নাম মেহেদী, ব্যাংকে চাকরি করি তাই মুরগী পাঠানো সম্ভব হবে না। স্যারি। ভুল নম্বরে ফোন দিয়েছেন।
বলে ফোন রেখে দিলাম। ভাবছি আমার মোবাইলের রিংটোন বদলালো কে? এরমধ্যে আবার মোবাইল বাজলো, ককক,..... কক্ব.....কক্ব। তাকিয়ে দেখি স্ক্রীনে লেখা উঠছে 'জান মর্জিনা ' । আমি ফোন ধরলাম।
-- হ্যালো?
একটা মেয়ে বললো, হ্যলু। আক্কাস জান তুমি কি করো?
-- হ্যালো কে বলছেন?
মেয়েটা মুখ ঝামটা দিলো, আক্কাইচ্চা এতো ভাব নিতোছো ক্যান, কাইল রাইতে তুমার সাথে ফোনে গল্প করি নাই বইলা এতো ভাব নেয়ার কিছু নাইকা। আমার কি দাম কম আছে নি? মজনু ফুল নিয়া রেডি আছে কইলাম।
আমি ভীমড়ি খেয়ে ফোন রেখে দিলাম। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি স্ক্রীনে অনেক ইমো এপসের নোটিফিকেশন। কিছু ভয়ংকর রকম। এসকোর্ট সার্ভিসের ইমো বিজ্ঞাপন। আমি প্রমাদ গুনলাম। আমার তো ইমো এপস নাই, তাইলে? তাড়াতাড়ি ফোন খুলতে যেয়ে দেখি ফোন লক করা। আমি হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম।
আমার পাশে একটা কলেজ পড়ুয়া মেয়ে বসেছিল, সে দেখি কাউকে ফিসফিস করে ফোনে বলছে, আরে না, দেখলে ভদ্রলোকই মনে হয়। কিন্তু ব্যাটা মিচকে শয়তান। মোবাইলে উল্টো পাল্টা ছবি কায়দা করে দেখাচ্ছে আমাকে, উদ্দেশ্য খারাপ। কলার ধরে মাইর আরম্ভ করব কি না ভাবতেছি, তোরা কোথায়?
আমি একবার ঢোক গিলে দোয়া দুরুদ পড়া শুরু করলাম, লা হাওলা....
এরমধ্যে ফোন বাজলো, ককক.....কক্ব.....কক্ব
পিছনে এক বৃদ্ধ দম্পতি বসেছিলেন। বৃদ্ধ তার বউকে বললেন, দেখো রুচির কি চূড়ান্ত অধঃপতন। দেখতে লাগে ভদ্রলোক অথচ মোবাইলে মুরগির রিংটোন। দেখো খোঁজ নিয়ে আসলে মুরগির ব্যাপারির বংশ। খানদানি বংশ হইলে এমন হইত না।
আমি মনের দুঃখ চেপে ফোন ধরলাম।
--হ্যালো?
-- স্যার আমি আক্কাচ। আপনে ভুলে আমার ফোন নিয়ে গেছেন গা।
-- হারামজাদা। তুই আমার ফোন রাইখা তোর ফোন ধরায় দিছিস।
-- স্যার আপনার আমার ফোন একইরকম, তাই এই ভুল হইচে।
-- ওই তোরে আইফোন টেন কিনতে কে বলছে? আবার ফোন লক করে রাখছিস। আমার ফোন কিন্তু লক করা নাই, খবরদার ফোনের গ্যালারিতে ঢুকবি না।
--- স্যার আমি কমদামে চোরাই আই ফোন কিনছি। আপনি চিন্তা কইরেন না আপনার মোবাইলের উল্টোপাল্টা ছবি আমি দেখি নাই। আপনি তাড়াতাড়ি আসেন মোবাইল বদলায় নিয়ে যান।
বাস তখন কাঁচপুর ব্রীজের ভয়াবহ জ্যামে। আমি কি করব বুঝতে পারছি না, নেমে যাবো নাকি নারায়ণগঞ্জ যাবো।
এরমধ্যে হঠাৎ বাসে র্যাবের একটা দল উঠল। তাদের কমান্ডার বললো, আপনারা প্লিজ চুপকরে বসুন। আমাদের ডি আই জি স্যারের মোবাইল চুরি হয়েছে। আমরা অনেক কষ্টে ফোনের আইএমই নম্বর ট্র্যাক করে এখানে আসছি। আপনাদের কারো হাতেই ফোনটা আছে, হয়ত সেকেন্ড হ্যান্ড হিসাবে কিনেছেন, আসলে সেটা চোরাই ফোন।
তাদের একজন ফোন বের করে কল দিলো। আমার হাতের মোবাইল বেজে উঠল, ককক..... কক্ব
সাথে সাথে র্যাবের লোকজন আমাকে ঘিরে ফেললো। আমি শকড হয়ে গেলাম। এমনিতেই র্যাবের কালো ড্রেস দেখলে আমার ক্রস ফায়ারের কথা মনে হয়৷ এখন আমার সবকিছু গুলিয়ে গেলো।
র্যাবের কমান্ডার জিজ্ঞেস করলো, কি নাম আপনার?
আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলো,
--- মুরগী আক্কাস।
কমান্ডার সরু চোখে তাকালো। ইয়ার্কি করছি কিনা বোঝার চেষ্টা করছে। কি করেন?
--- মুরগী বিক্রি করি।
কমান্ডার সন্দেহের চোখে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো৷ এক র্যাব সদস্য তার কানেকানে বললো, স্যার অবাক হওয়ার কিছু নাই, টিকটকের যুগ, মুরগীর ব্যাপারীরাও আজকাল স্মার্ট হয়ে গেছে, অনেকে কোর্ট টাইও পরে।
আমি সাহস করে বললাম, দেখুন আমি সেকেন্ড হ্যান্ড ভেবে মোবাইলটা কিনছিলাম, ভুল হয়েছে আপনারা মোবাইলটা নিয়ে যেতে পারেন।
কমান্ডার কিছুক্ষণ দ্বিধায় ভুগে মোবাইল নিয়ে চলে যাচ্ছিলো। এক র্যাব আমাকে ফিসফিস করে বললো, বাইচে গেলেন, স্যারের মরহুম আব্বার নাম ছিলো আক্কাস।
এই সময় মোবাইল বেজে উঠল, ককক....ক্ক্ব...,.। র্যাব কমান্ডার ফোন ধরে বলল, হ্যালো।
--- স্যার আমি আক্কাস। ফোনডা নিয়ে শীগগির আসেন। আমারে কাস্টমার খুজতেছে। মুরগীর ব্যাবসা তো লাটে উঠব।
কমান্ডার এবার ঘোর সন্দেহের চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। তাকে কি বলি এখন?