বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

আপেক্ষিক তত্ত্ব এবং স্টিফেন হকিংয়ের কিছু ব্যাখ্যা

বুধবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২১
আপেক্ষিক তত্ত্ব এবং স্টিফেন হকিংয়ের কিছু ব্যাখ্যা

ডা. মোহাম্মদ নেয়ামত হোসেন :

HSC তে আপেক্ষিক তত্ত্ব ছিল। কিন্তু তখন পড়তে ইচ্ছা করেনি।, 

শুধু নিজে নিজে বুঝতাম, পৃথিবীর কোনকিছুই ধ্রুব (অপরিবর্তনীয়) নয় - একটা অন্যের সাথে তুলনায় আপেক্ষিক। 

উদাহরণ হিসাবে বুঝতাম - পৃথিবী/সূর্য্য এমনিতে দেখলে স্থির মনে হয়। কিন্তু পৃথিবী সূর্যের সাথে তুলনা করলে, সবসময় ঘুরছে। আবার সূর্য্যও অন্য তারার সাথে তুলনা করলে, একটি আর একটি থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। 

হয়তো সেই ধারণা (আপেক্ষিক তত্ত্ব মতে) ভুল ছিল, অথবা সঠিক তা এখন আলোচনার বিষয় নয়।

আমার সবচেয়ে পছন্দের এবং সেরা বিজ্ঞানী ছিল নিউটন। পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত কোথায় নেই নিউটন?? সব জায়গায় একজনকে পাওয়াই যেত, সে নিউটন!!

এক সময় স্টিফেন হকিংয়ের বিগ ব্যাং থিওরী এবং ব্লাক হোল বই দুটি পড়লাম।

সেখানে স্টিফেন হকিং, নিউটনকে সরাসরি চোর বলে সম্মোধন করায়, অবাক হলাম!! 

আরও অবাক হলাম, তার মতে নিউটন নয় - আইনস্টাইন হলো সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী। তখনই প্রথম আপেক্ষিক তত্ত্ব পড়ার ইচ্ছা জাগলো!! 

কি আছে আপেক্ষিক তত্ত্বে?? যা আইনস্টাইনকে সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী করেছে!!!

শেষে HSC পদার্থ বিজ্ঞান বই জোগাড় করলাম।

প্রথমে আস্তে আস্তে পড়তে শুরু করলাম। বুঝতে অসুবিধা হওয়ায়, আরও কিছু বই পড়লাম। 

পড়া শেষে অবাক হলাম - আইনস্টাইনের মাথায় আপেক্ষিক তত্ত্বের মত বিষয় আসলো কি ভাবে?? 

এই ধরনের বিষয়বস্তু কখনোই কোন মানুষের চিন্তা করা সম্ভব নয় (সে যত জ্ঞানীই হউক না কেন)।

খুউব সংক্ষিপ্ত ভাবে, সহজে আপেক্ষিক তত্ত্ব বর্ণনা করতে চাই ---- যা আমি বুঝেছি....

নিউটনের গতিসূত্র ছিল, স্থির বস্তু নিয়ে। অর্থাৎ একটা গাড়ি স্থির অবস্থা থেকে যদি বল প্রয়োগ করা হয় --- তাহলে যা যা ঘটতে পারে, তাই নিউটনের গতির তিনটি সূত্র।

আর আইনস্টাইন চিন্তা করেছে, গতিশীল বস্তু নিয়ে। যেমন অনেক দ্রুত গতিতে কোন রকেট/যান চললে - তার ভিতরের কোন বস্তুর, কি কি ঘটতে পারে??

এই অভাবনীয় চিন্তা থেকেই, আবিস্কার হয়েছে এটম বোম বা ভবিষ্যতে যাওয়ার থিওরী। 

আমরা সবাই জানি- কোন কিছুর ভর, দৈর্ঘ্য এবং সময় ধ্রুব।

এর অর্থ -- কোন কিছুর ভর (ওজন কিন্তু নয়) বাংলাদেশ/আমেরিকা বা রাশিয়া সব সময় একই থাকবে। যেমন এক কেজি আমের ভর সব জায়গায় এক কেজি।

আবার সময়ও সব জায়গায় একই। অর্থাৎ বাংলাদেশ/আমেরিকা সব জায়গাই ৬০ সেকেন্ড সমান হবে। এমন না যে, বাংলাদেশে ৬০ সেকেন্ড হলে, আমেরিকার হবে ৫৯ সেকেন্ড।

ঠিক তেমনই, কোন কিছুর দৈর্ঘ্য ১ ফুট হলে সব জায়গায় এক ফুটই হবে।

আইনস্টাইন চিন্তা করেছে, এইসবই স্থির অবস্থায় হয়তো সত্য - কিন্তু গতিশীল অবস্থায় এইসব একক (ভর, দৈর্ঘ্য, সময়) কি একই থাকবে??

এখানেই এসেছে আপেক্ষিক তত্ত্ব।

তিনি প্রমাণ করেছেন - গতিশীল অবস্থায়, এরাও পরিবর্তনশীল। সহজ  কথায় - গতিশীল অবস্থায় বস্তুর ভর বেড়ে যায়, সময় ধীর (slow) হয় এবং দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন হয়।

#এবার_আসি_উদাহরণেঃ

১) #ভরঃ কোন বস্তু যদি আলোর গতিতে চলে, তাহলে তার ভর অসীম হয়ে যায় (E=mC2)। মানে যত গতি বাড়বে সেই বস্তুর ভর ততই বাড়বে। ধরুন এক কেজির একটা লোহার দন্ডের ৫০০০ কি.মি./সেকেন্ডে চলমান রকেটে বসে ভর মাপছেন। সেক্ষেত্রে ঐ লোহার দন্ডের ভর এক কেজি থেকে মাপে বেশী পাবেন। আর এই গতি যদি আলোর বেগের কাছাকাছি হয়, তাহলে ভর হবে অসীম। মানে এর ভর এতো বেশী হবে যে, তা মাপতেও পারবেন না।

বাস্তবে আছে এটম বোম। এটা কিভাবে কাজ করে??

ইউরেনিয়ামকে (যেকোন আইসোটোপ) চারদিক দিয়ে TNT দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপর এই TNT কে বিস্ফোরিত করা হয়। ফলে ইউরেনিয়ামের পরমাণুগুলি প্রচন্ড গতি পায়। ফলে এই পরমাণুর ভর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায় এবং তা অনেকটা জায়গা ধ্বংস করে ফেলে।

২) #সময়ঃ পৃথিবীতে বসে যদি ঘড়িতে সময় ১০ সেকেন্ড হয়। গতিশীল বস্তুতে (যেমন - রকেট) বসে সময় দেখলে, হয়তো সেই একই সময়ে ৮ সেকেন্ড হবে। ফলে আপনি যদি অত্যন্ত দ্রুত গতির কোন যানে চড়ে মহাবিশ্বে এক বৎসর ঘুরে আসেন। সেই একই সময়ে, পৃথিবীতে হয়তো এসে দেখবেন ১০০ বৎসর হয়ে গেছে। অথচ আপনি মাত্র ১ বৎসর সময় ব্যয় করেছেন। এখান থেকেই এসেছে, আপনি চাইলে Time travel করতে পারবেন। অর্থাৎ ভবিষ্যতে যেতে পারবেন, তবে অতীতে নয়। অতি দ্রুত গতির একটা যান বানাতে পারলে, হয়তো মানুষ ভবিষ্যতে ঘুরতে পারবে।

বাস্তবে এখনই এর ব্যবহার আছে। আমাদের Google যে location দেখায়! হয়তো আমি এখন ফরিদপুর, সেটা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে দেখায় Location - Faridpur. পৃথিবীর আকাশে তিনটি উপগ্রহ মিলে এই location দেখায়। এই উপগ্রহ গুলি পৃথিবীর আহ্নিকগতির (পৃথিবী নিজের অক্ষে যে গতিতে ঘুরে) সমান গতিশীল। ফলে মনে হয়, এগুলো স্থির হয়ে আকাশে ভাসছে। গতিশীল হওয়ার জন্য উপগ্রহে পৃথিবীর তুলনায় সময় ধীরে চলে (সময়ের পার্থক্য খুউবই সামান্য, যেহেতু আলোর সাথে তুলনা করলে উপগ্রহের গতি অনেক কম)। 

ফলে প্রতিদিন এই সময়, পৃথিবীর ঘড়ির সাথে মিলিয়ে ঠিক করতে হয়। যদি এই সময় ঠিক না করতো, তাহলে একদিনের সময়ের ধীরগতির জন্য, আপনাকে আপনার নিজের Location থেকে ২৫ কি.মি. দূরে দেখাতো। অর্থাৎ ফরিদপুরের জায়গায়, হয়তো গোয়ালন্দ দেখাতো!

৩) #দৈর্ঘ্যঃ পৃথিবীতে কোন বস্তুর দৈর্ঘ্য যদি ১ ফুট হয়, তবে গতিশীল অবস্থায় (রকেটে), ঐ বস্তুর দৈর্ঘ্য কমে যাবে। অর্থাৎ যত গতিশীল হবে ততই দৈর্ঘ্যে ছোট হবে। পৃথিবীতে ১ ফুট হলে - রকেটে হয়তো দৈর্ঘ্য মাপলে ১১ ইঞ্চি পাবেন।

উপরের বর্ণনা থেকে বুঝতে পারলাম, যাদেরকে আমরা ধ্রুব মনে করি, সেইসব কিছুও ধ্রুব নয়।

এধরণের চিন্তা ভাবনা আইনস্টাইনের মত লোকের দ্বারাই সম্ভব। 

আর তাই তিনি, সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী!

#ভবিষ্যতে_যাওয়া_নিয়ে_স্টিফেন_হকিংয়ের_ব্যাখাঃ

১) স্টিফেন হকিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে বসে আছেন। অপেক্ষা করছেন - ভবিষ্যৎ থেকে কিছু লোক এসে, তাঁর সাথে বসে খাবার খাবেন। 

অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও কেউ আসলেন না। এই দ্বারা প্রমাণিত হয় - মানুষ কখনো অতীতে যেতে পারবে না। যদি যেতে পারতো, তাহলে নিশ্চয়ই কেউ না কেউ, ভবিষ্যৎ থেকে এসে স্টিফেন হকিংয়ের সাথে সেদিন খাবার খেতো। তার অর্থ, কেউ যদি ভবিষ্যৎ থেকে তার সাথে এসে খাবার খেতেন, সেই লোকের (ভবিষ্যতের ব্যক্তির) জন্য তা অতীতে আসা হতো।

ফলে বলা যায় -------

#অতীতে_যাওয়া_মানুষের_পক্ষে_সম্ভব_নয়

আপেক্ষিক তত্ত্বে আমরা জেনেছি, দ্রুত গতির কোন যানবাহনে সময় ধীরে চলে।
তার ফলে - মানুষ #ভবিষ্যতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে!

#কি_ভাবে_সম্ভব? 

#স্টিফেন_হকিংয়ের_ব্যাখাঃ

১) এমন কোন দ্রুতগতির মহাকাশ যান তৈরী করা হলো, যাহার অনেকগুলি পার্ট থাকলো - এখন যেমন রকেট! এর একেকটা পার্ট রকেটের গতি বাড়িয়ে দিয়ে, জ্বালানি শেষ হওয়ায় খসে পরে। 

তেমনই একটি অতি বড় যান তৈরী করা হলো, যে যানের থাকবে অসংখ্য জ্বালানির Compartment. 

একটি গতি বাড়িয়ে দিয়ে, নিঃশেষ হয়ে যাবে - তখন আরেকটি compartment সেই দায়িত্ব নিবে। 

এভাবে একসময় সেই মহাকাশ যান, অতি দ্রুত গতি পেলো এবং সেই যানে করে মানুষ মহাকাশে কয়েক বছর ঘুরে আসলো।

এসে দেখলো - পৃথিবীতে হয়তো কয়েক শত বছর হয়ে গেছে।

ফলে সেই অতিদ্রুত মহাকাশ যানের মানুষগুলো কয়েক শত বছর ভবিষ্যতে চলে যাবে।

২) অথবা পৃথিবীতেই, পৃথিবীর চারপাশ ঘিরে একটি টানেল/রাস্তা তৈরী করা হলো। সেই রাস্তায় এমন কোন অতি দ্রুত গতির যান, সারা পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে থাকলো। 

হয়তো সেই যান বাধাহীন ভাবে চলার জন্য অতি দ্রুত গতি লাভ করলো (এখনই কিছু চুম্বকে চলে এমন ট্রেন আছে, যার ঘর্ষণ বল থাকে না বললেই চলে)। আজ হয়তো অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে, কিন্তু ভবিষ্যতে কি হবে, কেউ জানি না!
ফলে সেই যানে, কিছু মানুষ কয়েক বছর ধরে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে থাকলো। তারপর সেই যান থেকে নেমে দেখলো, এরই মধ্যে পৃথিবীতে কয়েক শত বছর হয়ে গেছে।

তারমানে আপনি হয়তো ২২০০ সালে সেই যানে উঠলেন। যানে দশ বছর কাটানোর পর, যান থেকে নেমে দেখলেন, পৃথিবীতে তখন ২৫০০ সাল চলছে। 

এই ভবিষ্যতে কত বছর যেতে পারবেন, তা নির্ভর করবে আপনার যানের গতির উপর। যদি যানের গতি আলোর কাছাকাছি হয়, তাহলে বেশী ভবিষ্যতে যেতে পারবেন। আর গতি কম হলে, খুউব বেশী ভবিষ্যতে যেতে পারবেন না।

এখানে যানের ১০ বছর কাটানো = পৃথিবীর ৩০০ বছর।

অর্থাৎ আপনার যান থেকে নেমে, যেখানে পৃথিবীর ২২১০ সাল দেখার কথা, সেখানে নেমে দেখলেন তখন পৃথিবীতে ২৫০০ সাল চলছে।

এই অতিরিক্ত ২৯০ বছর, আপনি ভবিষ্যতে গেলেন।

সেদিনের অপেক্ষায় থাকলাম.......

#মিরাজ_এবং_আপেক্ষিক_তত্ত্বঃ

মিরাজ পুরো উল্টো ঘটনা। যেখানে হযরত মোহাম্মদ (সঃ), অতিদ্রুত গতির বোরাকে চড়ে আল্লাহর কাছে গিয়েছিলেন। আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে, উনার ঘুরে এসে দেখা উচিৎ ছিল - পৃথিবীতে অনেকগুলো বছর (অতীত) হয়ে গেছে! অথচ তিনি মাত্র কয়েকটি দিন ঘুরে আসলেন। 

বাস্তবে হয়েছিল, মোহাম্মদ (সঃ), এসে দেখলেন - যে বদনার পানি দিয়ে ওজু করছিলেন, সেখান থেকে তখনও পানি গড়িয়ে পড়ছে। 

এর ব্যাখা আল্লাহ'ই দিতে পারবেন।

কোন কিছুর গতি সর্বোচ্চ আলোর গতির সমান হতে পারে। এর থেকে আরও বেশী গতি, কোন যানের সম্ভব নয়। হয়তো বোরাকের গতি আরও বেশী ছিল, তাই কোন সূত্র মানে নাই। 

এটা আমার ব্যক্তিগত অনুমান।

লেখক : 

সহকারী অধ্যাপক, নিওনেটোলজী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর। 



Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল