নিজস্ব প্রতিবেদক। সময় জার্নাল : রাজধানী ঢাকার উত্তরায় শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হোস্টেল থেকে আবির হোসেন খান (১৩) নামের এক শিক্ষার্থী মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর সড়কের ১৫ নম্বর বাড়ির ওই কলেজের হোস্টেলের অষ্টম তলা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া আবির ওই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র।
জানা গেছে, নিহত ওই ছাত্র টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার মো. ফজলুর রহমান ও আবিদা সুলাতানার ছেলে। বর্তমানে তিনি পরিবারের সঙ্গে নবাবগঞ্জে বসবাস করতেন। সেই সঙ্গে কলেজের হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করতেন। করোনা মহামারির পর রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হওয়ায় তার বাবা ফজুলর রহমান শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তাকে কলেজের হোস্টেলে দিয়ে যায়।
নিহত আবিরের খালা রাবেয়া সুলতানা খান বলেন, ‘আবির তার বাবা-মার সঙ্গে নবাবগঞ্জে থাকে। কিন্তু কলেজের হোস্টেলে থেকেই লেখাপড়া করত। স্কুল কলেজে খুলে ফেলায় শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আবিরের বাবা আবিরকে কলেজের হোস্টেলে রেখে গিয়েছিল। তার বাবা বাসার পৌঁছানোর পূর্বে সন্ধ্যার থেকে কলেজ থেকে তাঁকে ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু বাসে থাকায় তিনি টের পাননি। পরে তিনি ফিরতি কল করলে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়-আবির অসুস্থ। তাই তাঁকে আসতে হবে। পরে আবিরের বাবা তার মা'কে বিষয়টি জানালে তিনি আমাকে ফোন দেন। কারণ আমি ওই কলেজের পাশেই থাকি।’
তিনি বলেন, ‘ফোন পেয়ে দৌড়ে শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যাই। গিয়ে দেখি কলেজের দুজন পরিচালক নিচে কথা বলছেন। তাদের কাছে আবিরের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, আবির গলায় গামছা পেঁচিয়েছিল। পরে তাকে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তখন আমি পরিচালকদের বলি-তাহলে আপনারা কেন হাসপাতালে যাননি? উত্তরে তারা জানান, আমরাও যাচ্ছি। পরে তারাও আমার পিছু পিছু হাসপাতালে যান।’
হাসপাতালের গিয়ে দেখি, ‘জরুরি বিভাগের সামনেই আবিরের মরদেহ সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জানিয়েছে-হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই আবিরের মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তীতে আবিরের বাবা হাসপাতালে এসে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে বিষয়টি জানালে থানা-পুলিশ হাসপাতালে এসে আবিরের মরদেহ উদ্ধার করে।’
এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) লাল মিয়া বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আবির হোস্টেলের জানালার সঙ্গে গামছা পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে জানতে পেরেছি। এ ঘটনয় তার বাবা ফজলুর বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। ওই ছাত্রের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
তার শরীর কোন আঘাতের চিহ্ন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি আবির আত্মহত্যা করেছে। বাকিটা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে বলা যাবে।’ কিন্তু কী কারণে আবির আত্মহত্যা করে থাকতে পারে তাও জানাতে পারেননি তিনি।
অপরদিকে শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ বকুল মিয়ার সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এদিকে আবিরের খালা রাবেয়া সুলতানার দাবি, এটি কোনোভাবেই আত্মহত্যা হতে পারে না। কারণ আবিরের মরদেহ হোস্টেলের বিছানার ওপরে ছিল। উদ্ধারকালে আবিরের দুই পা হাঁটুগাড়া অবস্থায় ছিল। এভাবে কেউ আত্মহত্যা করতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘আবিরকে যখন হোস্টেলে দিয়ে যাওয়া হয়, তখন তিনি হোস্টেল কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করেছিল- কতজন ছাত্র এসেছে?’ উত্তরে তারা জানিয়েছে, ‘৭/ ৮ জন ছাত্র এসেছে। তখন আবিরকে তার বাবা একশত পনেরো টাকা দিয়ে এসেছিল।’ তার দাবি, আমি ধারণা করছি- আবিরের কাছে বেশি টাকা আছে বলে মনে করে তা নেওয়ার জন্য ছাত্ররাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’
সময় জার্নাল/আরইউ