গৃহত্যাগী জোছনার রাত,
আজ আমার ঘরে ফেরার কোনো তাড়া নেই।
আজকাল এমন সব রাতে আমি চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতে পাই--
ঘর ছেড়েছে সিদ্ধার্থ,
অবাক জোছনার রাতে আকাশে মেলে দিয়েছে তার রক্তাভ ডানা,
চোখে তার দারুচিনি দ্বীপের মোহ-মুগ্ধতার ঝিলিক,
বুকে আঁকা ঘাঙুর, রাই, ইরাবতী--অবুঝ নদীর বর্নমালা।
যশোধরা কেঁদে ফিরে বুকে নিয়ে তার অবুঝ রাহুল।
আমার স্ত্রীর বুকেও অঘোরে ঘুমায় আমার অমৃতের সন্তান
বোধিবৃক্ষের নীচের অন্ধকার এসে গ্রাস করে সিদ্ধার্থের মতো আমার একটা গোটা জীবন।
মাঝে মাঝে ভয় জাগে মনে,
অন্য আঙিনায় সিদ্ধার্থ বেঁচে থাকে,
ধ্যানে-জ্ঞানে-কামনায় তার জোছনার মায়াজাল।
তোমরাই বলো আমি বাঁচবো কার আঙিনায়?
কার ছায়া, কার কায়া ঢেকে দেয় উই-ঘুণেদের সংসার?
আবার একসময় যুগের অতলে হারিয়ে গিয়ে ফিরে আসে যশোধরার প্রেমিক প্রবর।
অথচ নগন্য আমি হারিয়ে গেলে কেউ খুঁজে পাবেনা,
কেউ খুঁজবেনা।
একটা উদাস আকাশ কেবল জোছনার ঢালি সাজিয়ে খুঁজে ফেরে তার অমৃতের সন্তান,
তার কাছে সিদ্ধার্থ আর আমি একই সমান।
মীনাক্ষী, বেহুলা, বানেছের কাছে ভালোবাসার পাঠ শেখে যশোধরা,
মমতার সবটুকু রাঙতায় মুড়ে রেখে দেয় কনক প্রদীপের তলে;
তবু ঘরে ফিরেনা সিদ্ধার্থ-
জ্যোতিষ কোষ্ঠীর কাছে মিছে হয়ে যায় তাম্রশাসন, অবছায়া হয় কালের শিলার লিখন,
যশোধরার বিষন্ন চোখের কালিমা জমাট অন্ধকারের মতো গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়,
তবুও ফেরেনা সিদ্ধার্থ- ফিরেনা তার চিরচেনা আঙিনায়।
সিদ্ধার্থ জানে এই সংসারে সে ফিরবেনা আর,
তবুও কেনো সে গোপনে আমাকে ডাকে সংসার ত্যাগ করে তার সঙ্গী হতে!
একসময় ঘোর কেটে যায়,
জোছনার দিকে চেয়ে থেকে
বুকের ভিতর সন্ন্যাসের তীব্র ডাক টের পাই।
জানি একদিন আমিও গোপনে গৃহত্যাগী হবো সিদ্ধার্থের মতো
--ফিরবো না কোনো আঙিনায়, আমার চিরচেনা কোনো আঙিনায়।
শুধু অপেক্ষা এক গৃহত্যাগী জোছনার।