সি এন জি যখন প্রায় গ্রামের কাছাকাছি চলে এলো তখন মা ফোন দিয়ে বলল,
- তোরা কয় কেজি মিষ্টি কিনেছিস?
আমি জিনিসপত্র ধরে বসেছিলাম তার উপর মায়া ঘুমাচ্ছিলো কাঁধে, ভীষণ বিরক্ত লাগছিলো তাই কিছুটা বিরক্ত সুরেই বললাম,
- মিষ্টি কেন আনবো? বিয়ে হয়েছে চৌদ্দ বছর, এখনো মিষ্টি নিয়ে যেতে হবে নাকি?
আমার কথায় ড্রাইভারের পাশে সামনে বসা রাতুল ফিরে তাকালো।
আমার বিরক্তির কোন পাত্তায় না দিয়ে মা এক নাগারে বলে যেতে লাগলো,
- সুস্মিতারা ছয় কেজি মিষ্টি এনেছে, তোর বড় মার সে কি দেমাগ, তোরাও নিয়ে আয় ছয় কেজি।
আমি এইবার আহত গলায় বললাম।
-মা আমরা ফ্রুটস নিয়েছি, আর চলে আসছি তো প্রায়। আগে বলতে, আর সবাই মিষ্টি নিলে এত মিষ্টি খাবে কে?
- যা বলছি তা কর। কে খাবে তা তোর দেখার দরকার নেই। এইখানের গ্রামের বাজার থেকে নেয় তাহলে।
আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মা ফোন কেটে দেয়, আমি আমতা আমতা করে রাতুল কে বললাম,
মা মিষ্টি নিতে বলছে।
রাতুল মাথা নেড়ে সায় দেয়, গাড়ি থামিয়ে দুই কেজি মিষ্টি নিয়ে আসে। আমার মন খারাপ হয়ে গেল, জানি যাওয়ার সাথে সাথেই মা কথা শোনাবে। যেগুলো বিয়ের পর কোন মেয়েই শুনতে ভালো লাগে না।
অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও মা বাবার পছন্দে বিয়ে। রাতুল খুব ভালো। কোন খারাপ অভ্যাস নেই ওর। খুব সংসারী আর শান্ত। তাই ওর সাথে নিজেকে মিলিয়ে নেওয়া খুব একটা কঠিন কাজ না। তিন টা ছেলে মেয়ের পর সংসারটা নিজের না হয়ে কি পারে?
রাতুল একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে৷ বেতন খুব একটা খারাপ না। আমাদের কোন কিছুতে অভাব নেই। বাসা ভাড়া, বাচ্চাদের পড়ালেখার, মাসের বাজার, মা বাবার ওষুধ খরচ, নিজেদের ছোট্ট ডিপিএস সব ঠিকঠাক মিটিয়ে অতিরিক্ত শৌখিনতা করা হয় না। প্রতি মাসে দামী দামী শাড়ি জামা নিজে কিনতে পারি না। কিংবা অন্যদের গিফট দিতে পারি না। ঘুরতে যাওয়া হয় না, বড় বড় রেস্টুরেন্টে আধ পেটে খেয়ে বড় বড় বিল দেওয়া হয় না।
কিন্তু ভালো থেকে দেখে আনা লাল তরমুজ টা কাটার সময় রাতুলের তদারকি বা ছুটির দিনে খিচুড়ি বানানোর সময় ওর পাশে দাঁড়িয়ে তদারকিতে আমি খুশি। সব সিদ্ধান্তের আগে আমার সাথে আলোচনা করাতে আমি সুখী। আমরা আমাদের নিত্য জীবনে সুখী।
সমস্যা হয় যখন বাড়তি কোন অনুষ্ঠান পড়ে বিশেষ করে আমার বাপের বাড়িতে। এইখানে প্রয়োজনের তুলনায় শো-অফ বেশি চলে, কে কত বেশি দিচ্ছে? আনছে,? করছে? মায়েদের মধ্যে মেয়ের শ্বশুর বাড়ি আর জামাইর বেতন নিয়েও চলে এইসব। যেটার প্রথম খেলোয়াড় আমার মা।
আমার মা আমাদের অনেক ভালোবাসে। যে কোন বিপদে প্রথমে ছুটে আসে মা। সারাজীবন আগলিয়ে রেখেছে আমাদের। কিন্তু এখন যখন এইসব প্রতিযোগিতায় মা আমাকে বা রাতুল কে বড় করতে যায় তখন পড়ি অস্বস্তিতে আর বিপাকে। তাই রাতুলের কাছে একটা আতংকের মতো এইসব। দশ বারো হাজার টাকার এক্সট্রা ধাক্কা। তারপরও সেসব করার চেষ্টা করে ওর সাধ্য মতো। কিন্তু তাও মাকে সন্তুষ্ট করা যায় না কোন মতে। ঠিকই আমাকে একা পেলে জামাইয়ের অপারগতার ফর্দ শুনিয়ে দেবে। যেটা কোন মেয়েই সহ্য করতে পারে না। আবার মায়ের মুখের উপর জামাইয়ের পক্ষ নিয়েও বলতে পারে না।
আমরা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর সাথে সাথেই মা এসে মায়াকে কোলে নেয়। আস্তে করে বলে, কয় কেজি এনেছিস মিষ্টি?
আমি গাড়ি থেকে জিনিসপত্র নামাতে নামাতে বলি,
- দুই কেজি,আর ছিলো না দোকানে, তোমাদের জামাই দেখেছিলো, আর ফ্রুটস এনেছি।
মা খুশি হয় নি। মুখ কালো করে ফিসফিসিয়ে বলে, সুস্মিতারা তো ছয় কেজি এনেছে সাথে আরো কত কিছু আর তোরা -, আচ্ছা থাক বাদ দে।
মা বাদ দিতে বলে নিজেই হুল ফুটিয়ে চলে যায়।
- মা সুস্মিতা দিদিরা তো বাইরের দেশে থাকে, বছরে একবার আসে, আমি তো প্রায়ই আসি। তুমি ওদের সাথে আমার তুলনা করলে তো পারবে না।৷
মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, আমার কপালটাই খারাপ আর কি। সারাজীবন করেই যাই,পাই না কিছু।
ব্যাগ নিয়ে বাড়ির দিকে যাওয়া সময় রাতুলের কানে গেলে সে শোনও না শোনার ভান করে দ্রুত পা চালালো।
কাল দাদু ঠাম্মির বার্ষিকী। প্রতি বছর বড় ধুমধামে হয় এইটা। ধর্মের রক্ষা হোক না হোক, প্রতিবছর নিজেদের সাধ্যের বাইরে লোক দেখানো কাজ করে নিজেদের স্ট্যাটাস দেখাতে মরিয়া সবাই এই অনুষ্ঠানে। দোষ কারো নেই। এইটাই একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে এই যুগে।
বাবারা চার ভাই। আমার বাবা মেজ, বড় বাবার একটা মেয়ে একটা ছেলে, দুইজনেই বিদেশে থাকে। আমরা দুই ভাই এক বোন। ভাইয়েরা এখনো বিয়ে করে নি। সেজ কাকুর দুই মেয়ে এখনো ছোট। ছোট কাকুর একটাই ছেলে এখনো।
সবার সাথে সবার প্রতিযোগিতা, বড় স্কুলের পড়ালেখা, রেজাল্ট। বড় দিদি আর ভাইয়ের সাথে আমার প্রতিযোগিতা টা চিরকালের। আমরা কেউ এইসব নিয়ে না ভাবলেও মায়েদের এইসব নিয়ে কথা, খোটায় কথা বলা বড় চিরন্তন। সারাজীবন এইসব সহ্য করেছি, তাই নিজের ছেলে মেয়েকে নিয়ে এইসব প্রতিযোগিতা করি না আমি।
ঘরে ঢুকতেই সবাই মেতে উঠলাম হাসি ঠাট্টা মজায়। কে কি আনলো কি আনলো না তা নিয়ে এখন কারোই মাথা ব্যাথা নেই। আদর যত্নে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও তা পাত্তা না দিলে তেমন কিছু না। আর দিলে অনেক কিছু।
সুস্মিতা দিদির জামাই নিজের মধ্যে থাকে কারো সাথে খুব একটা কথা বলে না। তার তুলনায় রাতুল সবার সাথে কথা বলে, বিভিন্ন সিদ্ধান্তে কথা বলে কাজে সাহায্য করে।
কিন্তু মায়ের তাতেও সমস্যা এইটা নাকি দুর্বলতা রাতুলের।
বাচ্চাদের কাপড় চোপড় পাল্টে দিয়ে নিজেও ভালো ভাজ করে আলমারীতে সারাবছর তুলে রাখা এমন একটা জামা পরলে মা আবার বলে উঠে,
- তুই নতুন জামা আনতে পারিস নি? সুস্মিতাকে দেখ এক জামা দ্বিতীয় বার দেখি না। এইটা তো গত বছরও পরেছিস। আর বাচ্চাদের জন্য আরো ভালো কাপড় আনতি।
আমি কিছুটা নরম সুরেই বলি,
-ঠিকই তো আছে ওদের কাপড়, এখন দৌড়াদৌড়ি করবে, নষ্ট করে ফেলবে। আর আমি জামা তো কিনি না। শাড়ি এনেছি নতুন। দেখবে?
আমি যত উৎসাহ নিয়ে দেখাই না কেন মা বেশ বিরক্ত মুখেই বলে,
-কাতান বা মসলিন এমন কিছু কিনতে পারিস না? সুস্মিতা তোর বড় মা কে আর আমাকে জামদানী দিয়েছে। তুই তো দিস না কাউকে কিছু।
কথাটা আবারো হুলের মতোই ফুটে। সুস্মিতা দিদি রুমে এসে তখন আমার আনা শাড়ির বেশ প্রশংসা করলেও বড় মা মুখে আলতো ব্যঙ্গ হাসি দিয়ে তাকিয়ে থাকে।
সুস্মিতা দিদির ভারী শরীরে দামী শাড়ির চেয়ে আমার রুচিসম্মত শাড়িতে আমাকে সুন্দর লাগছে এইটা সবাই বললে তখন মা খুশি হয়ে যায়। বলে উঠে আমার মেয়ে তো। মায়েরা এমনেই হয়।
আমার খুশি হওয়ার কথা, তবে আজীবনের মতো আমি এই প্রতিযোগিতার গুটি হয়েও খুশি হতে পারি না।
সবাই একসাথে বসলে সবাই আমাদের অবস্থা জানা শর্তেও বার বার জিজ্ঞেস করে,
-ভাড়া বাসা নাকি নিজেদের ফ্ল্যাট? নিজের একটা গাড়ি না থাকলে চলা যায় আজকালকার যুগে?
রাতুল হাসি মুখে উত্তর দিতে দিতে এক সময় চুপ হয়ে যায়, মুখ কালো করে ফেলে যখন সবাই বাড়িয়ে চড়িয়ে তাদের ব্যাংক লোন আর আভিজাত্য টানা হিঁচড়ে করে৷
তখন মা আবার বলে উঠে, রাতুল নাকি অসামাজিক।
মা তার আড্ডার আসরে বাড়িয়ে চড়িয়ে আমার কথা বললেও, শ্বশুর,-শাশুড়ীর সেবা করতে করতে জীবন শেষ করব এই বলে বাহবা নিতে ভুলে না। তার উপর যোগ হবে আরো কিছু কথা রাতুলের মা বাবা কে নিয়ে। সুস্মিতা দিদির এই ঝামেলা নেই। যেন এইটা একটা জয় ওর।
আবার মা যে তার মেয়েকে ঘর ভাঙ্গার কুশিক্ষা দেয় না, সবাইকে নিয়ে থাকার শিক্ষা দিয়েছে এইটার জন্য বাহবা নিতে ভুলে না। বড়মা ও কম না। যেন পাল্লা সমান করা অত্যাবশ্যকীয়।
এই ক্ষেত্রে আমি শ্বশুড় বাড়ির বিপক্ষে বললে সবাই ধরে নেয়, অসুখী আমি। আবার পক্ষে কথা বললে,ভালো ভালো কথা বললেও মুখ টিপে হেসে বলে আধিখ্যেতা। বিয়ে হওয়ার পর সুখী হওয়াও যেন একটা অপরাধ। রসালো কোন টপিক খুঁজে না পেলে তুমি ইউজলেস!
যাওয়ার দিন সুস্মিতা দিদি বলল,
- মিরা আগামী বার এলে তোর বাসায় ঘুরে আসবো৷ যাওয়া হয়নি কোন দিন।
আমিও সায় দিই, অবশ্যই এসো।
মা তখন উঠে পড়ে লাগে, পরে যাবে কেন? আজই চল। সময় তো আছে। রাতে খেয়ে দেয়ে চলে যাবে।
আমি হাসি মুখে আলতো করে সায় দিলেও ভেতরে কেঁপে উঠি, একে তো মাসের শেষ। তার উপর বাজার কিচ্ছু নেই। মা বাবাকে ডিম রান্না করে দিয়ে এসেছিলাম দুইদিনের জন্য। হাতে যা টাকা থাকে তা এইখানে এসে শেষ।
সুস্মিতা দিদিকে বড়মা হাতে চাপ দেয় সায় দেওয়ার জন্য। যেন উনিও দেখতে চায় কেমন আপ্যায়ন করতে পারি আমি। সার্মথ্য কত আমার!
রাতুল কে আস্তে করে বলায়, ওর মনেও একই ভয় কাজ করলেও আমাকে বুঝতে দেয় না। হেসে বলে, যাবে আর কি। তুমি রান্না করতে পারলে বাজার এনে দেব। সমস্যা নেই।
আমি জিজ্ঞেস করতে গিয়ে যেন পারলাম না, হাতে কি টাকা আছে? হাসি মুখে সায় দিলেও ভেতরে ভেতরে মনটা খচখচ করছে। মাকে মাসের শেষ বলায় মা খেকিয়ে উঠে,
-ওরা কি তোর কাছে প্রতিদিন যাচ্ছে? এখন সময় সুযোগ হয়েছে। তাই যাচ্ছে। ভালো আইটেম করতে হবে। না হলে সারাজীবন কথা শোনাবে কিন্তু।
বাকিটা মা শুনতে চায় না। সবাইকে রেডি হওয়ার জন্য তাড়া দেয়। আমার তিন রুমের বাসায় দশ বারো জন কে আমি কীভাবে সামলাবো সে চিন্তা করি।
তারপরও সবার উৎসাহ দেখে আমিও কিছুটা নিজেকে বুঝাই, প্রতিদিন তো যাচ্ছে না একদিন যাচ্ছে।
রাতুল আসার সময় বাজারে নেমে পড়ে। আমি ঘরে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, মা বাবা খুশি হয়ে এদের গ্রহণ করলে তাতেও নাকি খুঁত আছে মায়ের ধারণা।
আমি আমার ছেলেকে পাঠিয়ে নাস্তা আনালাম। মা সাহায্য করছে সবাইকে খাবার দিতে। রান্নাঘরে এসে বলে, চিংড়ি মাছ, খাসির মাংস আনতে বলেছিস জামাই কে?
আমি আবার আহত চোখে তাকাই মায়ের দিকে,
এই বাজারে এত মানুষের জন্য খাসি করতে গেলে তো অন্য বাজারই হবে না।
আমি চুপ করে আছি দেখে মা মোবাইল এনে দেয়, আমি রাতুল কে ফোন দিতেই ও বলে বাসার সামনে চলে আসছে। খাসির মাংসের কথা বলতে ও বলে,
- অন্য মাছ মাংস নিয়েছি তো। আচ্ছা তুমি বাবুকে পাঠাও বাজার টা নিয়ে যেতে, আমি দেখি টাকা তুলতে পারি কিনা আবার।
আমি কিছু বলতে পারি না আর। তাও সবটা করার পর, মা দাঁড়িয়ে ভালো ভাবে রান্না করার পরও, ইলিশের সাইজ মাঝারি কেন? চিংড়ি সবচেয়ে বড়টা না কেন? সব যেন একটু একটু করে বলে যাচ্ছিলো মা কানের কাছে এসে। আমি বলি বাড়িতেও তো এই রকম খেয়ে এলাম তখন তো কিছু বলি নি আমরা।
মা পাত্তা না দিয়ে চলে যায়।
খাবার দাবার শেষে বড়মা বলে উঠে,
-কি রে মিরা তোর ভাগ্নে-ভাগ্নী গুলো প্রথম এলো কাপড় চোপড় দিবি না?
আমি হেসে কথা ঘুরাতে চাইলেও বড়মা যেন আরেক টা ফাঁদ পাতলো আমার জন্য এমন ভাবে হাসে। সুস্মিতা দিদি বড়মা কে ধমক দিলেও বড়মা দাঁত খিলিয়ে হাসির ছলে বলে,
-আরে আমি তো মজা করছি। আর খারাপ কি বললাম? জামাই এত ভালো চাকরি করে বলে তোর মেজ মা,এ আর এমন কি? আর তোরা তো দিয়েছিলি সবাইকে গত বছর। মিরাও দেবে না?
এইও যেন একটা প্রতিযোগিতা, দিদি সবাইকে দিয়েছিলো তাই আমাকেও দিতে হবে। এইবার আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙ্গে। মা আমাকে অন্য রুমে নিয়ে মায়ের কার্ড বের করে দিলেও আমি নিই না। রাতুল কেও বলি না। আমি পারলেও দেব না। আর অংশীদার হবো না এই প্রতিযোগিতার।
বড় মার সামনে দাঁড়িয়ে বলি,
- আর কত বছর টেনে নিয়ে যাবে আমার আর দিদির মাঝে এই প্রতিযোগিতা বড়মা?
বড় মা অবাক হয়ে বলে, কি প্রতিযোগিতা? আমি আবার কখন করলাম? তোর মা করে এইসব আমার বাপু এত বাজে টাইম নেই।
আমি হেসে বলি, আমি জানি আমার মা করে, কিন্তু শুরু টা তো তুমি কর, ছোট বেলা থেকে নিজেদের সব কিছু বেশি বেশি দেখিয়ে বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলে মায়ের সামনে তুমিই তো মাকে বাধ্য করেছো এই প্রতিযোগিতায় নামতে। আমার বাবার বড় বাবার মতো পয়সা ছিলো না তাই মা আমাকে মেধার প্রতিযোগিতায় নামিয়েছিলো৷ আমি আর দিদি আজীবন সব বুঝেও তোমাদের গুটি হয়েছি।
বিয়ের পর ও শান্তি নেই। দাদা বাইরের দেশে ভালো চাকরি করে দিদিও করে। দুইজনে কিন্তু ওখানে কষ্ট করে টাকা ইনকাম করে যা এইখানে এসে লোক দেখানো অযথা খরচ করতে হয় তোমাদের জন্য। দেশ থেকে ফিরে গিয়ে যে দিদিদের টানা পোড়নে পরতে হয় তা আমাকে বলেছে দিদি তুমিও জানো, তাও তা পরের বছর আবার ভুলে যাও।
আমার মা ও জানে আমার কোন কিছুর অভাব নেই কিন্তু অতিরিক্ত বিলাসিতার সে সুযোগও আমার নেই। রাতুলের ইনকাম অনেক হলেও সবটা সামলানোর পর এত কিছু সত্যিই আমরা পারি না।
কিন্তু আমার মা-ও আমাদের কথা শোনানোর আগে সে কথা মাথায় রাখবে কেন?
তোমারা দুজনেই ভালো মা, অনেক ভালো মানুষ। আমরা তোমাদের মেইন প্রায়োরিটি। তবে সন্তানকে নিয়ে প্রতিযোগিতা করাটা সত্যিই একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা। সেটা হোক স্কুলে থাকাকালীন। কিংবা বিয়ের পর কি করতে পারে? সার্মথ্য কি? কত টা লোক দেখানো খরচ করতে পারে তার প্রতিযোগিতা।
সুস্মিতা দিদিও আমার সাথে সায় দিয়ে এইবার বলে উঠে,
- প্লিজ এইবার থামো না তোমরা, আমরা ভালো আছি যে যেভাবে আছি। এইটা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রমাণ করার চেষ্টাটা এইবার বন্ধ কর। এতে আমাদের দুই বোনের সর্ম্পকটাও সহজ হবে।
মায়েদের বুঝানো খুব একটা সহজ কাজ না। তবে এখনের জন্য থামলো। তাও আমার মা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
-দেখছো আমার মেয়ে কত বুদ্ধিমান?
আমি চোখ পাকিয়ে মায়ের দিকে, মা বলে উঠতেই, সবাই হেসে উঠে।
সবার সন্তান সবার কাছে সেরা। সন্তান নিয়ে প্রতিযোগিতা আসলেই একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা, সেটা জম্মের পর স্বাস্থ্য নিয়ে হোক, গায়ের রং নিয়ে হোক বা স্কুলের রেজাল্ট নিয়ে কিংবা বিয়ের পর তাদের সামর্থ্য নিয়ে। এই সামান্য ব্যাপারটুকু যদি এইদেশের মায়েরা বুঝতে পারতো অনেক সর্ম্পক সহজ হতো।