গোলাম আজম খান, কক্সবাজার: প্রকৃতির পেরেক পাহাড়, জীববৈচিত্র্য, সংরক্ষিত বনভূমি ও সবুজ প্রকৃতি ধ্বংস করে কিসের এডমিন একাডেমি? আমাদের গায়ের রক্ত থাকতে কক্সবাজারের মাটিতে এমন কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হতে দেব না। পরিবেশ রক্ষায় গড়ে তোলা হবে তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ। সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমির নামে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন শুকনাছড়ির সংরক্ষিত বনভূমির ৭০০ একর জমি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এর প্রতিবাদে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর আয়োজনে রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভে বক্তারা এসব কথা বলেন। সমাবেশে ২০টি পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠন অংশ গ্রহণ করে।
বক্তারা বলেছেন, শুকনাছড়ি এলাকাটি পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন। বিপন্নপ্রায় বন্য প্রাণীর নিরাপদ বিচরণ এই বনভূমি। এমন একটি বনভূমিতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, তা স্পষ্টত আইনবিরোধী এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। তাই এডমিন একাডেমির নামে দেওয়া অবৈধ বন্দোবস্ত দ্রুত বাতিল করতে হবে।
বাপা কক্সবাজারের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১৯৯০ সালে জারি করা ভূমি মন্ত্রণালয়েরই একটি পরিপত্রে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড় ও পাহাড়ের ঢাল বন্দোবস্তযোগ্য নয় এবং ওই জমি মূলত বন বিভাগ বনায়নের জন্য ব্যবহার করবে। বন আইন অনুযায়ী, এ ধরনের রক্ষিত বনে কোনো ধরনের স্থাপনা করা নিষিদ্ধ।
এরপরও ভূমি মন্ত্রণালয় দেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ সংরক্ষিত এ বনভূমিকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে খাসজমি হিসেবে দেখিয়েছে। ঝিলংজা মৌজার এ বনভূমি যে খাসজমি নয়, এটা সরকারি নথিও রেকর্ডেই আছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব মালিকানাধীন ছাড়া যেকোনো জমি কাউকে দিতে হলে তা আগে অধিগ্রহণ করতে হবে। ভূমি মন্ত্রণালয় তো এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি; বরং ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা মূল্যের ৭০০ একর জমি মাত্র ১ লাখ টাকায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের কাজে রাষ্ট্রেরও বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
বাপা কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মুহম্মদ নুরুল ইসলাম, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম, ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির প্রধান নির্বাহী ও বেলার সদস্য ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ মামুন, বাপা কক্সবাজারের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, ১২ সামাজিক সংগঠনের সমন্বয়ক এইচএম নজরুল, জনসুরক্ষা মঞ্চ কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক ইমাম খাইর, কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহাবুবুর রহমান, জেলা ছাত্র লীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ইসমাইল সাজ্জাদ, বাপা নেতা শহীদুল্লাহ্ মেম্বার, মো. নেজাম উদ্দিন, কল্লোল দে চৌধুরী, দোলন ধর, শেখ সেলিম, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি শামসুল আলম কেলো, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইসলাম মাহমুদ, কক্সবাজার জেলা সভাপতি এড.আবুহেনা মোস্তফা কামাল, সাধারণ সম্পাদক শামশুল আলম শ্রাবণ, রাজধানী ফ্রেন্ডস সার্কেলের সভাপতি এম. এ আজিজ রাসেল, সাধারণ সম্পাদক উসেন থোয়েন, কক্সিয়ান ভয়েসের সভাপতি ইরফান উল হাসান, দরিয়া নগর গ্রীণ ভয়েসের সভাপতি পারভেজ মোশারফ, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান সায়েম, টিম ইলেভেন কক্সবাজারের সভাপতি ইরফান, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবছার, সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলা সভাপতি ওমর ফয়েজ হৃদয়, সাধারণ সম্পাদক ইফাজ উদ্দিন আহমেদ ইমু, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস কক্সবাজারের সমন্বয়কারী জিমরান মোঃ সায়েক, টেকপাড়া রাখাইন ছাত্র পরিষদের সভাপতি-উথান্ট অং, সাধারণ সম্পাদক জনি রাখাইন, রাখাইন ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মং সেন য়াইন, সাধারণ সম্পাদক জ জ ইয়ুদি, একতা ছাত্র পরিষদের সভাপতি ওয়াসিম মাহমুদ অভি,সাধারণ সম্পাদক ইয়াছির আরাফাত, বড় বাজার রাখাইন যুব সংঘ সভাপতি উসেন হেন, সাধারণ সম্পাদক জ জ, রাখাইন একতা সংঘের সভাপতি উসেনমি সাধারণ সম্পাদক ক্য লা।
বাপা কক্সবাজারের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার আজকাল লুটপাটের গুদাম হয়ে গেছে। সমুদ্র সৈকত দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছে। উন্নয়নের নামে মাতারবাড়ি দখল চলছে। চতুর্দিকে আমরা ঘেরাও হয়ে গেছি। তিনি বলেন, পাহাড় ধ্বংস করে সিভিল সার্ভিস একাডেমি মেনে নেয়া হবে না। কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় আমরা ঐক্যবদ্ধ। আর কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। লিজ বাতিল না করলে সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে লিজ প্রতিহত করা হবে।
সময় জার্নাল/এমআই