বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

কুড়িগ্রামে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

সোমবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২১
কুড়িগ্রামে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

রেজাউল করিম রেজা, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে চলতি বছরে আগামী ১১ অক্টোবর ৬ষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে ৫ দিন ব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের সব চেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা শুরু হতে যাচ্ছে। দূর্গা পূজাকে সামনে রেখে কুড়িগ্রামে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পরা। করোনাকালে দুশ্চিন্তায় থাকলেও প্রকোট কমতে শুরু করায় উৎফুল্ল ও মুখে হাসির ঝিলিক নিয়ে দিন-রাত প্রতিমা তৈরি কাজে নেমে পড়েছেন তারা। 

এদিকে, গেল করোনার বছরগুলোতে মৃৎশিল্পীরা দূর্গা উৎসবে ২ থেকে ৩ মাস আগে অর্ডার পেত। কিন্তু করোনায় তাদের বাধাগ্রস্ত করেন উৎসব পালনে। তবে চলতি বছরে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু নিম্নমুখী হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার বেশি অর্ডার পাচ্ছেন। 

সরেজমিনে দেখা গেছে- জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে প্রতিমা তৈরিতে রাত-দিন ব্যস্ত সময় পাড় করছেন মৃৎশিল্পীরা। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। নিধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিমা তৈরি সম্পন্ন করার লক্ষ্যে পরিবারের লোকজন ছাড়াও বাড়তি ৪/৫ জন শ্রমিক নিয়ে প্রতিমা তৈরিতে কাজ করছেন কারিগররা।

জেলার রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের বৈদ্দের-বাজার এলাকার মৃৎশিল্পী তপন চন্দ্র মালাকার জানান, বাপ-দাদার পেশা আড়কে ধরে আছি। মৃৎশিল্পীদের কেউ খোঁজ খবর নেয় না। প্রতি বছর দূর্গা উৎসব আসলে কয়টা টাকার মূখ দেখি। তিনি এ বছর ৮ টি প্রতিমা তৈরী করছেন। ইতি মধ্যেই ৪ টি প্রতিমা বিক্রি করেছেন। সঠিক সময়ে প্রতিমা ডেলিভারী দিতে স্ত্রী-সন্তান ও দুই-তিন জন স্থানীয় শ্রমিক নিয়ে ৮টি প্রতিমা তৈরিতে রাত-দিন ২৪ ঘন্টা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। 

তিনি বলেন- আটটি প্রতিমা ডেলিভারি দিতে পারলে সব খরচ মিটিয়ে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হবে। আয়ের টাকা দিয়ে তিনি বৃদ্ধ মা, স্ত্রী-তিন মেয়ের পড়ালেখাসহ ভরণ পোষনেও হিমসিম খেতে হয়। তবে তিনি সারা বছরেই বিভিন্ন দেব-দেবীর তৈরী করেই কোন রকমেই পরিবার ও পরিজন নিয়ে দিন পাড় করছেন।

একই ইউনিয়নের দেবালয় এলাকার বাঁশি বাদক ও মৃৎশিল্পী বিপিন চন্দ্র রায় বলেন, তিনিও এবছর ৫ টি প্রতিমা তৈরী করছেন। প্রতিমা বিক্রি করলে তিনিও ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করবেন বলে জানান। তিনি প্রতি বছর দূর্গা উৎসব আসলে বৈদ্দের বাজার এলাকায় প্রতিমা তৈরী করেন। অন্য সময় তিনি জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ রংপুর বেতারেও বাঁশি বাজিয়ে টাকা আয় করে স্ত্রী-সন্তানসহ জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। তার ভাই বাবুল চন্দ্র রায়ও এবছর ৯টি প্রতিমা তৈরী করছেন। 

একই এলাকার সনজিৎ চন্দ্র রায়ও ৬ টি প্রতিমা তৈরীর অর্ডার পেয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। জেলার সব মৃৎশিল্পীরা প্রতি বছর একটা মোটা টাকার মুখ দেখেন। অন্য মৃৎশিল্পী প্রতিমা তৈরীর পাশাপাশি কৃষি কাজসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবন-জীবীকা নির্বাহ করে থাকেন। তবে জেলার অন্য উপজেলার চেয়ে
রাজারহাট উপজেলার বৈদ্দের বাজার এলাকায় ২০ থেকে ২৫ টি পরিবার প্রতিমা তৈরী করেই এই শিল্পটাকে আকড়ে ধরে রেখেছেন। ঐ সব পরিবারে দুই একজন পরিবার সরকারি অনুদান পেলেও অধিকাংশ পরিবার সরকারি অনুদান থেকে বঞ্চিত বলে অভিযোগ করেছেন।

কুড়িগ্রাম জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রবি বোস জানান, ১ অক্টোবর ৬ষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে জেলার ৫০৫ টি পূজা মন্ডপে ধর্মীয় উৎসবের মধ্য দিয়ে শারদীয় দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। করোনা ভাইরাসের কারণে গত বছরের ন্যায় এবছরও কঠোর স্বাস্থ্যবিধি হিন্দু সম্প্রদায়ের পাঁচদিন ব্যাপী শারদীয় উৎসব চলবে। 

তিনি আরও জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ার কারণে আমরা বড় দুচিন্তায় ছিলাম। ঈশ্বরের কৃপায় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমায় পূজার আয়োজন ও প্রতিমা তৈরীর কাজ চলছে। এ বছর মা দেবী দূর্গার আগামন ঘটবে ঘোটকে আর গমন করবেন দোলায় চড়ে। তিনি আরও জানান, শারদীয় দূর্গা উৎসব শান্তির্পূণভাবে উদযাপনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয়সহ সকলের সার্বিক সহযোগীতা চেয়েছে। অপরদিকে, মন্দিরে মন্দিরে প্যান্ডেল, গেট, তোরণ ও বিভিন্ন ধরণের সাজসজ্জার কাজের প্রস্তুত্তি নিচ্ছে আয়োজক কমিটি।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, এখনো মন্ত্রণালয় থেকে কোন নিদের্শনা পাইনি। তারপরেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ ভাবে পালন করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগীতা করা হবে। সেই সাথে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে জেলা-উপজেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের নেতাদের সাথে দূর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ করতে বিভিন্ন ধরণে দিক নিদের্শমূলক আলোচনা সভা করা হবে। এছাড়াও শারদীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে স্ব-স্ব উপজেলা প্রশাসন সব সময় মনিটরিং করবে এবং পুলিশ বাহিনীসহ কয়েক স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা বাহিনীর টহল অব্যাহত থাকবে।

সময় জার্নাল/এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল