শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

মৃত ব্যক্তির ভাতা যায় চেয়ারম্যানের নম্বরে!

সোমবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২১
মৃত ব্যক্তির ভাতা যায় চেয়ারম্যানের নম্বরে!

শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠিকে স্বচ্ছল করতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধিনে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে মাসিক ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করে সরকার। সাম্প্রতি তা ডিজিটাল করা হয়েছে। এসব ভাতা বিতরণে লালমনিরহাটের আদিতমারীতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। 

জানা গেছে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধিনে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় বয়স্ক ও বিধবাদের জন্য প্রতি মাসে ৫শত টাকা হারে এবং অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধীদের প্রতি মাসে ৭৫০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়। এ উপজেলায় শুধু মাত্র বয়স্ক ভাতা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। আগে সরাসরি ব্যাংকে টাকা প্রদান করা হলেও সাম্প্রতি বিকাশে প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়। অনলাইন করার সুযোগে কতিপয় অসাধু ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান সুফল ভোগীর নম্বরের পরিবর্তে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নম্বর দেন। ফলে সুফলভোগীদের অর্থ চলে যায় প্রভাবশালীদের দখলে। মৃত ব্যাক্তির নামের টাকাও নিচ্ছেন কেউ কেউ।

গত ৬/৭ মাস আগে মারা যান মহিষখোচা ইউনিয়নের বারঘড়িয়া দোড়ার ব্রীজ এলাকার আলু ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমানের মা বয়স্কভাতা ভোগী হাজরা খাতুন। মৃত্যুর পরেও গত জুন মাসে দুই দফায় তাকে বিকাশে ৪হাজার ৫১০ টাকা প্রদান করা হয়। তবে এ টাকা চলে যায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরীর ব্যাক্তিগত নম্বরে। ইউনিয়ন পরিষদের চাহিদায় পাঠানো  বিকাশ নম্বরটি পরিবর্তন করে চেয়ারম্যানের নম্বর দেয়া হয়েছে। ফলে পাসবুক তথ্যানুযায়ী মৃত হাজরা খাতুনের টাকা পাচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান। তবে হাজরার পুত্রবধু সাবিনা বেগম বলেন, আমার শ্বাশুরী ৬/৭ মাস আগে মারা যান। এরপরেও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিকাশ নম্বর চাইলে আমরা দিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত টাকা পাইনি।

মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী বলেন, এ নম্বরটি এখন ব্যবহার করি না। তাই টাকা এসেছে কি না জানা নেই। নম্বরটি বিকাশ করাও ছিল না। সিমটি অনেকদিন আগে ফেলে দিয়ে নতুন সিম ব্যবহার করছি।

উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের সবদল বুড়িরঝাড় গ্রামের নবির হোসেনের স্ত্রী আলীমন নেছার বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন কয়েক বছর ধরে। সাম্প্রতি সময় বিকাশ নম্বর চাইলে তারা নম্বর ইউপি সদস্যের মাধ্যমে পরিষদের পাঠান। কিন্তু তার নম্বরটি পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম প্রধানের ব্যাক্তিগত নম্বরটি। আর এ নম্বরে আলীমন নেছার বয়স্কভাতার ৫০৩ টাকা গত ১২জুন রাত ১১টায় ৫০ মিনিট ১৯ সেকেন্ডে  পাঠানো হয়েছে বলে পাসবুক তথ্যে জানা গেছে।

এ দিকে ভাতার টাকা না পেয়ে অতিদরিদ্র আলীমন নেছা ওষুধ তো দূরের কথা খাবার সংকটে রয়েছেন। তিনি বলেন, সাঈদ মেম্বর বিকাশ নম্বর চেয়েছিল দিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন টাকা পাইনি। চেয়ারম্যান বলেছে অফিসের লোকজন না কি মোবাইলে আমার টাকা মেরে দিয়েছে।

তবে সারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম প্রধান বলেন, নম্বরটি আমার ঠিক আছে। কিন্তু বিকাশ করা নেই এবং টাকাও আসেনি। তার ইউনিয়নের অসংখ্য লোক এখনও ভাতা পায় নি বলে দাবি করেন তিনি।

ওই বুড়িরঝাড় গ্রামের প্রতিবন্ধী আব্দুর রহমানের প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানের জন্য নম্বর দেয়া হলেও তার ভাতা বাবদ গত ২৬ জুন ৬ হাজার ৭৯৭ টাকা চলে যায় ওই ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সাঈদের নাম্বারে বলে জানান সরকারী একটি দফতর। দীর্ঘ ৭/৮ মাস ধরে টাকা না পেয়ে চিকিৎসা করতে পারছেন না শারীরিক প্রতিবন্ধী আব্দুর রহমান। তবে ইউপি সদস্য সাঈদ বলেন, এটি আমার নম্বর নয়। প্রতিবন্ধী আব্দুর রহমানের ভাতার তালিকায় নম্বরটি দেখেছি।

মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহেরবানু ও তার স্বামী সাবেক গ্রাম পুলিশ আজিজুর রহমান দু'জনে সুস্থ্য দেহের হলেও ক্ষমতার প্রভাবে দু'জনেই পাচ্ছেন অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা। আজিজুর রহমান বলেন, আমার স্ত্রী ধবল রোগী, আমি ডায়াবেটিস রোগী। তাই সমাজকল্যাণ মন্ত্রীকে বলে ভাতাটা করে নিয়েছি।

একইভাবে পুরো উপজেলার সুফলভোগীদের নামের অনুকুলে ৩২জন ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের ব্যাক্তিগত নম্বর রয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। অনেক ইউপি সদস্য ও সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতা নিজের ও পরিবারের একাধিক সুস্থ্য সবল লোকের নামেও অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগ করছেন। এছাড়াও ইউপি সদস্যরা অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নামে উত্তোলন করা সিম দিয়েও ভাতাভোগীদের ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে। যা সুষ্ঠ তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে। টাকা না পাওয়া  ভাতাভোগীদের নামের অনুকুলে ব্যবহৃত বিকাশ নম্বর গুলো কোন জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে উত্তোলন করা হয়েছে তা দ্রুত তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ভুক্তভোগীদের।

আদিতমারী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রওশন আলী মন্ডল বলেন, ভাতাভোগীর নম্বর পরিবর্তন করে যারা নিজের বা পরিবারের নম্বর দিয়ে টাকা নিয়েছেন। তিনি আমার অফিসের হোক বা জনপ্রতিনিধি হোক। তদন্ত করে অবশ্যই বিধিমত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সময় জার্নাল/এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল