শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

একটি সতর্কতামূলক পোস্ট

সোমবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২১
একটি সতর্কতামূলক পোস্ট

মহিউদ্দিন বহদ্দা চৌধুরী :

কানাডা ভিসা ২০ লাখ !! আমেরিকা ভিসা ২০ লাখ !! ইউরোপ ভিসা ১৫ লাখ !! ভিসার আগে বা পরে ১ টাকাও নয়, সমস্ত পেমেন্ট পৌঁছানোর পরে।।

এরকম রংচং মাখা বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দিয়ে, আমার পরিচিত এক ভাই সর্বশান্ত হয়ে রাস্তায় বসেছেন।। তার করুন কাহিনী নিচে জনস্বার্থে হুবহু তুলে ধরা হল, আপনাদের উপকারে আসবে

S.B. Rasel নামক এক ভাই, সে এমনই কোন এক বিজ্ঞাপন দেখে ঢাকায় অভিজাত এলাকায় একটা অফিসে গিয়েছিলেন, সেখানে তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে জানে এবং তারা বলে যে, আমরা গ্যারান্টি দিয়ে আপনাকে বিদেশ নিয়ে যাবো, ২ বছর এর জন্যে জব ভিসা, মাসিক ২০০০-২৫০০ ডলার বেতন, ৫ বছর পরে নাগরিকত্ব পেতে আমরাই সাহায্য করবো। এমনকি ভিসার আগে ও পরে কোন অর্থও প্রদান করতে হবে না। সমস্ত খরচ আপনি বিদেশ পৌঁছানোর পরে আপনি যখন বিদেশ থেকে আপনার পরিবার কে ফোন দিয়ে বলবেন যে আপনি ভালোভাবে পৌঁছে গেছেন, তারপর আপনার পরিবার আমাদের টাকা দিবে।। আমাদের আমেরিকা কানাডাতে সরাসরি প্রতিনিধি আছে। তারাই সরাসরি আমেরিকা কানাডা থেকে আপনার নামে ভিসা ইস্যু করে পাঠাবে, তাই এখানে এম্বাসি ফেস করার কোনও ঝামেলা নেই।।

এক সঙ্গে এতো অফার পেয়ে বেচারা কনফিউস হয়ে গেলো !! সে নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো বিদেশ যাওয়া এতো সোজা ?? নিজে নিজে উত্তরও খুঁজে নিলো। আরে এ কি আর!! একবার চেষ্টা করে দেখি, আমার তো ২৫ পয়সাও আগে দিতে হবেনা, সমস্ত খরচ যেখানে আমেরিকা/কানাডা পৌঁছানোর পরে, সেখানে আমার আবার টেনশন কি !! যেই কথা সেই কাজ, বাড়িতে গিয়ে বাবা-মায়ের সাথে আলোচনা করলো। যেখানে সমস্ত খরচ পৌঁছানোর পরে সেহেতু বাবা-মা আর দ্বিধা না করে রাজী হয়ে গেলো। শুরু হয়ে গেলো সুদের টাকা গুছানো ও অবশিষ্ট জমিজমা বিক্রি করার প্রস্তুতি।। ১৮-২০ দিনের মাথায় টাকা গুছানোর প্রস্তুতি শেষ করে পাসপোর্ট নিয়ে আবার অফিসে গিয়ে নিজের নামটা বুকিং দিয়ে আসা। বুকিং এর সময় অরিজিনাল পাসপোর্ট সহ ২ কপি ফটো ও ন্যাশনাল আইডি এর ফটোকপি রাখলো সঙ্গে মোবাইল নাম্বার।।

৭ দিন পরে তাকে ফোন করে অফিসে ডাকা হল।। যথারীতি, অফিসে যাবার পরে দেখলোও সেখানে তার মতো আরও ১১ জন অপেক্ষা করছে কানাডা বা আমেরিকা যেতে চায়।। এর পরে অফিস থেকে তাদের বলা হল, টোটাল ১২ জন এর একটা গ্রুপ এদের প্রত্যেকের (৯ জন কানাডা, ৩ জন আমেরিকা) ভিসা রেডি, এনাদের ফ্লাইট আগামী ৪ দিন পরে।। ফ্লাইট ভারতের নিউ দিল্লী থেকে সরাসরি, তাই প্রত্যেকের পাসপোর্টে ইন্ডিয়ান ভিসা লাগানো আছে। ২ দিনের ভেতর ১২ জনের গ্রুপ বাংলাদেশ থেকে নিউ দিল্লীর উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে, সঙ্গে তাদের প্রতিনিধি থাকবে। তাদের প্রত্যেকের ভিসা অনলাইনে ইস্যু হয়ে গেছে। অনলাইন ভিসা কপি ও বিমান টিকিট নিউ দিল্লী থেকেই উনাদের প্রতিনিধি প্রত্যেক ক্যান্ডিডেট এর হাতে দিয়ে দেবে।।

এই ১২ জনের ভেতর ২/১ জন এর মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিলো যে, পাসপোর্টের স্ট্যাম্প ছাড়া কি আসলেই তারা কানাডা যেতে পারবে তো?! আবার নির্ভয়ে ২/১ জন এই প্রশ্ন করেও ফেলে। কিন্তু তারা রীতিমতো ধমক খেয়ে যায়। আরে মিয়া, আপনারা কি আমাদের থেকে বেশি বোঝেন?? আমরা ২৫ বছর ধরে এই লাইনে, আমাদের অভিজ্ঞতা আছে, আপনাদের আগে আমাদের যে সব ক্যান্ডিডেট বিদেশ গেছে, এই নেন ফোন নাম্বার, এদের সাথে কথা বলেন।। 

আপনাদের কি টেনশন?? আপনার কি ২৫ পয়সাও পেমেন্ট করেছেন?? আপনাদের পিছনে আমাদের কত করে ইনভেস্ট করতে হয়েছে জানেন?? একটা কানাডা এর ভিসা রেডি করতে কত টাকা লাগে জানেন?? এর পরে প্লেন এর টিকিট নেটে সার্চ দিয়ে দেখেন কত খরচ?! কতগুলো ঝাড়ি শোনার পরে সবাই চুপ হয়ে গেলো। নির্ধারিত তারিখ সবাই নিউ দিল্লী এর উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলো।। 

ঢাকা থেকে ট্রেনে কোলকাতা, এরপর কোলকাতা থেকে নিউ দিল্লী ট্রেনে সবমিলিয়ে ২/৩ দিন পরে তারা নিউদিল্লী পৌঁছালো !! নিউদিল্লী স্টেশন থেকে প্রায় ৩/৪ ঘন্টা প্রাইভেটকারে করে কোথায় নিয়ে গিয়ে রাতে এই ১২ জন এর গ্রুপকে রাখা হলো কেউ সঠিকভাবে বলতে পারলোনা।। 

(একটা নিরিবিলি এপার্টমেন্ট, আশেপাশে ফাঁকা পরিবেশ)

প্রত্যেককে ২/৩ ঘন্টা করে পিটালো আলাদাভাবে এবং সারারাত কোনো এক ফাঁকা রুমে আটকে রাখলো (খাবার পানি ছাড়াই সারারাত)। পরেরদিন সকালে একজন, একজন করে অন্য ফাঁকা রুমে নিয়ে গেলো এবং মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বাড়িতে ফোন করতে বাধ্য করলো৷ এবং এটা বলালো যে " মা/বাবা আমার আজ রাতে কানাডা এর ফ্লাইট আমার জন্যে দোয়া করবে সবাই" !! 

প্রত্যেকে আলাদাভাবে তাদের পরিবার এর সাথে একই কথা বলালো এবং এরপরে ২ দিন তাদের একসাথে সেই বদ্ধ ঘরে আটকিয়ে রাখলো (দিনে শুধুমাত্র ১ বেলার খাবার দিয়ে)।

২ দিন পরে একই স্টাইলে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বাড়িতে ফোন করতে আবারো বাধ্য করলো এবং এটা বলালো যে "মা/বাবা আমি ভালোভাবে কানাডা পৌঁছে গেছি, কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি, এমন কি আগামীকাল থেকে আমি কাজে জয়েন্ট করবো, তোমরা এনাদের প্রাপ্য টাকা দিয়ে দাও "!! 

নিরীহ বাবা-মা দ্বিধা না করে সবাই সবার চুক্তি অনুযায়ী টাকা দিয়ে দিলো !!! টাকা হাতে পাবার গ্রীন সিগনাল পাবার পরে, প্রত্যেককে একই স্টাইলে নিউদিল্লী স্টেশনে পৌঁছে দেয় কোনও এক রাতের বেলায়, সঙ্গে কোলকাতা ফেরার ট্রেনের টিকিটসহ।

(এটি সংগৃহীত একটি বাস্তব ঘটনা, তবে এটাই হচ্ছে এখন প্রতিনিয়ত যা ইতিমধ্যে বিভিন্ন নিউজেও আসছে, আমাদের কোন পরিচিত আত্মীয়স্বজন যাতে এইরূপ প্রতারণায় না পড়ে তাই পোস্ট করা)



Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল