দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জঃ মুজিববর্ষে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গোপালগঞ্জে উন্নত জাতের ৩য় প্রজম্মের রুই মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ফিস ও মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে মঙ্গলবার বিকালে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্ণি বাওড় ও গোপালপুর ইউনিয়নের বণ্যাবাড়ি বিলে এই প্রথম ৩য় প্রজন্মের রুই পোনা অবমুক্ত করা হয়। প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে ৪ শ’ ৫০ কেজি পোনা অবমুক্ত করেন জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা।
দেশে প্রচলিত পোনার তুলায় এ পোনা ৩০% বেশি বৃদ্ধি পায়। মুক্ত জলাশয়ে এ পোনার বৃদ্ধির হার আরো বেশি। দ্রুত বর্ধনশীল এ জাতের পোনার আবাদ বৃদ্ধি পেলে দেশের প্রতিটি মানুষের পাতে মাছ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে বলে মৎস্য বিজ্ঞানীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
ওয়ার্ল্ড ফিসের সিনিয়র বিজ্ঞানী ড. বিনয় কুমার বর্মন বলেন, হালধা, পদ্মাও যমুনা নদী থেকে প্রথমে রুই মাছের ব্রুড সংগ্রহ করা হয়। তারপর গবেষনার মাধ্যমে ধাপে ধাপে ভাল থেকে ভাল জাত নির্বাচন করা হয়। দীর্ঘ ৮ বছর গবেষণার পর তৃতীয় প্রজম্মের রুই মাছের পোনা উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ পোনা দ্রুত বাড়ে। প্রচলিত পোনার তুলায় ৩০% বেশি বৃদ্ধিপায়। মুক্ত জলাশয়ে বৃদ্ধির হার আরো বেশি। এ জাতের রুই দেশের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। খেতে সুস্বাদু তাই বাজারে বেশি দামে বিক্রি হবে। এতে মৎস্যচাষী লাভবান হবেন। এ রুই দেশের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করবে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী গ্রামের মৎস্যজীবী ধীরেন মাঝি বলেন, এখানে মাছ ছাড়া হচ্ছে। আবার মাছের অভয়াশ্রম করে মাছ সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এখন খাল বিল নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়ার সম্ভাবনা সৃস্টি হয়েছে। এতে আমাদের মধ্যে আশা জেগেছে। কিন্তু চায়না কারেন্ট ম্যাজিক জাল আমাদের মৎস্য সম্পদ ও জলজ জীববৈচিত্র ধংস করে দিচ্ছে। এটি বন্ধ করে আমাদের মৎস্য সম্পদ রক্ষা করতে হবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ বিভাগের উপপিরচালক ড. খালেদ কনক বলেন, মাছের উৎপাদন বুদ্ধি করে আমরা মৎস্যজিবি ও মৎস্যচাষীদের সাবলম্বী করতে চাই। এছাড়া প্রোটিনের চাহিদা পূরণে দেশের প্রতিটি মানুষের পাতে আমরা মাছ নিশ্চিত করতে চাই। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
গোপালগঞ্জে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বৈরাগী বলেন, গোপালগঞ্জ নিম্ন জলাভূমি বেষ্টিত এলাকা। এ জেলা ১১৪টি বিল সহ অনেক মুক্ত জলাশয় রয়েছে। আমরা
মুজিববর্ষে এসব জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজস্ব খাত, প্রকল্পসহ বিভিন্ন উৎস থেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করছি। এই প্রথম এ জেলায় তৃতীয় প্রজম্মের রুই মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। অবমুক্ত করা পোনার সাইজ অনেক বড়। এ পোনার মৃত্যুর হার অনেক কম। তাই দ্রুত বড় হবে। এক বছরের মধ্যে এ পোনা বংশ বিস্তার করবে। গোপালগঞ্জের জলাশয় মাছে মাছে ভরে উঠবে। এখান থেকে মৎস্য আহরণ করে মৎস্যজিবি ও সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন।
সময় জার্নাল/এমআই