এহসান রানা, ফরিদপুর: ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার অবহেলিত একটি গ্রামের নাম চর বানা। এ গ্রামটিতে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। গ্রামটির আয়তনও ছোট। ২২০টি পরিবারের বসবাস। লোকসংখ্যা দেড় হাজার। রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা হতে বঞ্চিত এই গ্রামের বাসিন্দারা। বলাচলে সকল প্রকার নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে পিছিয়ে তারা।
যোগাযোগ ব্যাবস্থার দিক দিয়ে একেবারে পিছিয়ে। রাস্তা-ব্রীজ, কালভার্টের অভাবে বছরের অর্ধেক সময় থাকতে হয় পানিবন্দি। আর শুখনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে চলতেও নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় এ গ্রামের মানুষদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামটিতে যাওয়ার পথে একটি ব্রিজ থাকলেও ব্রিজের দু'পাশে নেই সংযোগ পাকা সড়ক। আছে কাঁচা রাস্তা। তাও অনেক নিঁচু হওয়ার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই কাদার সৃষ্টি হয়। অতি বৃষ্টি হলে পানিতে তলিয়ে যায়। আর প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটি প্রায় পাঁচ ফুট পানির নিচে থাকে।
এতে ব্রীজটির দুই পাশের সংযোগ কাচা রাস্তা তলিয়ে যাওয়ার কারণে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় রাস্তা বিহীন ব্রীজটি অকেজো অবস্থায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। যা কোন কাজেই আসে না এলাকাবাসীর। শুকনো মৌসুমেও সড়কটি কাঁচা থাকার কারণে একটু বৃষ্টি হলেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বাঁশের সাঁকো দিয়েও চলতে দেখা যায়। অনেকে জমির আইল ধরে চলাচল করলেও বর্ষায় তা সম্ভব হয় না।
কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। তাই শিক্ষার হার খুবই কম। নেই কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র। গ্রামীণ অবকাঠামোর সন্তোষজনক উন্নয়ন না হওয়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে রয়েছে চরম ক্ষোভ। তবে স্থানীয়রা মনে করেন জনপ্রতিনিধি ও সরকারের প্রচেষ্টা থাকলে এমন করুন অবস্থা থেকে খুব দ্রুতই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, চরবানা গ্রামটি উন্নয়ন বঞ্চিত। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা এতোটাই খারাপ যে অন্য এলাকার মানুষ এই গ্রামে আত্মীয়তা পর্যন্ত করতে অনিহা প্রকাশ করে। ছেলে বা মেয়ে বিয়ে দিতে এ গ্রামে এলেও চলাচলের এমন দশা দেখে বিয়ে দিতে বা বিয়ে করতে চায় না। কারণ শশুর বাড়ি কিংবা জামাই বাড়ি আসতে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হবে। কৃষি কাজের ক্ষেত্রেও নানা ধরনের সমস্যার মোকাবেলা করে চলতে হয়।
নজরুল শেখ নামের গ্রামের আরেক ব্যক্তি বলেন, বর্ষায় গ্রামের রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার কারণে আমরা কষ্টে থাকি।যাতায়েতের খুব সমস্যা হয়। ঘর থেকে বের হতে হলে নৌকা ছাড়া উপায় নেই। বছরের ছয় মাস ধরে আমরা থাকি পানিবন্দী। কোনো মতে পরিবার-পরিজনদের নিয়ে আটঘাট বেঁধে পড়ে রয়েছি।
আমিনুল বুলবুল জানান, সবচেয়ে কষ্ট বর্ষার সময়। মানুষ চলতে গিয়ে ঘটে দূর্ঘটনা। ছাত্রছাত্রীরা পার হতে গিয়ে বিপদে পড়ে। এখানে এমপি সাহেব নিজে এসে পরিদর্শন করেছেন। শুকনো মৌসুমে রাস্তায় মাটিও দিয়েছেন। কিন্তু খালের ভিতরে রাস্তার দুপাশে অনেক গভীর হওয়ায় রাস্তায় মাটি থাকেনা। কৃষক সোহরাব হোসেন জানান, বছরের ছয় মাস ফসলী জমিতে পানি থাকে। তাই জমিতে ঠিকমতো ফসলও ফলাতে পারি না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য তবিবর মল্লিক বলেন, বর্তমান সরকারের নিকট আমাদের প্রাণের দাবি গ্রামটির সার্বিক উন্নয়নসহ রাস্তা-ঘাটের উন্নতি করা হোক।
এবিষয়ে বানা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাদী হুমায়ুন কবির বাবু জানান, চর বানা গ্রামটি আসলেই অবহেলিত। এ সম্পর্কে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট একাধিকবার জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে বানা ইউনিয়ন পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান মোঃ রাজ ইসলাম খোকন জানান, গতবছর রাস্তাটির কিছু অংশে মাটি দিয়ে উঁচু করা হয়েছিলো। কিন্তু রাস্তাটি অনেক নিঁচু। যার জন্য তেমন একটা কাজে আসেনি। উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে গ্রামবাসীর কষ্টের কথা জানিয়েছি। সরেজমিনে পরিদর্শনও করেছেন। রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী করা হবে জানিয়েছেন।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জানান, ওই রাস্তাটি এমপি মহোদয় নিজে পরিদর্শন করেছেন। আগামী শুষ্ক মৌসুমে রাস্তাটির উন্নয়ন হবে বলে আশা করছি।
সময় জার্নাল/এমআই