বুধবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
অনেকে মনে করেন, সৃষ্টিশীল কিছু করতে দুটি জিনিস লাগে— মেধা আর অর্থ। এ দুটো হলেই করে ফেলা যায় সৃজনশীল সব কাজ। কিন্তু না। এরচেয়েও বেশি কিছু লাগে। আপনি যদি এরকম কিছু করতেই চান, শুধু মেধা ও অর্থেই হবে না। সবার আগে যে জিনিসটা লাগবে সেটা হল বন্ধু বা বন্ধু সার্কেল। এটাই বেশি দরকার। এই বন্ধু সার্কেল নামের সাপোর্ট পরিবার ও কর্মক্ষেত্র —এ দুই জায়গা থেকেই থাকতে হবে।
যদি এ দুটো আপনার না থাকে, বলা যায় আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হতভাগা একজন। ভাল বন্ধু বাছাই না করার কারণে অনেক সফল মানুষও পরে ব্যর্থ হয়েছেন, আমি আমার এই ছোট্ট জীবনেই দেখেছি। আর ভাল বন্ধুর সাহচর্যে সফল হওয়া মানুষদের ত হিসাবের তালিকা বহু দীর্ঘ।
চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক ও সুরকার চার্লি চ্যাপলিনের কথা বাদই দিলাম; ধরেন চোখের সামনের হুমায়ুন আহমেদ বা কাঁটাতারের ওপারের সত্যজিৎ রায়ের কথা। মিস্টার আহমেদ ঈর্ষণীয় একটা বন্ধু সার্কেল পেয়েছিলেন। তাদের নিয়ে বানিয়ে গেছেন অসাধারন সব নাটক-সিনেমা। লিখেছেন পাঠকের মনজয়ী সাহিত্য। ক্যারিয়ারে যা তিনি করতে চেয়েছিলেন, তা-ই তিনি করে গেছেন। এটাই জীবনের স্বার্থকতা। এটাই জীবনের মানে।
সত্যজিৎ পেয়েছিলেন তার মন বুঝবার মতোন একজন একান্ত বন্ধু। যাকে সমাজের ভাষায় বলে পত্নী বা স্ত্রী। বিজয়া রায়। বিজয়া তার স্বামীপ্রবরকে এমনভাবেই হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন যে, তিনি সত্যজিতের খসড়া খাতায় এলেবেলে দাগাদাগির মানেও বুঝতে পারতেন! সত্যজিতের অনেক গানের ভুলে যাওয়া সুর মনে করিয়ে দেওয়া বা বহু গল্পের প্লট পাল্টে দেওয়ার কাজও করতেন বিজয়া! নায়ক রাজ রাজ্জাকসহ এরকম বহু সফল মানুষের কথা বলা যাবে যাদের এমন একটি সাপোর্ট ছিল।
সময়ের নদীতে মূহুর্ত নামের স্রোতের গতি থেমে নেই। প্রতিটি মুহূর্তেই আপনার ছোট্ট এই জীবন থেকে একটি একটি করে মূল্যবান সেকেন্ড হারিয়ে যাচ্ছে। যারা সেই মূহুর্ত ধরে ধরে জীবনকে রাঙাতে পারে তারাই একসময় সফল ও স্বার্থক হয়। প্রতিটি মুহূর্তকে রাঙিয়ে জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই সংগ্রাম। এই সংগ্রামে আপনার চাই একটা প্রতিশ্রুতিশীল বন্ধু সার্কেল। সে ঘরেই হোক আর বাইরেই হোক, যদি মেলে আপনার সেই সার্কেল, তাহলে আপনার চেয়ে ভাগ্যবান আর কেউই নেই এই পৃথিবীতে।
লেখক : সম্পাদক, দ্যা রিপোর্ট লাইভ।
৭ আশ্বিন, ১৪২৮
বাংলামটর, ঢাকা-১২০৫।