বুধবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
গজারিয়া প্রতিনিধি: মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলায় হোসেনন্দি ইউনিয়নের মেঘনা নদীর তীরবর্তী ইসমানির চর গ্রামে অবিরত নদী ভাঙ্গনের শিকারে, অর্ধশত জেলে পরিবার ও গ্রামবাসীর চোখে নেই ঘুম। পৈত্রিক ভিটা-বাড়ি ও সামাজিক জীবনের স্মৃতি হারিয়ে কোথায় হবে মাথা গোঁজার ঠাঁই, হতাশা আর আশঙ্কায় কাটছে দিন। নদী ভাঙ্গন কবলিত জেলে পরিবারের মধ্যে একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী নারী-পুরুষ জানান প্রতিবছর নদী ভাঙ্গনের আগে-পরে মন্ত্রী ,এমপি, জনপ্রতিনিধিদের পরিদর্শন কালে দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের উদ্যোগ দেখে নাই গ্রামবাসী আজও।
ইসমানিরচর গ্রামে মেঘনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে নতুন করে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। পানি হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে পানির টানে আবারও ভাঙ্গন আতঙ্কে হতাশায় দিন কাটছে গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবারের।
বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, ইসমানির চর গ্রামের নদীর তীরবর্তী এলাকায় শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। ভাঙ্গন থেকে বাঁচতে বসতঘরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়া পরিবারগুলো। খরস্রোতা মেঘনা নদী পলি পড়ে, গড়ে ওঠা গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়ন। গ্রামের জেলে পাড়ায় অবস্থিত প্রায় অর্ধশতাধিক জেলে পরিবারসহ পাঁচ শতাধিক পরিবারের চোখে মুখে হতাশার চিত্র, বাসস্থান হারানোর ভয়। অথচ নদীর সাথে এ জনপদের মানুষের রয়েছে শত বছরের জীবিকা নির্বাহসহ নিবিড় প্রাণের সর্ম্পক। ইতিমধ্যে নদীর পাড়ে উপড়ে পড়ছে বৃহৎ গাছ সহ কয়েকটি ভিটেবাড়ি বসতঘর নদীর ভাঙ্গনে ধসে গেছে।
ভাঙ্গন কবলে বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে চলে যাওয়া মোঃ সোরাব হোসেন জানান, পানি বৃদ্ধি আর অবিরাম ঢেউ এর ফলে ভেঙ্গে গেছে পার সংলগ্ন বাড়ির দুই তৃতীংশ, বাধ্য হয়ে বাপ দাদার ভিটে মাটি ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে।
প্রতিবন্ধী রিতা বেগম স্বামী-সন্তানহীন এই নারী বসবাস করেন পিতার রেখে যাওয়া ঘরে। সেই ঘরটিও অর্ধেক নদীর গর্ভে চলে গেছে। চোখে মুখে তাঁর অনিশ্চিত জীবনের ছাপ। আমির হোসেন মোল্লা নামে এক গ্রামবাসী বৈদ্যাতিক খুটি দেখিয়ে বলেন, একে তো ভাঙ্গন আতংক দ্বিতীয়ত, যে কোন সময় নদী ভাঙ্গনের ফলে পড়ে যেতে পাড়ে এই বৈদ্যুতিক খুটি, সার্বক্ষণিক দূর্চিন্তায় সময় কাটে তার। গবাদি পশু গরু আর ঘোয়াল ঘর নিয়ে চিন্তার শেষ নাই।
কৃষক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, রাত জেগে ঘোয়াল ঘরের পাশে বসে থাকতে থাকতে আমি ও আমার পরিবার অসুস্থ হয়েগেছি। আমাদের এই অবস্থা দেখার যেন কেউ নাই।
বিভিন্ন সময় ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসে একাধিক প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মন্ত্রী, এমপি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি দিয়েছিলেন নানান প্রতিশ্রুতি। ইতিমধ্যে পানি বৃদ্ধির সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন গজারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী, এ সময় তাঁরা ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনকালে ইসমানির চর গ্রামের নদীভাঙনের শিকার নদী তীরবর্তী মানুষের ভোগান্তির কথা শোনেন এবং এসব এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করা হবে বলে এমনটাই আশ্বাস দিয়ে বলেন, ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ স্থান পরিদর্শন করে গেছেন, বিষয়টি উনারা দেখছেন।
গত বছর গজারিয়ায় মেঘনা নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কারতে এসে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেছিলেন, বাংলাদেশের কোথাও নদী ভাঙ্গন থাকবে না, সে সময় তিনি আরো জানিয়েছিলেন গজারিয়ায় মেঘনা নদীর তীরবর্তী ভাঙ্গন প্রবন দেড় কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী প্রতিরক্ষামুলক বাঁধ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী বলেন, গত বছর পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক শামীম এখানে এসে স্থায়ী বাঁধের ঘোষণা দিয়ে গেলেও এখনো বাস্তবায়নের কোন লক্ষন নেই। বিগত দিনে দেখা গেছে বর্ষা এলেও টনক নড়েনা প্রশাসনের। নদীর পাড়ের মানুষকেই তখন তড়িগড়ি করে নদীর পাড়ে বাঁশ ও বালির বস্তা ফেলে বাপদাদার ভিটা রক্ষার বিফল চেষ্টা করতে হয়।
মুন্সীগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মানের জন্য আমরা জরিপ ও নকশা প্রণয়নের কাজ সম্পূর্ণ করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছি, আর অস্থায়ী ভাবে জিও ব্যাগের জন্য ফান্ড চেয়েছি। আশা করি অচিরেই ভাঙ্গন কবলিত অংশে কাজ শুরু করতে পারবো।
স্থানীয় সচেতন মানুষও মনে করে, অসহায় পরিবার গুলোকে রক্ষার্থে ভাঙ্গন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে এখনি কোন পদক্ষেপ না নিলে ভিটে মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসবে; অসহায় খেটে খাওয়া দিনমজুর পরিবার গুলো।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসূল বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সময় জার্নাল/এমআই