সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

শহীদুল্লাহ ফরায়জী'র কাব্যগ্রন্থ ঐশ্বরিক অক্ষর ও আমার ভাবনা

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১
শহীদুল্লাহ ফরায়জী'র কাব্যগ্রন্থ ঐশ্বরিক অক্ষর ও আমার ভাবনা

সাইফুল ইসলাম :

শহীদুল্লাহ ফরায়জী,  শ্রদ্ধাভাজন গীতিকার  কিংবা গীতিকবি হিসেবে আমার মনে দাগ কেটে যাওয়া সৃজনশীলতার প্রাণপুরুষ।  তাঁর ' চন্দ্র সূর্য  যত বড় আমার দুঃখ তার সমান' কিংবা ' জীবন যদি বদল করা যে,' 'মনটি যদি টাকার মতো কর্জ করা যেত'সহ অসংখ্য গান গীতিসাহিত্যে ইতোমধ্যেই তাকে শ্রেষ্ঠতরদের আসনে বসিয়েছে। কিন্তু তাঁর 'ঐশ্বরিক অক্ষর'  কাব্যগ্রন্থটি হস্তগত হওয়া পর একক কোনো অভিধায় এ মানুষটাকে  আখ্যায়িত করতে কেমন দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছি। 

এ কাব্যগ্রন্থে কবি হিসেবে তিনি তার যে প্রজ্ঞা, স্বকীয়তা,  দক্ষতা, গৌরব ও উচ্চতার  সাক্ষর রেখেছেন তাতে ওনাকে কেবল গীতিকার, গীতিকবি আক্ষা দেয়া আমার জন্য সঙ্গত নয়। তিনি একজন কবি একজন পুরাদস্তুর কবি।

'ঐশ্বরিক অক্ষর' হাতে পাওয়ার পর এর প্রতিটি কবিতা পড়ছি আর মনের মাঝে ভাবনার ইন্দ্রজাল রচনা করছি।  বইয়ের শেষদিকে  কবি আত্মকথন পর্বে  কবিতা সম্পর্কে নিজের বোধের কথা জানিয়েছেন দ্বিধাহীন চিত্তে। বলেছেন, " আত্মসুূূদ্ধির সর্বোচ্চ  উচ্চতায় পৌঁছতে, স্রষ্টার সুগন্ধ নিতে, দেবদূতের সাক্ষাৎ পেতে এবং মহামানবদের  মনোযোগ আকর্ষণে বিস্ময়কর চেতনা অনুসন্ধান করার প্রয়োজনে কবিতা। কবিতায়  'সত্য' ও 'মহৎ'কে রূপায়িত করতে চেয়েছি।"

আর কবির  এ ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে বইয়ের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি কবিতায়।  কাব্যগ্রন্হের শিরোনাম কবিতা 

' ঐশ্বরিক চুক্তি'তে কবি  অলৌকিক প্রার্থনায় বলেছেন,

"আমাকে শেখাও
বৈরী বাস্তবতার মোকাবেলা
শোক সংগীতের নীরবতা
আমাকে শোনাও
স্বর্গীয় সংগীতের সুরধারা..."

কাব্যগ্রন্হের  দুইশত পয়ষট্টিটির মতো কবিতায় বিধাতা থরে থরে কবির প্রার্থনা মঞ্জুর করেছেন।  কবি একের পর এক জীবনবোধ, মৃত্যুতাড়না, মানুষ- মানবিকতা,চিরকালীন আক্ষেপ- বিষাদের স্বরলিপি,সত্যের মহত্তম রূপ নিয়ে লিখেছেন। কোনো কোনো কবিতা তুলে ধরেছেন শোষিতের ইশতেহার। 

'ইশতেহার' কবিতায় তিনি উপস্হাপন করেছেন এক জগত জয়ী নির্দেশনা,

"নরখাদক বানানোর
কারখানা নিয়ে
কোনো রাষ্ট্র  আর হবে না
দুঃশাসন মনুষ্যত্বের অসন্মান নিয়ে
ভবিষ্যতে আর কোনো রাষ্ট্র হবে না
এ নির্দেশ উত্থাপন করছি।"

আবার,  কবিতায় বেদনার সৌরভ মেখে নিজেকে ঐশ্বর্যবান করার দুর্দমনীয় আকাঙ্ক্ষা থেকে কবি লিখেছেন,

"দুঃখ তুমি আমার
আশীর্বাদ হও
আকাশ ভেঙে
বৃষ্টির মতো
বিরতিহীন ঝরে পড়ো
আমার উপর
নরকের উৎসমূল খুলে
তরল আগুন ঝরুক আমার উপর
তুমি আমার আনন্দ হও।"

কাব্যগ্রন্থটিতে কবি কবিতার প্রচলিত কাঠামোকে ভেঙেছেন সাহসিকতার সাথে। প্রতিটি কবিতার শরীর একেক ধরনের- কোনোটি অণুকবিতা, কোনোটি দীর্ঘ প্রবহমান পঙক্তিমালা। তবে ভাবের গভীরতায় প্রতিটি কবিতাই নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর।
তিনি কবিতাকে অযথা দুর্বোধ্যতায় ভারাক্রান্ত করতে চাননি। এ বিষয়ে কবির যে মত তা হলো- কবিতার ছন্দমিল, অন্ত্যমিল- এসবের প্রতি আমার তেমন কোনো আকর্ষণ নেই। কারণ কবিতা শুধু শব্দ বা ছন্দের কোষাগার নয়। কবিতা উচ্চতম নৈতিক সৌন্দর্যের ভাণ্ডার। "  উল্লিখিত  নৈতিক সৌন্দর্য  কবি তাঁর বিশ্বাসে,  মননে ধারন করেন। এ জন্যই তিনি একাধিক কবিতায় আত্মার স্বরূপ উদ্ঘাটনে প্রয়াসী হয়েছেন।   আবার কখনো সাধনে ব্যর্থ হওয়ার পরিতাপ প্রকাশ করেছেন।

তাঁর কবিতা 'ঐশ্বর্যময় আত্মা'য় তার পরিতাপ,

"আমার আত্মার গভীরে
সত্য জন্ম নেয়
আমি সেই সত্য উন্মোচন করি
কিছু দিতে পারিনি।"

ছোট্ট  পরিসরে এ মহামূল্য গ্রন্হটির সব কবিতার বর্ণনা উপস্হাপন করা অসম্ভব। আর এ প্রচেষ্টা  আমার জন্য ধৃষ্টতাও হবে হয়তো। যারা কবিতার পাঠক, ভক্ত তাঁদের জন্য একটা নতুন আস্বাদে আপ্লুত হওয়ার আহ্বান রেখে যেতে পারি।

সবশেষে পাঠকদের আশ্বাস দিতে পারি, একজন বহুমাত্রিক কবি এখানেই থেমে থাকার নন। বাংলা কবিতা তাঁর কাছে অনেক কিছু পাওয়ার বাকি আছে। কবির তৃষ্ণাও অনন্ত, অসীম।

এতকিছুর পরও এক দুর্নিবার হাহাকার রেখে গেছেন, আমার যতটুকু আত্মোপলব্ধি, নৈতিকতার যতটুকু তৃষ্ণা, আত্মার শুদ্ধতায় পৌঁছানোর জন্য যতটুকু আকাঙ্ক্ষা এবং আমার ভাবজগতের যতটুকু তাণ্ডব তা ভাষার অক্ষমতায় প্রকাশ করতে পারিনি- মাত্র ভগ্নাংশ দিয়ে তা প্রকাশ করেছি। কবির এ দুর্নিবার  তৃষ্ণা যতটুকু মিটবে আমাদের আধুনিক কবিতাও ততটুকু ঋদ্ধ হবে।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল