সাতক্ষীরা সংবাদদাতা : সাতক্ষীরা শহরের মেহেদীবাগ এলাকায় নির্মাণাধীন বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও মারপিটের ঘটনায় এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে পড়েছেন লন্ডন প্রবাসীর স্ত্রী শামীমা ইয়াসমিন। আসামীরা মামলা তুলে নিতে তাকে নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে ও তার বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ কথা বলে মিথ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
মামলার এজাহারে বর্ণিত ঘটনায় জানা যায়, লন্ডন প্রবাসী মোঃ সাইফুজ্জামান সবুজের স্ত্রী শামীমা ইয়াসমিন সাতক্ষীরার শহরের মেহেদীবাগ (রসুলপুর) এলাকায় একটি বাড়ি নির্মাণের কাজ করছেন। একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে নির্মাণাধীন ওই বাড়ি সংলগ্ন শাহিদের বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করেন তিনি। তার নির্মাণাধীন বাড়ির সামনে আসামী রাশিদ হাসান বাবুর বোন আঞ্জুমান আরার জমি আছে। প্লট হিসেবে জমি কেনায় এলাকার অন্যান্যদের যাতায়াতের জন্য তার বাড়ীর সামনে দিয়া ১২ ফুট চওড়া একটি রাস্ত আছে। কিন্তু সম্প্রতি উক্ত রাস্তার অংশ বিশেষ দাবী করে আসামীরা তার নির্মাণাধীন বাড়ির গেটের মুখ জবর দখল করে পাকা প্রাচীর নির্মাণ করায় এলাকাবাসী তা ভেঙ্গে দেয়। এঘটনার পর থেকে আসামীরা শামীমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং বিভিন্ন সময় তােেক হুমকি ধামকি দিতে থাকে ও ২লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। গত ১১ সেপ্টেম্বর সকালে শহরের কাটিয়া এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে রাশিদ হাসান বাবু প্রবাসীর স্ত্রীকে দেখে ২লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে বলেন, টাকা না দিলে এখানে বাড়ি করা যাবেনা। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেয়ায় গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে প্রতিবেশী আঞ্জুমান আরার ভাই রাশিদ হাসান বাবুর নেতৃত্বে ২৫/৩০ জন হাতে দা, শাবল, লোহার রড নিয়ে তার নির্মাণাধীন বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ওলুটপাট করে। এসময় বাঁধা দিতে গেলে তারা শামীমা ইয়াসমিনের বৃদ্ধ পিতা মোঃ আব্দুল মজিদের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে ও তাকে এবং তার বৃদ্ধা নানী মিসেস হাসনা বানুকেও এলোপাতাড়ি মারপিট করে শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। এসময় রাশিদ হাসান বাবু তার পিতার পকেটে থাকা নগদ ২৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং নির্মাণাধীন বাড়ীর বিভিন্ন প্রকার জিনিসপত্র ভাংচুর করে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধন করে। পরবর্তীতে তার পিতার শারিরীক অবস্থা অবনতি হওয়ায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়।
শামীমা ইয়াসমিন বলেন, এই ঘটনায় শনিবার সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করি। (মামলা নং ৫৭ নং)। খবর পেয়ে আসামী রাশিদ হাসান বাবু মামলা তুলে নিতে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে এবং বিভিন্ন জায়গায় তার বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ কথা বলে তাকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে। বর্তমানে আসামীর হুমকি ধামকির কারণে কন্যা সন্তানকে নিয়ে তিনি চরম নিরাপত্তহীনতায় ভুগছেন। যে কোন সময় সন্ত্রাসী আসামীরা আবারও আমাদের উপর হামলা করতে পাওে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন।
শামীমা ইয়াসমিন আরও বলেন, ২০১৮ সালে মশরুল আলম ও নাদিয়া আলমের কাছ থেকে সাড়ে নয় শতক জমি ৫০ লাখ টাকায় কেনন তারা। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে তারা সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। তাদের বাড়ির রাস্তার উত্তর পাশে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আঞ্জুমানারা খাতুনের প্রায় সাত শতক জমি রয়েছে। ওই জমিতে রাস্তা বাদ দিয়ে প্রাচীর ছিল। তারা (শামীমা) বাড়ি শুরু করার কয়েকদিন পর আঞ্জুমানারা ওই প্রাচীর ভেঙ্গে দিয়ে কয়েক মাস পর রাস্তার দিকে ছয় ফুট এগিয়ে এসে আবারো প্রাচীর নির্মাণ করেন। এ নিয়ে তাদেও মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। বিষয়টি নিয়ে কয়েক মাস আগে তিনি থানায় অভিযোগ করলেও প্রতিপক্ষ আঞ্জুমানারা থানায় হাজির হয়নি। একপর্যায়ে তার ভাই রাসেদ হাসান বাবু তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে হুমকি ধামকি দিতে থাকেন। কয়েক মাস আগে তিনি (শামীমা) পৌরসভার আমিন ও পৌর কাউন্সিলর শফিক উদ দৌলা সাগরসহ গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তার উপস্থিতিতে মাপ জরিপ শেষে বাড়ি নির্মাণ কাজ চলাকালে নিজের বাড়ির সামনের অংশে রাস্তার কিছু অংশে প্রাচীর দিয়ে দেন। শুক্রবার তারা ফের রাস্তার প্রাচীর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাসেদ হাসান বাবু নিজেকে যুবলীগের সদস্য দাবি করে বলেন, তার বোন আঞ্জুমানারা ১৯৯৯ সালে রাস্তাসহ ৭ দশমিক ৪৭ শতক জমি কেনেন আব্দুস সবুরের কাছ থেকে। বোনের জমির রাস্তার বিপরীতে ২০১৮ সালে জমি সাড়ে নয় শতক জমি কেনেন সাইফুজ্জামান দম্পতি। তাদের জমির শেষ সীমানা পর্যন্ত নকশায় রাস্তা নেই। যদিও বাড়ি করার সময় সাইফুজ্জামান সবুজকে ছয় ফুট রাস্তা ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সাইফুজ্জামান ওই রাস্তা নিজের দাবি করে নির্বাচন চলাকালে তিনি ব্যস্ত থাকায় তড়িঘড়ি করে পাঁচ ফুট উঁচু করে প্রাচীর দিয়ে নেন। প্রশাসনের কাছে বারবার অভিযোগ করার পর শামীমা তাতে কর্ণপাত না করায় শুক্রবার সকালে ওই প্রাচীর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আইনে তারা রাস্তা পেলে অবশ্যই দিয়ে দেওয়া হবে।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলওয়ার হোসেন বলেন, শহরের মেহেদীবাগ এলাকায় নির্মাণাধীন বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও মারপিটের ঘটনায় মামলা গ্রহণ করা হয়েছে তদন্ত চলছে।
সময় জার্নাল/আরইউ