মোঃ আশ্রাফুল আলম ভূঁইয়া :
বৈশ্বিক মহামারীর প্রভাবে অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে দীর্ঘ প্রায় দুবছর বন্ধ রাখা হয়েছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার পর গত ১২ ই সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও মহামারীতে প্রতিষ্ঠানের ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, শিক্ষকদের বেতনসহ ইত্যাদি খরচ চালাতে না পারায় আর্থিক সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হওয়া হাজারো প্রতিষ্ঠান।
একটা বেসরকারী টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদনে দেখা গেছে শুধু চট্টগ্রাম বিভাগেই বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ১০০০। এতে বুঝা যাচ্ছে দেশজুড়ে এমন আরো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে আর্থিক সংকটে বন্ধ হয়ে যাওয়া।
প্রিন্সিপালদের ভাষ্যমতে শিক্ষকরা বেতন না পাওয়াই অনেকে পেশা পরিবর্তন করেছে, অনেকে নগর থেকে গ্রামে চলে গিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের সাথে প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় দুরত্ব বাড়াতেও এমন অবস্থা হয়েছে তবে মূল সমস্যাটা হল আর্থিক সংকট। এই বন্ধ হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীও ছিল অনেক।
কিন্ডারগার্টেনগুলোতে এটার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখলেও তাদের শিক্ষকদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে,অনেকে আছে বিনা বেতনেই কাজ করছে। ঠিক এমন বাস্তবতায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালু করতে প্রয়োজন সরকারী উদ্যোগ। এতোগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রভাবে বেকারত্বের চাপ বাড়বে শুধু তা-ই নয় আরো অনেকভাবে জনজীবনে এর প্রভাব পড়বে। তাই সরকার সহজ শর্তে ব্যাংক লোন দিয়ে এবং বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য বিশেষ কোন সুবিধার ব্যবস্থা করে আর্থিক সংকটে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করতে সহায়তা করতে পারে।
কিন্ডারগার্টেন ঐক্যপরিষদও ঠিক এমনটাই মনে করে পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতির বক্তব্যে সাক্ষাৎকারে ফুটে উঠেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আবার শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হোক, দীর্ঘদিন বেতন বঞ্চিত শিক্ষকদের মুখে আবারো হাসি ফুটুক, শিক্ষার্থীরাও প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করার ঝামেলা না পোহাতে হোক। এই সেক্টরের প্রতি সরকারের সুনজর সব সমস্যার সমাধান করে আবারো প্রান চাঞ্চল্য ফিরে আনতে পারে।
বাংলাদেশে বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলায় আমাদের সরকারের সাফল্য প্রশংসনীয়। সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে ধৈর্য্য, সাহসীকতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে বলেই হয়তো আমরা বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছি। না হয় ভারতের মত আক্রান্তের সংখ্যা হলে আমরা তা মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যেতো।
তাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এই সেক্টরে থাকা মানুষগুলোর উপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় সরকারী সহায়তা।
লেখকঃ
মোঃ আশ্রাফুল আলম ভূঁইয়া
উপদেষ্টাঃ 'বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম' (বৃহত্তর চট্টগ্রাম শাখা)।