তাজিকিস্তানের ছোট্ট পাথুরে নদী পাহাড়ের কোল ঘেঁষে যে গাঁয়ের বুক চিরে বয়ে গেছে,
আমি সেখানেই থাকি,সেই মেয়েটির সাথে,
যে রোজ পাঁচটিবেলা ওজু করতে আসে বরফ গলানো জলে,
তার পায়ের চিহ্ন পড়ে থাকে পাথুরে বালুর বুকে।
কঙ্গোর বনপথে বুনোফল,বুনোশাক, ঝরে পড়া নারকেল
খুঁজে ফেরে যে মেয়েটি, কোঁচড়ে খাবার তার,
পিঠে বাঁধা মানবশিশু, আযান শুনলে সে
একছুটে ঘরে ফেরে, কোঁকড়ানো কালো চুল ওড়নায় ঢাকে।
আমি তার সাথে থাকি, খাবার খুঁজতে থাকি, আযান শুনতে থাকি,
তার সাথে ঝুঁকে পড়ি কাবার দুয়ার পানে, প্রতিপালকের আহবানে।
কর্ডোভার বুক চিরে, মালাগার কোল জুড়ে
যে জাহাজ ছুটে চলে অবিরাম
পতপত করে ওড়ে বিজয়ের পতাকা সকালের স্বর্নালী রোদ্দুরে
আমি সেই নাবিকের,মায়ের মমতা হয়ে মিশে থাকি
আল হামরার রঙে রঙিন সে অঙ্গনে
আভিজাত্যের মহা আলোকিত মোড়কে।
আমি বসফরাসের ঢেউয়ে রোদ্রের খেলা দেখি
অনায়াস অবসরে, কফির পেয়ালা হাতে।
আইয়ুব মসজিদে আযানের সুর ভাসে,
আমার হৃদয়াকাশে শান্তির সুবাতাস বয়ে যায়।
আয়া সোফিয়ার বুকে শৃঙ্খল ভাঙবার জুম্মার সালাতে,
আমিও ছিলাম সেই ইতিহাস তৈরিতে আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে।
আমি থাকি সিরিয়ার উদ্বাস্তু শিবিরে,
গৃহহীন গৃহিণীর কান্নার নোনা জলে
ধ্বংসের আগ্রাসী বোমার আঘাতে, যার হারিয়েছে সংসার,
স্বামী, সন্তান কি'বা একখানি পা
আমি তার আত্মায় মিশে থাকি,
তার মতো ভালোবাসি সিরিয়ার জনপদ, মুক্ত আকাশ।
আমি রামাল্লার মহল্লার আদিম নিবাসী
এক স্বাধীনতাকামী নারী,
মুক্ত ফিলিস্তিন, প্রিয়তম স্বদেশ আমার,
তোমার বুকের মাঝে আজও ঘুমিয়ে আছে, কতশত পয়গম্বর
আমি তাঁদেরই বংশধর, তাঁদেরই স্বপ্ন নিয়ে পতাকা ওড়ায়।
যারা একবার মরে যায়, বারবার বেঁচে ওঠে,
মৃত্যু যাদের ভয়ে কাঁপে
আমি তাদের কন্যা-জায়া-জননী বা ভগিনী।
মৃত্যুর সাথে যার আমৃত্যু বসবাস, আমি সেই মৃত্যুজয়ীর সাথে থাকি।
আমরা বসত করি পৃথিবীর প্রাঙ্গণে, প্রতিটি অঙ্গনে,
প্রতিটি নারীর সাথে একই স্বপ্নের রঙে রঙিন হয়ে।
আমাদের আত্মারা একসাথে বেঁচে থাকে, একই চিত্র আঁকে
পৃথিবীটা হয়ে থাক শান্তির সংসার,
মমতার মাধুর্যে একসাথে গান গায়,
স্বপ্নটা ছুটে যায় ফিরদাউসে।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১।