প্রতিদিন ছেলেটাকে দেখি
একরাশ কালো চুল চুড়ো করে বাঁধা,
দুআঙুলে সেঁটে থাকে ধোঁয়ার কুন্ডলি,
চারপাশ ধোঁয়া ধোঁয়া কুয়াশায় ভরা
যখন যেখানে থাকে বিষাক্ত বাষ্পের সর্পিল নিঃশ্বাস
ধোঁয়ার সঙ্গে তার বসবাস।
মাঝরাতে সিঁড়িটাতে পায়ের শব্দ শুনি
অস্থির, এলোমেলো, ছন্দহীন।
তীব্র শীতের রাতে অথবা বজ্রপাতের ঘোর আঁধারে
আমি তার বিধ্বস্ত জননীকে উদ্বাস্তুর মতো
বিবর্ণ জানালায় দেখি।
শেষ রাতে আমি রোজ চিৎকার শুনি,
জননীর কাতরতা, তীব্র বিতর্ক
স্নিগ্ধ রজনীগুলো কুয়াশায় ভরে যায়,
ক্লান্ত মাতৃত্বের দীর্ঘশ্বাসে ভরা বিষাক্ত কুয়াশা।
আমি তাকে অনায়াসে বৃদ্ধ ভিখারিটাকে
আঘাত করতে দেখি।
শীষ দিতে দিতে সে চলে যায়
বাইকের ধাক্কায় উল্টানো রিকশায়
ভাঙাচোরা শিশুটি কাতরায় তখনও,
বাইকের চাবি তার আঙুলে ঘুরতে থাকে
ভাবলেশহীন মুখ রোবটের মতো।
ও কি আকাশ দেখেনা তখনও?
কালো রোদচশমার আঁটসাঁট ফাঁক গলে
সূর্য কি ছোঁয়নি কখনও?
জানাশোনা নেই তার ভোরের হাওয়ার সাথে,
পাখির গানের সাথে, প্রভাতের সূর্যের সাথে।
ও যে ভোরকে দেখেনি কখনও।
কত রঙ খেলে রোজ পূবের আকাশ জুড়ে
সে রঙ লাগেনি গায়ে এখনও।
আহা! ও যে বৃষ্টিকে চেনেনা,
মাখেনা আদুল গায়ে বৃষ্টির আহ্লাদী ছোঁয়া।
দুপুর বা রাত্তিরে ভিজতে ভিজতে ফেরে,
কাঁপতে কাঁপতে ফেরে
ঝোড়ো কাকের মতো ডানাভাঙা হয়ে,
বৃষ্টির আঘাতে ভেজা কাকতাড়ুয়া তবু,
বৃষ্টি ছোঁয়নি তাকে কখনও।
সূর্য চেনেনা যাকে, বৃষ্টি ছোঁয়নি যাকে,
পাখিদের গানে যার নাম নেই,
একদিন ফিরে আসে প্রাণহীন চাদর হয়ে,
প্রতিপক্ষের গুলি কিংবা সড়ক দুর্ঘটনা
কেউ মনে রাখেনি, কেউ তাকে ডাকেনি,
শোকের সাগরে কেউ ভাসেনি
শুধু রোজ রাতে মা তার ডুকরে ডুকরে কাঁদে
দীর্ঘশ্বাসে ভরা বিধ্বস্ত রজনী।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
৪ অক্টোবর, ২০২১।