শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট: দ্বিতীয় পর্যয়ের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক পেতে আবেদন করেছেন ৩৮জন চেয়ারম্যান প্রার্থী।
জানা গেছে, ১১ নভেম্বর ভোট গ্রহনের দিন নির্ধারণ করে ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেছে নির্বাচন কমিশন। এ তফসিলে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নকে যুক্ত করা হয়েছে। তফসলি ঘোষনার পর থেকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা নিরব থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নৌকার মনোনায়ন পেতে নেতাদের দুয়ারে ছুটছেন নবীন-প্রবীন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ চেয়ারম্যান প্রার্থী নব্য আওয়ামীলীগ। এ ক্ষেত্রে নৌকার মাঝি নির্বাচনে অনেকটাই বেগ পেতে হচ্ছে দলটির শীর্ষ নেতাদের। তবে সাধারন ভোটারদের দাবি যোগ্য ও পরিচ্ছন্ন প্রার্থীর হাতেই যেন সরকার দলীয় প্রতীক দেয়া হয়। তৃণমুলের সমর্থন নিয়ে নৌকার মাঝি চুড়ান্তের দাবি তৃনমুল আওয়ামীলীগের।
লালমনিরহাটের ইউপি নির্বাচনে আদিতমারী উপজেলা বহুলাংশে আলোচিত। সমাজকল্যান মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নির্বাচনী আসন এ উপজেলা। মন্ত্রীর আসনে নৌকার ভরাডুবি হলে দলের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে। তাই নৌকার মাঝি নির্বাচনে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
উপজেলার সব থেকে আলোচিত মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এ ইউনিয়নে নৌকার মাঝি হতে চেষ্টা করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী। যিনি গত ইউপি নির্বাচনে বিএনপি'র সভাপতির পদ ছেড়ে আওয়ামীলীগের যোগদান করে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেন। মৃত ব্যাক্তির বয়স্ক ভাতার টাকা নিজের মোবাইল নম্বরে চলে যাওয়া নিয়ে বেশ সমালোচনায় পড়েন বর্তমান চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী। স্থানীয় আওয়ামী পরিবারের বড় অংশের নেতা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সাবেক ইউপি সদস্য মমতাজ উদ্দিনও নৌকার মাঝি হতে আবেদন করেছেন। তবে নৌকায় নতুনত্বের দাবি ইউনিয়নটির তৃণমুল নেতাকর্মীদের।
উপজেলা সদরের ভাদাই ইউনিয়ন পরিষদে উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান কৃষ্ণকান্ত বিদুর নৌকার মনোনায়ন চেয়ে আবেদন করেছেন। এ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান রোকনুজ্জামান রোকন জাতীয় পার্টির হলেও নৌকার মাঝি হতে আবেদন করেছেন। আওয়ামীলীগে আনুষ্ঠানিক যোগদান না করলেও তিনি নিজেকে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক দাবি করেন। উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রবিউল ইসলাম বাবুলসহ ৭জন এ ইউনিয়নের নৌকার মাঝি হতে চেষ্টা করছেন।
উপজেলা বিএনপি'র সভাপতি পদ ছেড়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করে বিগত ইউপি নির্বাচনে নৌকা নিয়ে জয়লাভ করা ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী এবারও নৌকার মাঝি হতে চান। তিনি সদ্য ঘোষিত জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি পদ পেয়েছেন। বিগত ইউপি নির্বাচনে বিএনপি থেকে আসা সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সোহরাব এবং সারপুকুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মনসুর উদ্দিনও নিজেদের পুর্বের আসন ফিরে পেতে নৌকার মাঝি হতে আবেদন করেছেন।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মোর্শেদুজ্জামান মোরশেদ ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদ প্রত্যাশী মাহমুদ ওমর চিশতী কমলাবাড়ি ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের আবেদন করেছেন। বিএনপি'র শক্তঘাঁটি দুর্গাপুর ইউনিয়নে নৌকার মাঝি হতে সাবেক বিএনপি'র নেতা ফিরোজুর রহমান নান্নু, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আসাদুজ্জামান ভুট্টা নান্নুসহ ৭জন নৌকা জন্য আবেদন করেছেন।
পলাশী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান শওকত আলী ও বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ মোল্লাসহ ৩ জন পলাশী ইউনিয়ন থেকে নৌকা প্রতীকের জন্য আবেদন করেছেন।
এভাবে নবীন, প্রবীন এবং ত্যাগী ও নব্য মিলে উপজেলার ৮টি পদের বিপরীতে নৌকার মাঝি হতে ৩৮ জন আবেদন করেছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগ এ সকল আবেদন যাচাই-বাছাই করে জেলা কমিটির কাছে পাঠিয়েছে। জেলা কমিটি তা বেন্দ্রীয় কমিটিতে জমা করবেন।
ভাদাই ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্পাদক ইকবাল হোসেন বলেন, তৃণমুল আওয়ামীলীগের সমর্থন নিয়ে নৌকা প্রতীক দেয়া উচিৎ। তবে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত হবে। নয়তো হাইব্রীডদের হাতে নৌকা চলে গেলে আওয়ামী পরিবারের অনেকেই নৌকার বিপক্ষে কাজ করবে। সেক্ষেত্রে নৌকার ভরাডুবি শঙ্কা রয়েছে।
আদিতমারী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, ৮ টি ইউনিয়নের ৮ টি পদের বিপরীতে ৩৮ টি আবেদন জমা পড়েছে। এসব যাচাই বাছাই করে জেলা কমিটির মাধ্যমে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্র থেকে মনোনায়ন চুড়ান্ত করা হবে।
সময় জার্নাল/এমআই