যদি বলে আমিও
মনে কর মার্চের এক উষ্ণ হাওয়ার সন্ধ্যা,
তুমি বসে আছো যেন শিন নদীর ধারে
মিষ্টি চায়ের ঘ্রাণ বাতাসে উড়ছে,
উড়ছে তোমার বইয়ের পাতা, স্কার্ফ, রাতজাগা ফড়িঙের দল।
তুমি চলে গেছো কোন সুদূরে,যেখানে মা হালিমা
তাঁর ছোট্ট ছেলেটাকে ডাকছেন
হঠাৎ চমকে ওঠো টেবিলের ও প্রান্তে
সোনালী চুলের এক ঝকঝকে কন্যা
তুমি বুঝি মুসলিম? যদি বলে আমিও -
হৃদয় কি কাঁপবে না অব্যাক্ত আবেগের সুমধুর আঘাতে?
ভাবনার অজান্তে তক্ষুনি সে কি হবে আত্মার আত্মীয়?
মনে কর তুমি আছো মস্কোভা নদীতে
ডিসেম্বরের এক বরফ মোড়ানো ভোরে, আনমনে হাঁটছো,
মস্কোভা হয়ে গেছে মজবুত রাজপথ,
তুমি ঠিক হাঁটছো না, তুমি যেন শুনছো
বেলালের সেই সুর, সে আওয়াজ সুমধুর
কল্যাণের পথে এসো, সফলতার পথে এসো
মনের অজান্তে তোমার কন্ঠ যদি গুন গুন গেয়ে ওঠে
সেই সুর, চীর শান্তির শুভ বার্তা
যদি শোন পাশ থেকে নীল চোখ কন্যাটি
তুমি বুঝি মুসলিম? যদি বলে আমিও -
থমকে কি দাঁড়াবেনা? শিহরণ বইবে না হৃদয়তন্ত্রী জুড়ে?
মনে কি হবেনা তাকে শত বছরের চেনা আত্মার আত্মীয়?
মনে কর তুমি আজ ডরমিটরিতে আছো,
কোত্থাও যাওনি,
টোকিও শহরটাও সাপ্তাহিক ছুটিতে,
পড়ছো না, রাঁধছো না, যেন কোন কাজ নেই
ভারী উদাসীন আজ কি যে মনে পড়ছে,
আনসার - মুহাজির অবাক শব্দ দুটি
চেতনার সমুদ্রে বইছে প্রবল ঢেউ
কোন সে আবেগে তাঁরা একসাথে বাঁচলো?
কি আশায় সব দিল অন্যকে বিলিয়ে?
সে মমতা, ভালোবাসা কোথায় হারিয়ে গেল?
কি করে ফিরবে ফের ভাতৃত্বের টান?
বড় অস্থির মন কেবলই ভাবছো তুমি
হঠাৎ কাউকে দেখে নেকাবটা টানলে,
ও পাশের ব্যালকনি লালচে রঙের মেয়ে
তুমি বুঝি মুসলিম? যদি বলে আমিও -
কান্না কি আসবে না? চোখের পাতা কি তবু ভিজবেনা আবেগে?
তক্ষুনি মনে হবে, আনসার-মুহাজির
আমাদেরই মাঝে আছে,
পৃথিবীর আদিতে ছিল, অন্তেও রয়ে যাবে।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
৬ অক্টোবর, ২০২১।