নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামীলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে বিবদমান দ্বন্দ্বের জেরে কাদের মির্জার প্রতিপক্ষ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজম পাশা চৌধুরী রুমেলদের বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত একটি নূরানী মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (১০ অক্টোবর) সকাল পৌনে ৮টার দিকে উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ডের কামাল পাশা তা’লীমুল কোরআন মাদরাসা নামে এ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মাদরাসা সূত্র জানায়, ২০১০ সালে এ মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে মাদরাসাটিতে প্রথম জামাত থেকে পঞ্চম জামাত পর্যন্ত ১৯৬জন ছাত্রছাত্রী লেখা পড়ে করে এবং মাদরাসাটিতে ৮জন শিক্ষক রয়েছে।
কামাল পাশা তা’লীমুল কোরআন মাদরাসা মুহতামিম মাওলানা মোছলে উদ্দিন সুমন জানান,প্রতিদিনের ন্যায় আজকে সকাল পৌনে ৮টার দিকে মাদরাসার ছাত্রছাত্রী মাদরাসায় আসছিল। আসায় পথে সোহেল চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি ছাত্রছাত্রীদেরকে হুমকি ধামকি দিয়ে মাদরাসায় আসতে বাঁধা দিয়ে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এ সময় কিছু ছাত্রছাত্রী ভয়ে আর মাদরাসার দিকে আসে নাই। অভিভাবক মহলের মধ্যে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে তারা আতঙ্কিত হয়ে কিছু ছেলে-মেয়েদেরকে মাদরাসায় আসতে দেয়নি। তিনি আরো জানান, সোহেল চৌধুরী শিক্ষকদেরকে মাদরাসা থেকে চলে যেতে বলেছে। না হলে অসুবিধা হবে বলে হুমকি দেন। এ সময় তিনি শিক্ষকদেরকে অকথ্য ভাষায় কথাবার্তা বলেছেন। শিক্ষকরাতো এখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে শিক্ষকতা করে তাই ভয়ে তারা মাদরাসা থেকে চলে যায়। পরে আমি ছিলাম মাদরাসাতে। আমাকে বলতেছে আপনিও চলে যান, অসুবিধা হতে পারে। আপনার ভালোর জন্য বলছি, এখানে সমস্যা হবে। পরে আমিও মাদরাসা বন্ধ করে চলে আসি। আমি চলে আসার পর দুুপুর ১টার দিকে মাদরাসার নাম ফলকে কাঁদা মাঠি লেপে দেয় সোহেল চৌধুরী।
মাদারাসা পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজম পাশা চৌধুরী রুমেল অভিযোগ করেন,পূর্ব শক্রতার জের ধরে কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ সহযোগী বসুরহাট পৌরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন শিমুলের ভাই মেয়র অনুসারী সোহেল চৌধুরী ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ছাত্রছাত্রীদের হুমকি ধামকি দিয়ে মাদরাসায় আসতে দেয়নি। এছাড়াও শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে গালমন্দ করে মাদরাসা থেকে বের করে দেয়। তাৎক্ষণিক স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করে কোন প্রতিকার না পেয়ে আজকে সকাল ৮টা থেকে মাদরাসার মুহতামিম মাদ্রাসা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ রয়েছে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজম পাশা চৌধুরী রুমেলের ভাতিজা মঞ্জিল চৌধুরী তাদের বাড়ির বসুরহাট পৌরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আনোয়ার হোসেন চৌধুরী শিমুলের (৪৩) মাথা পাটিয়ে দেয়। বিষয়টিকে এখন রাজনৈতিক সংঘর্ষে রুপ দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনার জের ধরে গতকাল শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে কাদের মির্জার অনুসারীরা রুমেল চৌধুরীর বড় ভাই পরিবহন নেতা আকরাম উদ্দিন সবুজের বসুরহাট নতুন বাস স্টানে অবস্থিত ড্রীম লাইন বাস কাউন্টারে অগ্নি সংযোগে করে। একই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি খিজির হায়াত খানের বাসায় ককটেল হামলা চালায় এবং রোববার সকাল পৌনে ৮টার দিকে আজম পাশা চৌধুরী রুমেলের বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাটি বন্ধ করে দেয়।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, হামলার ঘটনার জের ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কাদের মির্জা ও খিজির হায়াত খান-মিজানুর রহমানের অনুসারীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তবে যে কোনো মুহূর্তে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সোহেল চৌধুরী অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, গতকাল আমার ভাইয়ের মাথা পাটিয়ে দিয়ে ভয়ে তারা মাদরাসা বন্ধ রেখেছে। মাদরাসা বন্ধ রেখে আমাদেরকে উল্টো ফাঁসানোর পাঁয়তারা করছে তারা।
এ বিষয়ে মতামত জানতে দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার ব্যবহৃত মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.সাইফুদ্দিন আনোয়ার জানান, খবর পেয়ে পুলিশ মাদরাসাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি পুলিশ খতিয়ে দেখছে,পরবর্তীতে এ বিস্তারিত জানানো হবে।
সময় জার্নাল।আরইউ