ইমরান মাহফুজ: ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্ররাজনীতি দুটি এক জিনিস নয়। একটি নিজেদের অধিকার আদায় ও বিকশিত হবার জন্য গবেষণার সুযোগ নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। তাঁর জন্য ছাত্র সংসদ ও নানান সংগঠনের মাধ্যমে নেতৃত্ব তৈরিতে সহায়ক।
অন্যটি বড়দলের শাখা- তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন। নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার করে মাকালফলের জীবন। অর্থাৎ ছাত্ররাজনীতির নামে হত্যা–খুন, হানাহানি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, রাহাজানি। সম্প্রতি বুয়েটে আবরার ফাহাদসহ অজানা হত্যা তারই নৃশংস রূপ। এটা যে কোন সময়ে যে কোন দলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ফলে বর্তমানে ছাত্ররাজনীতির নামে যে ধ্বংসাত্মক ও রক্তাক্ত কর্মকাণ্ড চলছে, তা মানা অসম্ভব।
এই প্রেক্ষাপটে দেখবো—
পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনতা যুদ্ধে ছাত্রসংগঠনগুলোর অবদান সবাই জানে। কিন্তু ১৯৯১ সালের পর থেকে ছাত্র রাজনীতির ভাবমূর্তি ধরে রাখা সম্ভব হয় নি। কিন্তু কেন লাইনচ্যুত ছাত্র রাজনীতি?
আমাদের পূর্বপুরুষরা দেশ মুক্তির জন্য (ষাটের দশক) যা করেছেন, তার নাম ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু, এই শব্দটি পরবর্তীকালে যখন ছাত্ররাজনীতিতে রূপ লাভ করলো, তখন এখানে যুক্ত হয় মূলত দলের লেজুড়বৃত্তি এবং ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নেতাকর্মী বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা পরিণত হন প্রতিপক্ষ দমনে সরকারের পেটোয়া বাহিনীতে।
সেই সঙ্গে দলের পদ-পদবি নিয়ে ছাত্র রাজনীতিকে রাতারাতি টাকা কামানোর মেশিনে পরিণত করা হয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আবরার হত্যা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিনের লালিত মরণব্যাধির লক্ষণ মাত্র। এর প্রতীকার সরকারেরই হাতে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে। দেশের ক্রান্তি লগ্নে শিক্ষার্থীরাই বারবার সোচ্চার হয়েছেন, কার্যত জাতিকে পথ দেখিয়েছেন, সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন। আজ তাদেরই উত্তরসূরিদের ব্যবহার করা হচ্ছে হীন রাজনৈতিক স্বার্থে। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের প্রক্রিয়ায় তারা অন্যতম সহযোগীতে পরিণত হয়েছে।
সমাধান ;
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং নির্বাচনে দলীয় রাজনীতির প্রভাব না থাকলে প্রকৃত শিক্ষার্থীর মধ্যে নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। তারাই নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলবেন। বরং কেন্দ্রীয় রাজনীতির হস্তক্ষেপ না থাকলে ক্যাম্পাসে হানাহানি ও রক্তারক্তির অবসান হবে। সময় এসেছে ছাত্র সংসদ সক্রিয় ও সাহিত্য সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, ঐতিহ্য, অর্থনীতি ও সামাজিক ইতিহাস গবেষণা বিষয়ক সংগঠনের নেতৃত্ব দেয়া নেয়ার। আর তাতে গড়ে উঠবে নতুন প্রজন্ম নিয়ে ভাবার।
নোট অব ফোকাস :
বিশ্ববিদ্যালয় এসে আবার জেলা ভিত্তিক সংগঠন! কেবলমাত্র বাংলাদেশেই এমন নিদারুণ চিত্র যাই হউক, এই সংগঠনের কাজ কী! দেখবেন তারা ভর্তি পরীক্ষার সময় টেবিল নিয়ে বসে সেবার নামে নাম তালিকা করে। জেলার ভাইদের থেকে টাকা নিয়ে ইফতার পার্টি করে। ইদানীং দেখা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চমানের শিক্ষার্থীরা উপজেলা ইউনিয়নের নির্বাচনে ব্যাপক অবদান রাখছে। এইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি এগিয়ে যাচ্ছে।
অথচ তারা চাইলে উচ্চতর গবেষণা সম্পাদনা, পাঠ উন্মোচন, বাস্তবিক অর্থে পাঠচক্র করে সংগঠনের মর্যাদা রক্ষা করতে। কিন্তু তা না করে নিজের শক্তি ভুলে দলের শক্তিতে হারায়!
সময় জার্নাল/এমআই