..........
আমরা ছিলাম একই গাঁয়ে, একই মাঠের এপার ওপার,
ঘর দুয়ারের একই গড়ন,
ভাই - বেরাদার, বন্ধু - স্বজন, চেনা, জানা কতই আপন।
একই ভাষা, একই আশা, সুখে থাকার চেষ্টাগুলো,
সবই ছিল একই বরণ।
ওই পাড়াতে মেয়ের বিয়ে, ঢাকের আওয়াজ, সানাই, বাঁশি
এই পাড়াতে হাওয়ায় হাওয়ায় সেই খুশিরই উজান ভাসি।
ওইখানে কেউ মারা গেলে,
এইখানেতে মন ভালো নেই,
ওই পাড়াতে মহামারী এই পাড়াতে ছড়িয়ে যাবেই।
খাওয়া - পরা, আচার - বিচার, ধর্মাচরণ কত বিভেদ,
ওরা যখন শাঁখ বাজাবে, এই পাড়াতে আযান হবেই।
একই গাঁয়ে জীবন যাপন,
হাটে, মাঠে, নদীর ঘাটে একই প্রয়োজনে গমন।
বামুন পাড়ার কৃষ্ণকলি আমার ভারি বন্ধু হলো,
খেলতে গেলে আড়ি হবেই আবার ভারি ভাবও ছিল।
আমায় যখন মক্তবে রোজ ভোরের বেলা আরবি পড়ায়,
ও বসে ঠিক আমার পাশে ফিসফিসিয়ে সুরটি মিলায়।
পড়া শেষে চুমু দিয়ে আমপারাটি জড়িয়ে বুকে,
চেয়ে দেখি ও চেয়ে রয় কি সম্ভ্রমে আমার দিকে!
আমার কোনো অসুখ হলে কৃষ্ণকলি শুকনো মুখি,
আমার ব্যাথায় কাতর যেন এই জগতে সবচে দুঃখী।
জানতে ভারি ইচ্ছে করে কৃষ্ণকলি ভাবছে কি আজ,
আমার কুরআন নির্যাতিত, কৃষ্ণকলি পাচ্ছে কি লাজ?
একটু আমি কষ্ট পেলে কষ্টে যে চোখ কাঁদতো বেজায়,
আজকে যখন হৃদয় পোড়ে সে কি আছে তেমনি মজায়?
মিছেই তবে কৃষ্ণকলি এতদিনের জীবন যাপন,
তুমি কি ভাই বন্ধু ছিলে? তুমি কি আর ছিলে আপন?
জানতে তুমি কৃষ্ণকলি কুরআন আমার শ্বাস প্রশ্বাস,
তোমার ঘরেই লাঞ্ছিত হয় আমার প্রাণের সব বিশ্বাস।
মহামারী আসে যখন দুই পাড়াতেই ছড়িয়ে পড়ে,
যে ঝড় আমায় আঘাত করে উড়বে তুমি একই ঝড়ে।
দেয়ালে আজ পিঠ ঠেকেছে আজকে এসো ঘুরে দাড়াই,
মানবতার ফসল বুনি ভালোবেসে দুহাত বাড়াই।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
১৭ অক্টোবর ২০২১।