অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন :
আমার বাল্যবন্ধু আনিস চৌধুরী আমাকে একটা ব্লেজার বানানোর কাপড় উপহার দিয়েছিল। আমি কাপড়টা আরেকজনকে দিয়েছি শুনে আনিস রাগ করে আবারো একটা ব্লেজারের কাপড় দিল। এটা নিয়ে আমি ফাইজলামি করে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিলাম। লিখলাম, ব্লেজারের কাপড় তো উপহার পেলাম কিন্তু বানানোর টাকা কই পাই? ওমনি অনেকেই টাকা দিতে চাইলো। যেহেতু এটা স্রেফ ইয়ার্কি ছিল, তাই টাকা নেবার তো প্রশ্নই ওঠে না।
এই সময়ে বিএমএ গেস্ট হাউজে আমার ঠিকানায় দশ হাজার টাকা এলো। প্রেরক ডা. বিশাখা, উপলক্ষ্য ব্লেজার বানানোর জন্য। আমি একেবারে থ! কতটা দাবি থাকলে আমাকে জিজ্ঞেস করবারও প্রয়োজন বোধ না করে টাকা পাঠিয়ে দিল!
আমার মায়ের কোন মেয়ে ছিল না। ক্লাস সিক্স থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়েছি বালক বিদ্যালয়ে। স্বভাবতই শৈশব-কৈশোরে বালিকাদের সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা ছিল না। ঢাকা মেডিক্যালের সাত বছরের জীবনে আমি প্রচুর বোন পেয়েছিলাম। তাদের মধ্যে বিশাখা ঘোষ ছিল অন্যতম। আমি ছিলাম তার ‘দাদা’।
ক্যাম্পাসের আলোচিত জুটি ছিল বিপুল-বিশাখা। তারা বিয়ে করেছিল, একটি কন্যা সন্তান আছে তাদের। কয়েক বছর আগে ঢাকা ডোমেস্টিক এয়ারপোর্টে হঠাৎ বিশাখার সাথে দেখা। দুজনের পথ ভিন্ন ছিল, বিশাখা চট্টগ্রামে থাকতো। তবু যতক্ষণ এয়ারপোর্টে ছিলাম- কত কথা যে বিশাখার জমে ছিল! সেই আমার ঢাকা মেডিক্যালের ছোট বোন বিশাখা!
আকস্মিক বিশাখার ক্যান্সারের খবর পেলাম। দেশ-বিদেশে চিকিৎসা চললো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চলে যেতেই হলো। বিপুল আগেই গেছে, আজ বিশাখাও চলে গেলো।
কোনকিছুই ভাল্লাগছে না। বারবার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। পরপারে ভালো থেকো বিশাখা, এপারে জীবন তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। যদিও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তুমি বাঁচার মত বেঁচে গেছো।
জীবনের নিষ্ঠুরতম বিচ্ছেদের নাম মৃত্যু। সেই মৃত্যুরও সাধ্য নেই তোমাকে আমাদের কাছ থেকে আলাদা করবার। বিশাখা দি, আমাদের সবার ভালোবাসায় তুমি বেঁচে থাকবে অনন্তকাল!
লেখক : চেয়ারম্যান, এফডিএসআর