ডা. সৈয়দ শওকত আলী :
#টেলিমেডিসিন_প্রতারণা
টেলিমেডিসিন হল দূর থেকে ডিজিটাল উপায়ে (টেলিকমিউনিকেশন) স্বাস্থ্যসেবা প্রদান। ভিডিও কল, ভয়েস কল, চ্যাট, টেক্সট মেসেজ, ইমেইল, ফ্যাক্স ইত্যাদি ব্যবহার করে টেলিমেডিসিন সেবা দেয়া যায়।
এটা বেশ আগে থেকেই সীমিত আকারে প্রচলিত থাকলেও, ২০২০ সাল থেকে করোনা মহামারীর দরুন সরাসরি ডাঃ দেখানো সুকঠিন হয়ে পড়লে ব্যাপক আকারে চালু হয়।
আর এই সুযোগে বিশ্বজুড়ে কিছু প্রতারক চক্র টেলিমেডিসিন কে পুঁজি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়।
প্রতারণাগুলো মূলত ৪ ধরনের:
১. ভুয়া ডাঃ - কল, চ্যাট, মেসেজ, ইমেইলে ডাঃকে সরাসরি দেখা যায় না। এই সুযোগে অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে উল্লেখিত ডাঃএর নাম ডিগ্রি পরিচয় ভাঙিয়ে অন্য ডাঃ বা প্রতারক চিকিৎসা দিয়ে টুপাইস কামায়। এমনকি ভিডিও কলেও অনেক সময় ডাঃ এর পরিচয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় না কারণ অনেক ওয়েবসাইট বা অ্যাপে ডাঃ এর ক্ষুদ্র বা ঝাপসা ছবি থাকে।
২. ভুয়া রোগী- একই ভাবে একজন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির পরিচয়ে রোগী সাজে। কিংবা যার রোগ নেই সে মিথ্যা বানোয়াট লক্ষণাদি বানিয়ে বা দেখিয়ে দামী ওষুধ/টেস্ট বা এইড/কিটস সম্বলিত প্রেসক্রিপশন আদায় করে। যার মূল্য সে সরকার/এমপ্লয়ার/ইনস্যুরেন্স/এনজিও থেকে বাগিয়ে নেয়।
৩. ভুয়া কনসাল্টেশন- প্রতারক অ্যাপ বা ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ আগের কনসাল্টেশন রেকর্ড থেকে পাওয়া রোগীর আইডি ও ডাঃ এর আইডি সেইভ রেখে পরবর্তীতে এগুলো ব্যবহার করে বার বার ভুয়া প্রেসক্রিপশন তৈরি করে এগুলো দেখিয়ে সরকারের সমাজ কল্যাণ বিভাগ ও বিভিন্ন এনজিও থেকে অর্থ সাহায্য ও মূল্যবান সরঞ্জাম হাতিয়ে নেয়।
৪. ভুয়া টেস্ট/চিকিৎসা/স্বাস্থ্য সরঞ্জাম সরবরাহের অফার- অনেক প্রতারক চক্র মানুষকে ফোন দিয়ে ক্যানসার টেস্ট, জেনেটিক টেস্ট সহ মূল্যবান টেস্ট করবে বা স্বাস্থ্য সরঞ্জাম (যেমন- ক্রাচ, হুইল চেয়ার) বিনামূল্যে দান করবে বলে রোগীর নাম ধাম আইডি কার্ড প্রভৃতি নিয়ে যায়। এগুলো ব্যবহার করে তারা ভুয়া প্রেসক্রিপশন বানিয়ে পরে টেস্টের টাকা এবং সরঞ্জাম সরকার ও এনজিও থেকে গোপনে হাতিয়ে নেয়। রোগী আর জিন্দেগিতে টেস্টের রেজাল্ট বা হুইল চেয়ার পায় না। আর যারা রোগীর নাম আইডি ভাঙিয়ে সব হাতিয়ে নিল ওদের পরিচয় ও জানতে পারে না।
প্রতিকারের উপায় :
১. ডাঃ এর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া- কেবল ভিডিও কলে টেলিমেডিসিন চিকিৎসা নেয়া, যাতে লাইভ ডাঃকে দেখা যায়। অ্যাপ/সাইটে দেয়া ছবির সাথে ডাঃ এর মিল আছে কিনা নিশ্চিত হওয়া। বিএমডিসি রেজি. নং দেয়া থাকলে https://www.bmdc.org.bd/ ওয়েবসাইট থেকে যেকোন বাংলাদেশী ডাঃএর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।
২. একইভাবে রোগীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া। তার আইডি কার্ড অ্যাপ/সাইটে সেইভ রাখা ও ভিডিও কলে মিলিয়ে দেখা।
৩. সাইট/অ্যাপের কর্তৃপক্ষের পরিচয়, গতিবিধি ও কার্যাবলী স্বাস্থ্য বিভাগ, সাইবার ক্রাইম বিভাগ কর্তৃক নজরদারী। সরকার কর্তৃক অনুমোদিত টেলিমেডিসিন অ্যাপ/সাইট চিহ্নিতকরণ ও প্রচারণা।
৪. সচেতন হওয়া ও লোভনীয় অফারে ভুলে নিজের নাম ধাম আইডি কার্ড ও অন্যান্য ডকুমেন্ট অপরিচিত কারো হাতে তুলে না দেয়া।
বাংলাদেশেও যে এসব প্রতারণা হয় নি বা হচ্ছে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। ২০২০ সালে করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বাংলাদেশে অনেক টেলিমেডিসিন অ্যাপ ও ওয়েবসাইট সৃষ্টি হয়েছে। হাজার হাজার ডাঃ নিজের ফটো, বিএমডিসি রেজি., এমবিবিএস সার্টিফিকেট দিয়ে এগুলোর মাধ্যমে চিকিৎসা দিতে নাম লিখিয়েছেন।
তবে অনেক অ্যাপ/সাইট থেকে কোনো ডাঃ কখনোই কল পান নি। অনেক অ্যাপ/সাইট হাজার হাজার ডাঃ এর ডকুমেন্ট বাগিয়ে পরে নিশ্চুপ হয়ে গেছে। ওরা জেনুইন ডাঃদের নাম ডিগ্রি ভাঙিয়ে গোপনে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে কিনা কে জানে।
আমি সন্দেহজনক/নিরব সমস্ত অ্যাপ/সাইট থেকে আমার একাউন্ট, ফটো, সার্টিফিকেট, বিএমডিসি রেজি. ডিলিট করে দিয়েছি। কারণ কোন প্রতারণায় জড়িত বলে ডকুমেন্ট পাওয়া গেলে ডাঃদের লাইসেন্স বাতিলের সমূহ সম্ভাবনা।
রোগীদেরও উচিত ডাঃএর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে টেলিমেডিসিন সেবা নেয়া। এবং সর্বোত্তম হল পারতপক্ষে টেলিমেডিসিন সেবা না নিয়ে সশরীরে ডাঃ দেখানো।