............
ছেলেটা ঘুরে দাঁড়ালো, যখন তাঁর পিঠ ঠেকে গেল দেয়ালে,
তাঁকে ঘুরে দাঁড়াতেই হতো
সে তো অন্ধকারের সাথে আপোষ করতে আসেনি।
তাঁর চারপাশে ছিলো ঘুটঘুটে কুয়াশা,
ময়লা, ছেঁড়া, ন্যাকড়ার মতো।
তাঁর হাতে ছিলো একমাত্র বাতিটা,
সেই উজ্জ্বল বাতিটা, যাকে জ্বলতেই হতো,
আলো ছড়াতেই হতো।
কত সহস্র বছর ধরে অপেক্ষমান ছিলো ছেলেটা,
কত সহস্র বছর ধরে স্বপ্ন দেখতো ছেলেটা।
যখন সবাই ছিলো অন্ধকারের জীব, বিতাড়িত বাদুড়ের মতো,
উল্টে থাকাই যার স্বভাব।
ছেলেটা সোজা হয়ে হাঁটতে শিখেছিলো।
অন্ধকারের আবদ্ধতাকে সে মুছে ফেলতে চেয়েছিলো।
ছেলেটা উঠে দাঁড়ালো, যখন তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে চেপে রেখেছিলো মাটিতে,
তাঁকে উঠে দাঁড়াতেই হতো।
সে তো আলস্যের সাথে আপোষ করতে আসেনি।
তাঁর স্বজনেরা ছিলো প্যাঁচার মতো,
দেহ সর্বস্ব অলসতায় ঝিমানো ছিলো তাদের স্বভাব,
তারা কালের স্রোতে ভেসে গিয়েছিলো,
সুর আর সুরার উদ্ভট বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে,
তারা ভেসে যাচ্ছিলো আর মুছে যাচ্ছিলো,
যেভাবে মুছে গেছে আদ আর সামুদ জাতি।
ছেলেটা হারাতে দেয়নি তার পরিচয়,
সে উজ্জ্বল অক্ষরে স্বীকৃতি এনেছিলো।
ছেলেটা তাঁর স্বজাতিকে বিশ্ব নেতৃত্বের মুকুট পরাতে চেয়েছিলো,
যখন তারা ছিলো বর্বর, লুটেরা।
তারা পরজীবির মতো অসহায় হয়ে বেঁচে ছিলো।
অন্যের সম্পদ লুন্ঠনেই ছিলো তাদের বীরত্ব,
রোমান আর পারসিকদের চোখে ছিলো উপহাসের সামগ্রী।
ছেলেটা তাদের জন্য সম্মান এনেছিলো,
তাঁকে তো সম্মান আনতেই হতো।
সৌভাগ্যবান কুরাইশরা ভুলে গিয়েছিলো তাদের পিতৃ পরিচয়,
ভুলে গিয়েছিলো তাদের কাছেই ছিলো তাওহীদের দাবী।
ছেলেটা মনে করিয়ে দিলো, যখন অবাধ্যরা চোখ রাঙিয়ে তাকালো,
তাদের দুচোখে ছিলো ভয় আর হিংস্রতা।
তাঁকে মনে করাইতে হতো,
সে তো রক্ত চক্ষুকে ভয় করতে আসেনি।
সে আঁধার গুহার মাঝে আলোর বাতি পেয়েছিলো,
সে এই আলোটাই চেয়েছিলো তাঁর প্রভুর কাছে।
সেই আলোতেই একদিন আলোকিত হলো পৃথিবী নামের গ্রহটা।
ছেলেটার কাছে সেই আলো এসেছিলো,
যাকে আসতেই হতো।
স্রস্টা তাঁকেই করে দিলেন আলোকবর্তিকা
সেদিনের, আজকের, আগামী পৃথিবীর।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
২০ অক্টোবর ২০২১।