সৈয়দ জামান লিংকন :
ক্রিকেটে বেশ জনপ্রিয় একটি কথা প্রফেশনালিজম, একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে হলে প্রত্যেকটি খেলোয়ারকে সবকিছু প্রফেশনালি ম্যানেজ করতে হবে বলে আমরা প্রায়ই বলে থাকি। বাস্তবে আমাদের দেশের খেলোয়ারদের জন্য এই প্রফেশনালিজম কতটুকু সম্ভব?
আসুন বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে কিছু বেসিক জিনিস পর্যালোচনা করি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান পাপন, ৯ বছর ধরে রাজার মত চালাচ্ছেন সবকিছু। সাংবাদিক সম্মেলনে উনি খোলামেলা কথা বলেন, দলের জয়ে আবেগে কেদে ফেলেন, পরাজয়ে খেলোয়ারদের ধুয়ে ফেলেন, দেশপ্রেম কমিটমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলেন, রেগে গেলে ক্রিকেটারদ্র ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো জনসম্মুখে উম্মোচন করতে দ্বিধাবোধ করেন না আর সুযোগ পেলেই পিএমকে জড়িয়ে বুঝিয়ে দেন উনার ক্ষমতা কতটুকু। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অধিপতি হয়ে উনার মাঝে প্রফেশনালিজম এর প ও নেই। দল নির্বাচন, একাদশ, ব্যাটিং অর্ডার, ফিল্ডিং সব বিষয়ে উনি প্রকাশ্যে কথা বলতে পছন্দ করেন যা আসলে তার দায়িত্বের মধ্যে পরে না।
এরপর আসে আমার সাপোর্টারদের কথা। কিছুদিন আগ পর্যন্ত সাপোর্টারদের দৌরাত্ম্য ছিল ক্রিকেট স্টেডিয়াম, চায়ের দোকান, স্কুল কলেজ, অফিস আদালত পর্যন্ত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আগমনে এখন বসে ঘরে বসেই সাপোর্টারা আবেগ ভালোবাসা বহিঃপ্রকাশ করতে পারছেন। কথায় কথায় আমরা বলি সাপোর্টারদের জন্যই ত খেলা তাই তাদের আবেগ, ভালোবাসাকে মুল্যায়ন করতে হবে। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দখল করে আছে উশৃঙ্খল, উগ্রবাদী, বেয়াদপরা আর ভালো মানুষ গুলো দুরে আছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে। বাংলাদেশ দলের বিরাট একটা অংশ সৌম্য লিটন কে ঘৃনা করে তাদের ধর্মীয় পরিচয়ের কারনে, সাকিবকে ঘৃনা করে তার রাজনৈতিক পরিচয়ে। কোন খেলোয়াড় দু-একটি ম্যাচ খারাপ করলেই তাকে এবং তার পরিবারকে কুৎসিত ভাবে আক্রমণ করে।
খেলোয়ার আর সাপোর্টারদের সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ করার কথা সাংবাদিকদের। সঠিক সমালোচনা, সমর্থনের পরিবর্তে উনারা যা খুশি তাই লিখেন ফ্রী স্টাইলে যারফলে প্রায় সময়েই ক্রিকেটারেরা বিব্রত অবস্থায় পরে যায়।
১৭-১৮ কোটি মানুষের চোখ থাকে বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের প্রতি, পান থেকে চুন খসলেই হুংকার করে উঠেন। কথা একটাই তোদের জন্য জনগনের ট্যাক্সের কোটি কোটি টাকা জন্য ব্যয় করা হচ্ছে, তাই তোদের কাজ একটাই জিততেই হবে। অথচ বাস্তবতা হলো ক্রিকেটাররা জনগনের ট্যাক্সের টাকা নেয় না উল্টো ক্রিকেটারদের কারনে কোটি কোটি টাকা ট্যাক্স হিসেবে সরকারের কোষাগারে জমা পরে।
দল জিতলে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ সবাই বাংলাদেশ দলকে মাথায় তুলে নাচে। আর হারলে ওদের পাশে কেউ থাকে না, অবিভাবক হিসেবে ক্রিকেট বোর্ড খেলোয়াড়দের পাশে থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশে ঘটছে উল্টোটা।
খেলোয়াড়রা মাসের পর মাস পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়, করতে হয় অমানবিক শারিরীক পরিশ্রম। বিনিময়ে খেলোয়াড়রা কতটাকা পারিশ্রমিক পান? দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ক্রিকেটাররা এখনও বিমানের ইকোনমি ক্লাসে চড়তে হয়, বেতন হিসেবে যা পান আসলে খুবই কম। সাকিব, তামিম, মুশি সহ কিছু সিনিয়র ক্রিকেটারদের কথা বাদ দিলে বাকীদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। উদাহরণ হিসেবে জাতীয় দলের ক্রিকেটার মোশাররফ এর কথা চিন্তা করুন, টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না।
দেশের প্রতিনিধিত্ব করা অবশ্যই গৌরবের। শুধু ক্রিকেটাররা না দেশের প্রতিটি নাগরিকও কিন্ত দেশের প্রতিনিধিত্বকারী। কয়েকদিন ধরে দেশের আনাচে যে সাম্প্রদায়িক দাংগা চলছে তাতে বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশের যে মুখে চুনকালি পরেছে তার দায়দায়িত্ব কিন্ত আমার আপনারই। আমি আপনার কাজকর্ম দিয়েই বাংলাদেশের পরিচয়। ঘুস, বাটপারি, চুরি, ডাকাতি, ধান্দাবাজি করব সারাদিন আর রাত হলেই সাধু সেজে ক্রিকেটারদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলব এটা হাস্যকর। নিজের, পরিবার, বন্ধুবান্ধদের দিকে তাকান দেখেন এদের বেশীরভাগেরই দেশপ্রেম নেই, থাকলে ঘুস খেতো না, চুরি করত না, বাটপারি করত না। আপনি যতদিন নিজে দেশপ্রেমিক হতে পারবেন না, ততদিন দয়া করে খেলোয়াড়দের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার রাখেন না।
খেলায় হারজিত থাকবে, এটা মেনে নেয়ার মন মানসিকতা না থাকলে ধরে নিবেন আপনি মানসিক ভাবে অসুস্থ।
বাংলাদেশ দলের প্রতিটি ক্রিকেটারদের জন্য শুভকামনা, হারজিৎ যাই হউক ইউ আর ওলওয়েজ ইন মাই হার্ট।
গুডলাক বয়েজ।