রুহুল সরকার, রাজীবপুর(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি:
দীর্ঘ ২৫ বছর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অফিস সহায়ক কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে চাকুরী করতেন মিজানুর রহমান। সম্প্রতি শারীরিক ও পারিবারিক কারনে চাকরী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের আবেদন জানান।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরে থেকে আবেদন পত্র মঞ্জুর করে অবসর উত্তর ছুটি সহ ভাতা প্রদানের সমস্ত কাগজপত্র তৈরি করে দেওয়া হয়। তবে বিপত্তি বাধে উপজেলা হিসাব রক্ষন অফিসে গেলে। ইএলপিসি(প্রত্যাশিত শেষ বেতনের প্রত্যায়ন পত্র) তৈরি করে দিতে ২০ হাজার টাকা দাবি করে রাজীবপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের জুনিয়র অডিটর রিপন বর্মণ।
বুধবার(২৭ সেপ্টেম্বর) উপজেলা পরিষদ চত্তরে একটি চায়ের দোকানে বিষয়টি নিয়ে অডিটর রিপন ও মিজানুরের সাথে বাগবিতণ্ডা এবং ধাক্ক ধাক্কিও হয়। পরে এ বিষয়ে সমাধান চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে মিজানুর রহমান।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ০১. ০৮.২০২১ ইং তারিখে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের আবেদন করলে ইউএনও অফিস থেকে সকল কাগজপত্র তৈরি করে হিসাব রক্ষন অফিসে পাঠানো হয়।পরে জুনিয়র অডিটর রিপন অফিস খরচের কথা বলে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে। ৫ হাজার টাকা দিলেও বাকী ১৫ হাজার টাকা না দেওয়ায় বেতন নির্ধারণে ভুল আছে এই কথা বলে ইএলপিসি আটকে রাখে।দীর্ঘ দুই মাস পেরিয়ে গেলেও তার ইএলপিসি দেওয়া হচ্ছে না ফলে ভাতা না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে প্রচন্ড অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছে মিজানুর।
ভুক্তভোগী মিজানুর রহমান জানান, ২০ হাজার টাকা চেয়েছিলো আমার কাছে।ধারদেনা করে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। বাকী টাকা না দেওয়ার কারনে আমার ফাইলটি আটকে রেখেছে।অডিটর।পরে আমি জেলা ও বিভাগীয় হিসারক্ষন অফিসে আমার কাগজের কপি দেখিয়েছি উনারা সকলেই কাগজ ঠিক আছে বলে জানিয়েছে। আমি উপজেলার ভিতরে একটি চায়ের দোকানে তাকে কাজটি করে দেওয়ার অনুরোধ করলে সে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার ও গালমন্দ করে।একপর্যায়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে গিয়ে মোবাইল ফোনে ইউএনও স্যারের কাছে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করে।
রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন,বিভিন্ন সময় উপজেলার অনেক পেনশনভোগীরা আসে অডিটরদের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ নিয়ে। অনেক সময় স্যার তাদের ডেকে সতর্ক করে দেয়।তবে তারা ঘুষ ছাড়া কোন কাজ করতে চায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গত কয়েক মাস আগে রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের চরনেওয়াজী গ্রামের শাহ আলম।স্বামীর মৃত্যুর পর পেনশনের টাকা তুলতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে যায় তার স্ত্রী হাসিনা খাতুন। কাগজপত্রে ভুল আছে এগুলো ঠিক করতে হবে জানিয়ে দুই দফায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে পেনশনের কাজ করে দেয় অডিটর রিপন। হাসিনা খাতুনের পিতা আবুল হাকিমের সাথে কথা বলে জানা গেছে এই তথ্য।
আবুল হাকিম আক্ষেপ করে আরও বলেন,আমাদের মত গরীব সরকারী চাকুরীজীবি মানুষদের শেষ জীবনের একমাত্র সহায় পেনশনের টাকা।এই টাকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আমাদের কাগজে ভুল আছে জানিয়ে ফাঁদে ফেলে ঘুষের টাকার জন্য। এই অবৈধ টাকা দিয়ে এরা নিজের স্ত্রী সন্তানের সাথে বিলাশ বহুল জীবনযাপন করে আলিশান গাড়ি বাড়ি করে। সৃষ্টিকর্তা কেন যে এদের দুনিয়ায় শাস্তি দেয় না।
ঘুষ না দেওয়ার কারনে ইএলপিসি আটকে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজীবপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে কর্মরত জুনিয়র অডিটর রিপন বর্মণ বলেন,মিজানুরের কাগজে ভুল আছে তাকে বলা হয়েছে তার দপ্তর থেকে কাজগগুলো ঠিক করে নিয়ে আসতে। তাহলেই ইএলপিসি সহ অবসর গ্রহণের সব কাজ করে দেওয়া হবে। তিনি সঠিক কাগজ না এনে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।
তিনি আরও বলেন, বুধবার বিকেলে উপজেলার একটি চায়ের দোকানে বসে থাকা অবস্থায় পিছন থেকে আমাকে লাথি মেরে ফেলে দেয় মিজানুর আমি এই ঘটনার বিচার চেয়েছি ইউএনও স্যারের কাছে।
আপনার বিরুদ্ধে পেনশনভোগীদের কাছে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা কোন টাকা নেই না কাগজপত্র সঠিক থাকলে দ্রুত কাজ করে দেওয়া হয়।ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি মিথ্যা।পেনশনভোগীরা কেন আপনার নামে মিথ্যা অভিযোগ করবে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এরিয়ে যান।
ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজীবপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সামিউল ইসলাম বলেন,আমি এখানে নতুন এসেছি বিষয়টি জানি না আপনার কাছে শুনলাম আমি বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগীরা যদি লিখিত অভিযোগ করে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রংপুর বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক এর কার্যালয়ে কর্মরত এডমিন মাসুদ রানার সাথে মুঠোফোনে রিপনের ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন,বিষয়টি আমি গুরুত্বসহকারে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সময় জার্নাল/এলআর