ডা. ছাবিকুন নাহার :
#হাড়_নেই_চাপ_দিবেন_না
ছবিটা দেখে, লেখাটা পড়ে বুকটা ধ্বক করে উঠলো! মনে পড়ে গেলো অনেক কিছু।
তখন আমি মেডিকেলে ফার্স্ট ইয়ারে কিংবা সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। দু'পক্ষের গোলাগুলিতে পড়ে বুয়েটের মেধাবী ছাত্রী সাবেকুৃন্নাহার সনি মারা গেলেন। টিভিতে নিউজ হয়েছিলো। আমি তখন বরিশালে থাকি। নিউজে আমার নাম শুনে আমার মা, ভাই, বোন কান্নাকাটি করে ভাসিয়ে দিলেন। আমার শিক্ষক থেকে শুরু করে যারা আমাকে চেনেন কিংবা শুধু নামটা জানেন, তারাও ব্যথিত হয়েছিলেন। অনেকদিন পর্যন্ত এই ঘটনার রেশ রয়ে গিয়েছিলো আমার জীবনে। আমার সাথে দেখা হলেই তারা বলতেন,
'আর বলো না, যা ভয় পেয়েছিলাম! ও মাগো পড়তে যেয়ে এই অবস্থা! পরে ভালো করে শুনে দেখি তুমি না। বুয়েটের ঘটনা। তুমি তো মেডিকেলে পড়ো। আল্লাহ বাচাইসে।'
শুধুমাত্র নামের মিল থাকার কারণে আমাকে নিয়ে পরিবারে, পরিচিত মহলে যে পরিমাণে হাহাকার পড়ে গিয়েছিল তার থেকেই বুঝতে পারি আকিবের পরিবার কিসের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সন্তানকে পেলে পুষে বড় করতে, মেডিকেল, বুয়েট, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে বাবা মাকে কী পরিমাণ পথ যে পাড়ি দিতে হয় তা শুধু বাবা মায়েরাই জানেন। সেই সন্তানের পরিনতি যদি এমন হয় তাহলে বাবা মায়েদের আর থাকলো কী? আমি শুধু আকিবের কথা ভাবছি না, ভাবছি সেইসব ছেলেদের কথা, যারা তাদেরই একজন ফেলোমেটকে পৈশাচিক আনন্দে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো! আকিবের মায়ের কষ্টের চেয়ে তাদের মায়ের কষ্ট কম কী? তারা কি ভাবছেন না, এমন কুলাঙ্গার সন্তান কেমনে জন্ম দিলাম, যে অন্যের মায়ের কান্নার কারণ হয়? ছিঃ! সমাজে মুখ দেখাবো কী করে!
জানি, নতুন পরিবেশে এসে রশি ছাড়া বকনা বাছুরের মতো লাফাতে ইচ্ছা করে। মনের ভেতর জন্ম নেয় নতুন এক সর্বনাশা বোধ। আমিই রাজা। কেউ বারণ করার নেই, শাসন করার নেই। আর এই সুযোগটাই নেয় শকুনী মামারা। পলিটিকাল মোড়কের চকচকে আবরণে অক্টোপাসের মতো গিলে খায় লাখো বাবা মায়ের স্বপ্ন।
সামান্য একটু আধিপত্য, একটু সমীহ, একটু ফেভার পাওয়ার মতো সিলি ব্যপারের জন্য নিজের মতো আরেকজনকে হেনস্তা করার চিন্তাই তো মানসিক দৈনতার পরিচায়ক। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যপার হচ্ছে, এই দৈনতার চোখে চশমা পড়া থাকে, রঙিন চশমা। যে চশমা বিতরণ করেন অন্তসারশূন্য কিছু তথাকথিত গডফাদার। যাদের মগজে কিলবিল করে বিষাক্ত সাপ। যে সাপের দংশনে রঙহীন হয় হাজারো রঙিন স্বপ্ন, স্বপ্ন দেখা চোখ।
একজন মা হিসাবে অভিশাপ দিচ্ছি, এইসব গডফাদাররা নির্বংশ হোক, ঠাটা পড়ুক এদের পৈশাচিক আত্মায়। এরা পশু হোক। শরীর মানুষের অথচ অন্তর পশুর এর চেয়ে ঘৃণ্য জীবন আর কী আছে?