বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

কটকা স্মৃতিস্তম্ভ: শোক ও বিষাদের এক জীবন্ত সৌধ

সোমবার, নভেম্বর ১, ২০২১
কটকা স্মৃতিস্তম্ভ: শোক ও বিষাদের এক জীবন্ত সৌধ

মোঃ তাজুল হোসেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: হঠাৎ আর্তচিৎকার। কলরব থেমে যায়। একে অপরের মুখের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। সবার মুখে আতঙ্কের ছাপ। ভয়ের একটা শীতল স্রোত যেন সবার মেরুদন্ড বেয়ে নামতে থাকে। হঠাৎ ৩-৪ জন তীব্র স্বরে চিৎকার করে ওঠে, 'বাঁচাও-বাঁচাও'।তাদের চিৎকারে পরিবেশ যেন গম্ভীর হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই বুঝতে পারে ১০-১২ জন শিক্ষার্থী ভাটার তীব্র স্রোতের কবলে পড়েছে। সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পাথরের মত দাঁড়িয়ে থাকে। দূর থেকে তাদের দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই। যারা ঘটনাস্থলের কাছে ছিল তাদের মধ্যে কয়েকজন দ্রুত ছুটে যায় সাহায্যের জন্য। পাড়ে যারা দাঁড়িয়ে ছিল, নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেখতে থাকে প্রকৃতির সর্বগ্রাসী নৃশংস রূপ। কয়েকজনকে তারা বাঁচাতে
পারলেও অনেককেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যারা বেঁচে ফিরে এসেছে তারা বালুর উপর বসে হাঁপাচ্ছে আর বমি করছে। অক্সিজেনের অভাবে তাদের শরীর নীল হয়ে গেছে।

যে কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়েছে তাদের মধ্যে রুপা ও কাউসার ততক্ষনে আর নেই। চোখের সামনে প্রিয় সহপাঠীদের এভাবে মরতে দেখে অনেকেই জ্ঞান হারায়। কেউ কেউ বুক চাপড়ে কাঁদতে থাকে। স্রোতে ভেসে যাওয়া মানুষগুলোকে ততক্ষনে আর দেখা যাচ্ছে না। সবাই ধরাধরি করে কাউসার আর রূপাকে লঞ্চে নিয়ে আসে। কারো মুখে কোন কথা নেই, সবাই নির্বাক হয়ে মৃতদেহ দুটিকে ঘিরে বসে থাকে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সবাই। তখনও তাদের অজানা কতজনকে হারিয়েছে তারা। লঞ্চে এসে এক এক করে সবার নাম ধরে ডাকা হচ্ছে। খুঁজে পাওয়া না গেলে সবাই ধরে নিচ্ছে তাদের গ্রাস করেছে ওই হিংস্র সাগর। শেষে দেখা যায় মোট ১১ জনকে তারা হারিয়েছে। যার মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৯ জন ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের দুইজন রয়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের নাম কটকা ট্রাজেডি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় অগ্রযাত্রার পথে নিকষ কালো আঁধার ঘনিয়ে আনে ২০০৪ সালের ১৩ ই মার্চ দিনটি। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। ২০০৪ সালের এই দিনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৯ জন ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জন মেধাবী শিক্ষার্থী সুন্দরবন ট্যুরে গিয়ে কটকা সি বিচে বেড়ানোর সময় ভাটার টানে সমুদ্রে হারিয়ে যায়। স্রোতের সাথে যুদ্ধ করে অনেকে বেচে ফিরে আসলেও ফিরতে পারেনি  ওরা ১১ জন। করালগ্রাসী সাগর নৃশংসের মত কেঁড়ে নেয় এগারটি তরতাজা প্রাণ। তাদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসের ভিতরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে যা কটকা স্মৃতিস্তম্ভ নামে পরিচিত। সেই সাথে ১৩ ই মার্চ দিনটিকে বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেই থেকে প্রতিবছর ১৩ ই মার্চ দিনটি শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

সাল ২০০৪, ১২ ই মার্চ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৭৮ জন ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের ২০ জন অতিথি লঞ্চে করে খুলনা থেকে রওনা দেয় সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে। পরদিন অর্থাৎ ১৩ই মার্চ সকালে তারা সুন্দরবনের নিকটবর্তী বাদামতলীতে পৌঁছায়। সেখান থেকে বেলা একটার দিকে গভীর অরণ্য পেরিয়ে কটকা সমুদ্র সৈকতে লঞ্চ নোঙর করে। সারারাত নির্ঘুম কাটানোর পরও সমুদ্রে গোসলের লোভ সামলাতে না পেরে দল বেঁধে নেমে পড়ে সবাই। নোনা পানির উষ্ণ প্রস্রবণ গায়ে লাগতেই সবার উচ্ছ্বাস যেন বাঁধ ভাঙে। আনন্দ উল্লাস আর কলরবে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশের পরিবেশ। কেউ সমুদ্রের পানিতে দলবেঁধে বল খেলায় ব্যস্ত, তো কেউ গোসলে। অনেকে আবার সাঁতার প্রতিযোগিতা শুরু
করে দেয় বন্ধুদের সাথে। আসন্ন বিপদের লেশমাত্র পূর্বাভাসও তারা পায়নি তখনো। সবার মুখেই আনন্দ ও খুশির ছাপ। কোন নিষেধ নেই, নেই কোন কৈফিয়তের ভয়। শহরের বাঁধাধরা নিয়মের বেড়াজালে বন্দী থাকার পর প্রকৃতির মাঝে তারা যেন তাদের স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছিলো। কিন্তু সেই স্বাধীনতাই যে তাদের সামনে মহাকাল রূপে দেখা দেবে, সেটা তারা বুঝতেই পারেনি।

ওই দিন আমরা যাদের হারিয়েছি

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৯ জন; তৌহিদুল এনাম (অপু), আব্দুল্লা -হেল বাকী, মো. মাহমুদুর রহমান (রাসেল), কাজী মুয়ীদ ওয়ালি (কুশল), মো. আশরাফুজ্জামান (তোহা), আরনাজ রিফাত (রুপা), মাকসুমমুল আজিজ মোস্তানী (নিপুণ), মোহাম্মদ কাউছার আহমেদ খান, মুনাদিল রায়হান বিন মাহবুব (শুভ) এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ২ জন- শামসুল আরেফিন শাকিল ও সামিউল হাসান খান।

সময় জার্নাল/এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল