আদালত প্রতিবেদক। সময় জার্নাল : এক ছাত্রীর করা ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরসহ পাঁচজনকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। একমাত্র আসামি হিসেবে রয়ে গেছেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক হাসান আল মামুন।
বুধবার (৩ নভেম্বর) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী এই আদেশ দেন। আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আলী আকবর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
পিপি আরও বলেন, ‘আজ ভিপি নূরসহ পাঁচজনকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া আগামী ৩০ নভেম্বর এই মামলায় অভিযোগ গঠনের দিন নির্ধরাণ করেছেন আদালত।’
ভিপি নুর ছাড়া অব্যাহতি পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ, মো. সাইফুল ইসলাম ও মো. নাজমুল হুদা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ হিল বাকী।
গতকাল মঙ্গলবার আসামি হাসান আল মামুন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত তা নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আজ মামলার নির্ধারিত দিনে হাসান আল মামুনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। তার উপস্থিতিতে জামিনের শুনানি করা হলে বিচারক নামঞ্জুর করেন।
চলতি বছরের ১৭ জুন আদালতে এই অভিযোগপত্র আসে; যেখানে শুধু হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ থানায় ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগে নুরুল হক নুরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরের দিন ২১ সেপ্টেম্বর পরস্পর যোগসাজশে অপহরণ করে ধর্ষণ, ধর্ষণে সহায়তা এবং হেয়প্রতিপন্ন করে ডিজিটাল মাধ্যমে অপপ্রচার করার অভিযোগ একই ব্যক্তিদের আসামি করে ডিএমপির কোতোয়ালি থানায় আরেকটি মামলা করেন ওই ছাত্রী।
মামলার এজাহারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী উল্লেখ করেন, ‘আসামি হাসান আল মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সপ্তম ব্যাচের ছাত্র। তিনি আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই এবং বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সুবাদে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই মামুনের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি হয় এবং পরে তা প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। এর ধারাবাহিকতায় আসামির সঙ্গে আমার বিভিন্ন সময়ে মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কথোপকথন হয়। সেখানে আসামি আমাকে শারীরিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় আসামি ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি দুপুর ২টার দিকে তার বাসা নবাবগঞ্জ বড় মসজিদ এলাকায় যেতে বলে এবং আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার বাসায় ধর্ষণ করে।’
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ‘ঘটনার পর গত বছরের ৪ জানুয়ারি আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরবর্তীতে ওই বছরের ১২ জানুয়ারি আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মামুনের বন্ধু সোহাগের মাধ্যমে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় আমি ক্যাম্পাস রিপোর্টারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে মামুন ও সোহাগ বাধা দেয়। এর আগে মামুনকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে রাজি হয়, কিন্তু আমি অসুস্থ হওয়ার পর সে নানা টালবাহানা শুরু করে।’
উপায়ান্তর না দেখে গত বছরের ২০ জুন বিষয়টি ভিপি নুরকে মৌখিকভাবে জানাই উল্লেখ করে এজাহারে আরো বলা হয়, ‘নুর বলেন, মামুন আমার সহযোদ্ধা। তাঁর সঙ্গে বসে একটা সুব্যবস্থা করে দেব। এরপর ওই বছরের ২৪ জুন মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে তিনি আমার সঙ্গে নীলক্ষেতে দেখা করতে আসেন। কিন্তু মীমাংসার বিষয়টি এড়িয়ে আমাকে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। আমি যদি বাড়াবাড়ি করি, তাহলে তাঁর ভক্তদের দিয়ে ফেসবুকে আমার নামে উল্টাপাল্টা পোস্ট করাবে এবং আমাকে পতিতা বলে প্রচার করবে বলে হুমকি দেয়। তাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের ১১ লাখ সদস্যের গ্রুপে এ প্রচারণার হুমকি দেওয়া হয়। নুর আরো বলেন, তার একটি লাইভে আমার সব সম্মান চলে যাবে। ইতোমধ্যে মামলার চার নম্বর আসামি সাইফুল ইসলাম আমার নামে কুৎসা রটিয়েছে এবং ৫ ও ৬ নম্বর আসামিকে লাগিয়ে দেয় কুৎসা রটাতে। তারা মেসেঞ্জার চ্যাট গ্রুপে আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করাসহ সম্মিলিতভাবে চক্রান্ত করে।’
এজাহারে বাদী আরো বলেন, ‘ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা পর্যায়ের কয়েকজন বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করতে চাইলেও আসামিরা তাদের ষড়যন্ত্রকারী বলে আখ্যা দেয়। এরপর আমি শারীরিক-মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় এবং আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে বলার কারণে মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে।’
সময় জার্নাল/আরইউ