ডা. ছাবিকুন নাহার :
চিকিৎসা শাস্ত্রে পড়াশোনা করা একজন নারী নিউজ প্রেজেন্টার তারই এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক, ভ্রূণহত্যা তথা গর্ভপাত এবং প্রভাব খাটিয়ে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। ঘটনা কি, ঘটনার ভেতরের ঘটনা কি, উচিত, অনুচিত, মেয়েটির রুচিবোধ ইত্যাদি নিয়ে প্রচুর কথা হচ্ছে। কথা আরো হবে। আমি সেদিকে যাচ্ছি না। কি করলে কি হতো, কী না হতো, কেনো, কি, কিভাবে ইত্যোকার কোনো কিছুই আমার ভাবনার বিষয় নয়, আমি ভাবছি ও না। তবে একটি বিষয় আমাকে প্রচন্ড ভাবে ঝাঁকুনি দিয়েছে। শুধু ঝাঁকুনি দিয়েছে বললে কম বলা হবে। বলতে হবে এক্কেবারে আছড়ে ফেলে দিয়েছে সুনামীতে ভেসে যাওয়া খড়কুটোর মতো।
মেয়েটা নাকি লোকটার পঞ্চান্নতম আইটেম! এই ব্যপারটা নাকি খুবই সিলি ব্যপার। এক্কেবারে এতোই সিলি যে, এসব ধর্তব্য নয়। লোকটি মেয়েটাকে মৃদু ভর্ৎসনাও করেছে, এই বলে যে,
"পাগল। এসবকে এতো সিরিয়াস নেয় কেউ!"
বলে কি লোকটা! এই লোক একটা চ্যানেলের বার্তা প্রধান! কথায় কথায় নীতি বাক্যের খই ফুটায়। তবে কি এইসব টকশো, নীতি বাক্য, নারী অধিকার, নারী মুক্তি ইত্যোকার ইতংবিতং সব চিচিং ফাক!
আমি অডিওটা কয়েকবার শুনেছি। শুধুমাত্র সংখ্যাটা শিওর হওয়ার জন্য। লোকটা খুব তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে মেয়েটাকে বলছে, কি করছো তুমি বলো তো, এসব সিলি ব্যপার নিয়ে! পাগল! জবাবে মেয়েটা শুধু এইটুকু বলেছে, একজন মানুষের জীবন নিয়ে খেলা...
ব্যপারটা এতই সিলি যে, মেয়েটি লোকটির হাফসেঞ্চুরি প্লাস পাঁচ জনের একজন মাত্র! যে লোক পঞ্চান্ন জনকে... তার কাছে নারীরা সংখ্যা আর আইটেম ছাড়া কিছু হবে না এটাই তো স্বাভাবিক। অসুস্থ বোধ করছি।
জানি একজন দুইজন তিনজন এভাবে পঞ্চাশ, পঞ্চান্ন... সংখ্যা বাড়তে থাকে, বাড়তেই থাকে। সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে বাড়ে ভ্রূণহত্যা, গনোরিয়া সিফিলিস এইডস। দুএকজন আবেগের বশে সংবাদ সম্মেলন করে। একটু নড়েচড়ে বসে সমাজ। ভালো মানুষী সমাজের নিত্যদিনের থোর বড়িখাড়া রেসিপিতে একটু থাই চায়নিজ আমেজ পাওয়া যায়। জনাব পঞ্চান্ন ছাপ্পান্নোর ধান্দা নিয়ে ভালো মানুষের মতো দিব্বি বেঁচে বর্তে থাকে।
টকশোতে ঝড় তোলে,
" আমাদের নারীদের অবশ্যই সম্মান করতে হবে। নারী অধিকার সমুন্নত রাখতে হবে। নারী মানে শক্তি, নারী মানে মা, নারী মানে চুক চুক...এইরে ছাপ্পান্ন তো এখনো জোগাড় হলো না! "
নারী, তোমাদের বলছি লোভী হইও না, পরিশ্রমী হও। যোগ্য হও। সংযত হও। সৎ হও। রুচিশীল হও। আর যদি ডেস্পারেট হতেই চাও, হও। উপভোগ যদি করতেই হয় উপভোগ করো। সমান দায় নাও। মুড়িমুড়কির মতো ভ্রুণহত্যা করো না। নিরাপদ কন্ট্রাসেপটিভ এর অভাব তো নাই। খবরদার আজাইরা লোক হাসাইতে আসবে না। আমাকে ব্যবহার করছে, ইউজ করছে এসব বলতে লজ্জা লাগে না! ছিঃ! আর হ্যাঁ এটাও মনে রেখো, জীবহত্যা, স্বেচ্ছাচারিতা মহাপাপ। পাপ কিন্তু বাপকেও ছাড়ে না।