শিরোনাম
ইসমাম হোসেন :
২০২০ সালটি আমাদের বেশিরভাগের পক্ষে বেশ কঠিন ছিল, করোন ভাইরাস মহামারীটি কেবল আমাদের স্বাস্থ্য এবং তাত্পর্যকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে নি, আমাদের জীবনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে । এ বিশ শুধু আমাদের জীবনযাত্রাকে দুর্বল করেনি, নষ্ট করেছে মানসিক ভারসাম্যকেও।
বেকারত্বের হার বাড়িয়ে দিয়েছে মহামারী এ করোনা । বেকারত্ব শুধু আমাদের দেশে না গোটা বিশ্বে এ ছড়িয়ে পড়েছে, যা দিন দিন আমাদের কাছে ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। করোনা মহামারীতে আমাদের দেশের সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু সরকারি জননেতারা ভুলে গেছেন এই মহামারীর কথা, চুরি করেছেন এই অসহায়ত্ব মানুষের চাল। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিজের স্বার্থের জন্য দাম বাড়িয়েছেন পিঁয়াজের, যা দাম ছিল আকাশচুম্বী, পিয়াজের এ দাম যা বাংলার মানুষ কখনই ভাবেনি । শুধু কি পিয়াজ একে একে আলু, বেগুন, পটল, লাউ এসব শাক-সবজির দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ছিল এবং আছে । আমাদের এই সরকার এই মহামারিতে বাজার ব্যবস্থা ও নিয়ন্ত্রণ যেখানে সঠিক হওয়ার কথা ছিল, তা আমাদের জন্য নিয়ে আসছে দুঃস্বপ্নের মত।
সরকার এই বিষয়গুলো যথাযথ ব্যবস্থা এবং সঠিক বাজার নিয়ন্ত্রণ শক্তভাবে দমন করুক, যা সাধারণ জনগণের জন্য সুখবর বয়ে আনে ২০২১ সাল।
জীবন-মরণের লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে শুধুমাত্র বেঁচে থাকাটাই যে জরুরী হয়ে উঠবে, সেটাই যেন প্রায় গোটা বছর ধরে উপলদ্ধি করল গোটা বিশ্বের প্রতিটি মানুষ ৷ কেউ হারিয়েছে তার বাবা, কেউ হারিয়েছে তার মাকে, হারিয়েছে তার ভাইকে ও কেউ হারিয়েছে তার প্রিয় মানুষটিকে । জীবনের অনেক কিছু হারিয়েছি অনেক মানুষ । প্রাপ্তিটা সামান্য ৷
চিন থেকে আগত করোনা ভাইরাসের জেরে গোটা বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর মিছিল ৷ সীমানার পর সীমানা স্তব্দ, আকাশে উড়ান থামাল উড়োজাহাজ, থেমে গেল রেল গাড়ি, নিষিদ্ধ হল রাস্তায় বের হওয়া ৷ খাঁ খাঁ রাজপথ থেকে পাড়ার গলি ৷ দৈনদ্দিন জীবনের ন্যুনতম জিনিস পাওয়ার জন্য মানুষ হন্যে হয়ে উঠল ৷ ঘরে বসেই চলল অফিস, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ৷ বিনোদন ভুলে মানুষ ঘরেই খুঁজেই পেল স্বস্তির জায়গা ৷ হাতে উঠল স্যানিটাইজারের বোতল আর মুখে মাস্ক !
লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন ! এই তিন শব্দে অভ্যস্ত হয়ে গেল বিশ্বের মানুষ ৷ ফোনে ফোনেই চলল দূর-দূরান্তের সম্পর্ক ৷ কেউ চাকরি হারালো ৷ কেউ কেউ প্রিয়জন ৷ এমন কী, শেষ চোখের দেখা টুকুও দেখা থেকে বিরত থাকল অনেকে ৷ হাসপাতালের কাচের ঘরে যখন করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রিয় মানুষটি বিদায় নিচ্ছে, তখন আমরা অসহায় ! পিপিই কিট পরে দূর থেকে চোখের জলেই ফেয়ারওয়েল ! হাসপাতালে উপচে পরা ভিড় ৷ কেউ চিকিৎসা পাচ্ছেন, কেউ কেউ বিনা চিকিৎসাতেই পৃথিবীকে বিদায় জানাচ্ছেন ৷
ভাচুর্য়াল বিশ্বের ওপর যে গোটা বছর নির্ভর করে রয়েছে মানুষ ৷ আর তাই তো সোশ্যাল মিডিয়াতেই সুখ-দুঃখকে ভাগ করে নিয়েছেন ৷ ডালগোনা কফি থেকে ম্যাগির নতুন শেখা রান্না থেকে প্রথমবার ঘর মোছার ভিডিও সবই পর পর আপলোড হয়েছে ইউটিউব, ফেসবুক, ট্যুইটার, ইনস্টাগ্রামে ৷ হোয়াটসঅ্যাপেই এসেছে জন্মদিন থেকে বিয়ের শুভেচ্ছা মেসেজ ৷ পাশের পাড়ার বন্ধুর সঙ্গে ভিডিও কলে গ্রুপ আড্ডা ৷ জুম কলেই সকাল বিকেল অফিসে ভারী ভারী মিটিং ও স্কুল কলেজের ক্লাস ৷ এ কেমন পৃথিবী দেখালো ২০২০ !
৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ৷ শেষ হতে চলেছে বিশের এই বিষ বছর ৷ করোনা থেকে মুক্ত হতে ভ্যাকসিনের অপেক্ষায় মানুষ , তারই মাঝে রূপ বদলে নতুন করোনা হাজির ৷ আতঙ্কের বারুদে ফের যেন আগুন দেখলো আজারবাইজানের মুসলিম ভাইয়েরা ! অনিশ্চয়তা নিয়েই নতুন বছরে গোটা বিশ্ব পা রাখতে চলেছে ৷ প্রার্থনা নতুন বছর হোক সুস্থ সূর্যোদয়ের বছর ৷ সব বেড়াজাল ভেঙে যেন ফের হেসে উঠুক বিশ্ব ! না ভাচুর্য়াল নয়, বরং ফের প্রিয়জনের হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ দিয়ে সুখের দিকে এগিয়ে যাওয়ার বছর হোক ২০২১ ! হোক সু-খবরের সূর্যোদয় ৷
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।