বকুল কথা
ছোট্ট চারাগাছটি,
বড় আদোর আর যত্নে লাগানো বকুল ফুলের গাছটি।
মেলা থেকে চাচা এনে দিয়োছিলো সেই কতকাল আগে,
ভাই বোনে মিলে হুটোপুটি হলো পড়বে সে কার ভাগে।
সকাল বিকাল পানি ঢালো তাতে, সার মাটি দাও নিত্য,
ব্যাস্ত সকলে সেই কাজ নিয়ে খোকাখুকু, বুড়ো, ভৃত্য,
চারপাশে দাও কঞ্চির বেড়া পাছে খায় কারও ছাগলে,
বাড়ির সবাই ভারি সতর্ক রাখলো যত্নে আগলে।
বাড়লো ছোট্ট গাছটি,
দিনে দিনে বেশ ডালপালা হলো বকুল ফুলের গাছটি।
মাটি, হাওয়া, পানি, সূর্যের সাথে জোরদার হলো সন্ধি,
ছোটখাটো ঝড়ে পারেনা ভাঙতে শিকড় মাটিতে বন্দী,
মাথা তুলে যেন চারিদিক দেখে আরও বাড়বার নেশাতে,
ফুলে ফুলে বেশ সুরভিত হবে আমরাও থাকি আশাতে।
বড় হলো ছোট গাছটি,
ফুলে ফুলে যেন ঝলমলে কনে বকুল ফুলের গাছটি।
ডালপালা জুড়ে ফুলের আসর মৌমাছিদের গুঞ্জন,
সৌরভে তার প্রজাপতি মেয়ে দুচোখে লাগায় অঞ্জন,
ভোরের হাওয়ায় রাশি রাশি ফুল ঝরে পড়ে রোজ উঠোনে,
মালা গাঁথি, নাকি সাজি ভরে রাখি ভাবনা খুকুর ও মনে।
বুড়ো হলো ছোট গাছটি,
আগের মতোন ফুল ধরে নাকো বকুল ফুলের গাছটি।
ভোর হতে রোজ আসে নাতো আর কচিকাঁচা, খুকি ঝাঁপিয়ে,
ফুল ফোটেনা যে বয়সের ভারে গাছটিও গেছে হাঁপিয়ে,
একটু ঝড়েই নড়বড় করে, ডালগুলো ভেঙে পড়ছে,
পাতা ঝরে পড়ে ন্যাড়া মাথা হয়ে মৃত্যু প্রহর গুনছে।
ভেঙে পড়ে ছোট গাছটি,
মেলা থেকে চাচা এনে দিয়েছিল বকুল ফুলের গাছটি।
কতো মৌসুম পার হলো তার কত ফুল হলো আয়েশে,
সবুজে সবুজে কতো সজীবতা আহ্লাদে ভরা বয়সে,
হঠাৎ কখন বয়স বাড়লো, হঠাৎই এলো অবসান,
বোশেখ মাসের ঘূর্ণি বাতাসে মহীরুহ হলো খান খান।
বড় অসহায় গাছটি,
পথের ধারে ভেঙে পড়ে থাকে বকুল ফুলের গাছটি।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
৭ নভেম্বর ২০২১।