অন্ধকারে বেড়ে ওঠা কচি পুঁইশাকের ডগার মতো
ক্ষীণ, লিকলিকে আর মৃত্যুর পান্ডুরতায় ধূসর,
যেন রান্নাঘরের পাশে ঝুল, কালি,
বিশ্রী, ধোঁয়াটে এক দমবন্ধ করা হাওয়া।
ও হাওয়ায় পুঁইডগা বাঁচেনা,
ও হাওয়া বড় বেশি অস্বাস্থ্যকর, অনাত্মীয়, নিদারুন।
অথচ খামারের পরিচর্যিত পালং এর মতো,
হতে পারতো তার শৈশব- কৈশোর, বেড়ে ওঠা।
বাবার শখের গাড়ি কিংবা মায়ের হীরার নেকলেস
অথবা দেয়ালে ঝোলানো
সুদৃশ্য বাঘছালটা হতে পারতো সে।
প্রতিনিয়ত যাকে পরম যত্নে ঝাড়া মোছা হয়,
ঝকঝকে তকতকে করা হয় বাবার গাড়ি
আর মায়ের গয়নার মতো।
এসব কিছুই আর হয়না তার।
একটা ভেঙে যাওয়া সংসারে বিবর্ণ আগাছার মতো,
যে ঝাঁটার আঁচড়ে উপড়োয় না,
তবু যেন রয়ে যায় সিঁড়ির খাঁজের ভাঁজে
অবাধ্য দু'একটা ঘাসের মতো।
অবাধ্য কচি ঘাস বেড়ে ওঠে
সিঁড়ির অন্ধকারে, স্যাঁতসেঁতে নর্দমার পাশে।
মা-বাবার মানসিক দ্বন্দ্ব,
ছাড় দিতে না পারার ক্ষুদ্রতা,
সন্দেহ, সংশয়, আরাম প্রিয়তা আর
তীব্র অস্বস্তির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে,
বেড়ে ওঠে মানবপিন্ডটুকু ভয়ানক অমানবিকতায়,
ভেঙে যাওয়া সংসারে ছিঁড়ে যাওয়া পাপোশের মতো।
অথচ একটু মমতা তাকে চাঁদ করে দিতো,
মা-বাবার আকাশে পূর্নিমা চাঁদ,
একটু মমতা তাকে নদী করে দিতো,
পাহাড়ের খরস্রোতা উচ্ছ্বল নদী।
এসব কিছুই আর হয়না তার।
ভেঙে যাওয়া সংসারে,
ফেলে দেওয়া একগোছা ছবির মতো,
একপাশে পড়ে থাকে,
অতীত জাগিয়ে তোলা বেদনার মতো,
একপাশে পড়ে থাকে,
তালাভাঙা বাক্সের দুমড়ানো চাবির মতো,
নিঃসঙ্গ, অসহায়, স্বজনের আবর্তে,
স্বজন হারানো শিশু!