নিজস্ব প্রতিবেদক। দ্বিতীয়ধাপের ৮৩৫ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, চলবে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত। সুষ্ঠুভাবে এসব নির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বুধবার প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে গেছে। ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে মাঠে নিয়োজিত আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ভোট নিয়ে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে নির্বাচনী সব এলাকায়।
ইসি জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮ ইউপি ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হলেও আজ ভোটগ্রহণ হবে ৮৩৫ ইউপিতে। কেননা ৫ ইউপিতে সব পদে জনপ্রতিনিধিরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া ৭ ইউপি ভোট স্থগিত করেছে ইসি এবং ১ ইউপির ভোট বাতিল করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে মোট ভোট কেন্দ্র হচ্ছে ৮৪৯২টি। মোট ভোটার হচ্ছে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ২২৬ জন। এরমধ্যে এ ধাপে ১৬ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। ৮৩৫ ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন ৩৩১০ জন: সংরক্ষিত নারী প্রার্থী ৯১৬১ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন ২৮৭৪৭ জন। এ নির্বাচনের মোট ৪১২১৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২০টি ইউনিয়ন পরিষদে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এবং বাকিগুলোতে প্রচলিত ব্যালট পেপারে ভোট হবে। নির্বাচন উপলক্ষে বুধবার সব ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে র্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনী এলাকায় টহল শুরু করেছেন। তারা থাকবেন ভোটের পরের দিন পর্যন্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে রয়েছেন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
এদিকে দ্বিতীয়ধাপের ভোটে ১৮ জেলার ২৮ উপজেলায় ৮১ জন চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হওয়ায় তারা সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। এছাড়াও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭৬ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২০৩ জন নির্বাচিত হয়েছেন। বিনাভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের মধ্যে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় ৫ জন, ভোলার দৌলতখানে ১ জন, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে ১ জন, নারায়ণগঞ্জ সদরে ২ জন, রূপগঞ্জে ৩ জন, শেরপুর সদরে ৩ জন, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ৩ জন, জামালপুর সদরে ৫ জন, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে ৩ জন, কুমিল্লার লাকসামে ৫ জন, তিতাসে ১ জন, মেঘনায় ১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হয়েছেন। একইভাবে চাঁদপুর সদরে ২ জন, ফেনীর ফুলগাজীতে ৩ জন, লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ১ জন, মাদারীপুরের কালকিনিতে ১ জন, শরীয়তপুর সদরে ৩ জন, খুলনা সদরে ১ জন, মাগুরা সদরে ৩ জন, যশোরের চৌগাছায় ২ জন, বাগেরহাট সদরে ৩ জন, মোল্লাহাটে ১ জন, জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ১ জন, সিরাজগঞ্জ সদরে ৩ জন, রায়গঞ্জে ৩ জন, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে ৫ জন, মিরসরাইয়ে ১৩ জন এবং ফটিকছড়ি উপজেলায় ৩ জন বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছেন।
এছাড়া উদ্বিগ্ন নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১০ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করেছে। বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, মাদারীপুরসহ ১০টি জেলায় নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন থাকবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোয় অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলায়-জেলায় অস্ত্রের ঝনঝনানিও বেড়ে চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটছে। নির্বাচনে অন্য দলের কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও ভোটের মাঠে কার্যত ক্ষমতাসীনরাই। ভোটে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগই। ক্ষমতাসীন দলের নিজেদের মধ্যকার সংঘাত-সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে বেকায়দায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।
উল্লেখ্য, সারাদেশে সাড়ে ৪ হাজার ইউপি রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২১ জুন ২০৪ ইউপি ও ২০ সেপ্টেম্বর ১৬০ ইউপির ভোট হয়। দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৫ ইউপির ভোট আজ। তৃতীয় ধাপে ১০০৩ ইউপির ভোট হবে ২৮ নভেম্বর। চতুর্থ ধাপের ৮৪০ ইউপিতে ভোট ২৩ ডিসেম্বর।
সময় জার্নাল/আরইউ